নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মহাজোটের নেতাকর্মীদের নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
মঙ্গলবার ( ২০ নভেম্বর ) বিকেল ৪টায় চাষাঢ়ায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের তৃতীয় তলার কনভেশন সেন্টারে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টি সহ মহাজোটের নেতাকর্মীদের সাথে মত বিনিময় সভায় তিনি এ আহবান রাখেন।
এর আগে সকালে ঢাকায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ এর কাছে সাক্ষাতকার প্রদান করেন। এ সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমপি সেলিম ওসমানের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে আগামী নির্বাচনে তাঁর বিজয় কামনা করেন।
মহাজোটের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় কালে সেলিম ওসমান বলেন, আগামী নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনারা নিজ নিজ এলাকায় সজাগ দৃষ্টি রাখবেন যাতে করে কোন সুযোগ সন্ধানী অথবা নির্বাচন বানচালের চেষ্টায় থাকা ষড়যন্ত্রকারীরা কোন প্রকারের নাশকতার ঘটনা না ঘটাতে পারে। পাশাপাশি এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে ওই মহলটি যাতে কোন গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত না করতে পারে।
তিনি কর্মীদের প্রতি আহবান রেখে বলেন, ভোট কেন্দ্রে যাতে সাধারণ ভোটাররা অবাধে নিজের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে রকম শান্তিপূর্ন পরিবেশ বজায় রাখতে এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আপনার ভোট গ্রহণের দিন অতন্দ্র প্রহরীরর মত ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন। ইনশাল্লাহ বিজয় আমাদের হবেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছর বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে গোটা বিশ্ব অবাক। আগামী নির্বাচনে আবারো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে পারলে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ ২৫ বছর এগিয়ে যাবে।দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি স্বয়ংসম্পন্ন দেশ গড়তে শেখ হাসিনার বিকল্প অন্য কেউ হতে পারে। আর যারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের পায়তারা করছে তাদের হাতে ক্ষমতা গেলে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ ১৫ বছর পিছিয়ে যাবে। আপনাদের সবাইকে এই কথা গুলো সাধারণ মানুষদের বুঝাতে হবে।
এ সময় সেলিম ওসমান বিগত সময়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায় সম্পন্ন হওয়া উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, ইতোমধ্যে নিজের অর্থায়নে ৭টি ইউনিয়ন এলাকায় ৭টি স্কুল ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে তিনটি স্কুলে শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ন বিনা খরচে লেখাপড়া করছেন। শীতলক্ষ্যা সেতু-৩ (নাসিম ওসমান সেতু) কাজ চলমান রয়েছে। হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ও ৫নংঘাট- ময়মনসিংহ পট্টি দিয়ে পৃথক দুটি ফেরী সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই উক্ত ঘাট গুলোতে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন করে আরো ৫টি ফেরী বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সরকার ৫নংঘাট দিয়ে আরো একটি সেতু নির্মাণের জন্য একনেকে অনুমোদন দিয়েছেন। খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করনের কাজ শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটিকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করা হবে। বন্দরে কদমরসুল কলেজ ও হাজী ইব্রাহিম আলম চাঁন স্কুল ও কলেজকে সরকারীকরন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ কলেজের আধুনিক ১০তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকে। সরকারীভাবে আরো একটি বহুতল ভবন এই কলেজে নির্মাণ করা হবে। শহরে শিল্পকলা একাডেমী কমপ্লেক্স ও আধুনিক পাবলিক লাইব্রেরী ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায় রয়েছে। বন্দর খেয়াঘাট এলাকায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে, শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বন্দর ও নবীগঞ্জ খেয়াঘাট দুটিকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে টোল ফ্রি করে দিয়ে সেখানে যাত্রীদের পারাপারে উন্নত সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হিন্দুদের মহাতীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে নতুন ৫টি ঘাটের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। চাষাঢ়ায় শ্রম অধিদপ্তরের নতুন কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। তার পাশেই শ্রমিকদের জন্য একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মিত হবে। ঢাকা-কমলাপুর রেলপথকে ডাবল লেনে উন্নীত করনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। খানপুরে একটি নাসিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে বন্দরে নারী শ্রমিকদের জন্য মহিলা ডরমেটরি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সরকারী ভাবে বন্দর ও সদর উপজেলার প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন সহ যাতায়াতে সুব্যবস্থায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে। বন্দরের মদনগঞ্জের শান্তিরচরে দেড় হাজার একর জমির নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল নীটপল্লীর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। যেটি বাস্তবায়িত হলে কমবেশি ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বন্দর ও নারায়ণগঞ্জে তখন বেকারত্বের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আপনার ঘরে বসে থেকে সময় নষ্ট না করে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে এলাকার এই উন্নয়ন গুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে এবং উন্নয়নের এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে আবারো শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করার অনুরোধ করবেন।
সভায় আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির মূল সংগঠনের পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগ, যুবসংহতি, শ্রমিক পার্টি, সেচ্ছাসেবক পার্টির প্রায় ৫ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।