নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: অবশেষে নারায়ণগঞ্জ স্কুল ছাত্রী দিশা মনি কথিত ধর্ষন ও হত্যা মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তাকে এস আই শামীম আল মামুনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া ওই মামলাটি সরাসারি ঢাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টাস থেকে তত্ত্বাবধায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ মো: জায়েদুল আলম।
বুধবার বিকালে মুঠোফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন তিনি।
এ বিষয়ে তিনি আরো জানান, স্কুল ছাত্রী দিশা মনির ঘটনায় গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট সহায়ক কমিটি দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। একটি হলো আসামিরা হত্যা ও ধর্ষন না করেও কেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিল ও কিভাবে তদন্তকারি কর্মকর্তা তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিল।
পুলিশ সুপার আসামির স্বজনদের করা তদন্তকারি কর্মকর্তা বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ প্রশ্নে বলেন, আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি স্বজনরা অভিযোগ করেছে তদন্ত কর্মকর্তা আসামির স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এবং জোরপূর্বক ভয় দেখিয়ে জবানবন্দি নিতে বাধ্য করেছে। যদি এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আসামির স্বজনরা পুলিশের কাছে লিখিত কোন অভিযোগ করেনি। কিন্তু তারপরেও তদন্তের স্বার্থে আমরা প্রত্যেকটি অভিযোগ নিখুঁতভাবে খতিয়ে দেখব। এখানে কোন অপরাধীদের ছাড় দেয়া হবে না। সবাই নিশ্চিত থাকুন।
প্রসঙ্গত অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার স্কুলছাত্রীর লাশ নদীতে ফেলে দেয়ার ৪৯ দিন পর জীবিত ফেরত আসার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ঘটনা সামাল দিতে জেলা পুলিশের তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
এদিকে জিসা মনি অপহরণ মামলা পুনঃতদন্তের জন্য সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আব্দুল হাইকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করেছেন ৫ আইনজীবী। অন্যদিকে সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামানের আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় স্কুলছাত্রী জিসা মনি জবানবন্দি দিয়েছে। জিসা মনি আদালতে তার নিখোঁজ থাকার বিষয়, প্রেম, বিয়ে এবং ফিরে আসার পুরো ঘটনা বর্ণনা করে। পরে বয়স বিবেচনায় আদালত তাকে পরিবারের জিম্মায় দেয়ার আদেশ দেন।
এ ছাড়া পুলিশ জিসা মনির স্বামী ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠায়। মঙ্গলবার আদালত তার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য্য করেন আগামীকাল বৃহস্পতিবার।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) স্কুলছাত্রী জিসা মনির মেডিকেল টেস্ট করা হয়েছে। এরপর বিকালে আদালতে ২২ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
হাইকোর্টে ৫ আইনজীবীর রিভিশন মামলা: এদিকে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার স্কুলছাত্রীর লাশ নদীতে ফেলে দেয়ার ৪৯ দিন পর জীবিত ফেরত আসার ঘটনায় হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করেছেন ৫ আইনজীবী। আবেদনে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় করা মামলা এবং মামলা পরবর্তী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা, বৈধতা এবং যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ ছাড়া ওই মামলার নথি তলবেরও আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির ও আসাদ উদ্দিন।
‘ধর্ষণের পর নদীতে লাশ ফেলে দেয়া স্কুলছাত্রীর ৪৯ দিন পর জীবিত প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সংযুক্ত করে মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঁচজন আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির রিভিশনটি দায়ের করেন। পাঁচজন আইনজীবী হলেন- মো. আসাদ উদ্দিন, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আল রেজা আমির ও মো. মিসবাহ উদ্দিন।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার গার্মেন্ট শ্রমিক জাহাঙ্গীরের ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জিসা মনি গত ৪ঠা জুলাই নিখোঁজ হয়। এক মাস পর ৬ই আগস্ট জিসা মনির বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। এই মামলায় ৭ই আগস্ট পুলিশ গ্রেপ্তার করে জিসা মনির কথিত প্রেমিক আব্দুল্লাহ, নৌকার মাঝি খলিল ও অটোচালক রকিবকে। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই শামীম আল মামুন তিনজনকে রিমান্ডে নেয়। এবং আসামিদের স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় রিমান্ডে মারবে না এই শর্তে। কিন্তু টাকা নিয়ে এসআই শামীম অমানুষিক নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে জিসা মনিকে ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করে। কিন্তু ২৩শে আগস্ট ৫০ দিন পর সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জিসা মনি জীবিত ফিরে আসে। এতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় সর্বত্র। তোলপাড় চলছে প্রশাসনে।
এছাড়া পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান করে জেলা পুলিশ সুপার জাহেদুল আলম তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
গ্রেপ্তারকৃত তিনজনের স্বজনদের অভিযোগ রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ পিটিয়ে ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাদের আদালতে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। তারা আরো বলেন, তিন আসামির স্বজনদের কাছ থেকে পুলিশ দফায় দফায় ৪৭ হাজার টাকা নেয় এই শর্তে।
গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তদন্ত স্বার্থে তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।