নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বাকি আর কয়েকদিন। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের পূজা মণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা । বেশিরভাগ জায়গায় প্রতিমা গড়া শেষ, মণ্ডপে মণ্ডপে রং-তুলির আঁচড়ে প্রতিমা সাজসজ্জার কাজ চলছে।
নারায়ণগঞ্জে এবছর ২১৬টি মণ্ডপে পালিত হবে দুর্গা উৎসব। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষে থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজাকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে ও পুলিশ প্রশাসন ।
আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১৩ অক্টোবর দশমীতে বিসর্জন ও শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গাৎসব।
এদিকে বছর ঘুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এই উৎসবকে ঘিরে মণ্ডপে মণ্ডপে বেড়েছে প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততা।
সরজমিনে রবিবার ( ৬ অক্টোবর) শহরের দেওভোগ আখড়া, পালপাড়া, উকিলপাড়া, সাহাপাড়া, আমলাপাড়া, নয়ামাটি, নিতাইগঞ্জের বলদেব জিউর আখড়া মন্দির, সাহাপাড়া মন্ডপে, মীনাবাজার গোপীনাথ জিউর আখড়া মন্দির, বঙ্গবিহারী, গলাচিপা মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে জোরেসোরে। শেষ মুহুর্তে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। প্রতিমার গায়ে রং তুলির আচড় এবং অলংকরণ করে ফুটিয়ে তুলছেন দেবীর সৌন্দর্য। যেন জীবন্ত রূপে ফুটে উঠছে প্রতিমাগুলো। অনেকেই দেবী দুর্গার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।
এছাড়া বাঁশ, বেত, তালপাতা, খড়, কাগজসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর কাজ চলছে।
মৃৎশিল্প তারক নাথ বলেন, শেষ মুহূর্তে প্রতিমাগুলো নতুন করে রং ও তুলির আঁচড় দিয়ে সাজিয়ে তুলছি। আগে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় পুরো প্রতিমা তৈরি করা থেকে সাজানো পর্যন্ত খরচ হত।এখন মালামালের দাম বৃদ্ধি ,শিল্পিদের পারিশ্রমিক বাড়ার কারণে খরচ প্রায় দিগুণ। তবুও এ কাজ আমাদের করতেই হবে কারণ এটা আমাদের ধর্মীয় রীতিনীতি। শেষ মুহূর্তে দেবীকে পড়ানো হবে পোশাক-পরিচ্ছেদসহ অন্যান্য আল্পনা।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উৎসবের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপুন বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের ২১৬টি;মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষ্যে জোরেসোরে কাজ চলছে। প্রতিটি পূজা মন্ডপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে আমাদের পূজার কার্যক্রম শুরু হবে। ১৩ অক্টোবর বিজয় দশমীর মধ্য দিয়ে ৫ দিন ব্যাপী ধর্মীয় উৎসব শেষ হবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হলেও নারানগঞ্জে দখলদারিত্বের কোনো হুমকি ছিল না। দুর্গাপূজা শারদীয় উৎসব উপলক্ষেবিএনপি, হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন সহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে মতবিনিময় সভা হয়েছে। তারা সবাই আমাদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া পুলিশ, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হবে এবং আমরা আশা করি উৎসবের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, সনাতন ধর্মের দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সব পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনী রয়েছে। পাশাপাশি আনসার, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা থাকবে । এছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি করবে। পুজোকে ঘিরে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনা নেই।