নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
অশ্রুসিক্ত নয়নে আবেগঘন পরিবেশের মধ্যে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ লাইনসে জেলা পুলিশ কর্তৃক আয়োজিত বিদায়ী সংবর্ধনার মধ্যে দিয়ে তাকে বিদায় জানানো হয়।
বিদায়ী বক্তব্যে পুলিশ সুপার হারুন বলেন, নারায়ণগঞ্জের সকল পুলিশ প্রতিটি কর্মকান্ডে আমাকে সহযোগীতা করেছে এবং সকল সাংবাদিকরা আমার ভালো কাজে উৎসাহ দিয়েছে। আমাদের নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জের ১,২,৩,৪,৫ আসনের এমপিরাও আমাকে সাহায্যে করেছেন। এই এলাকার মেয়র মহাদয় তিনিও আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগীতা করেছেন। এখানে আমি সব সময় মন থেকেই কাজ করেছি। আমি চেষ্টা করেছি ঐ মানুষগুলোর দুঃখ কষ্ট দূর করতে। জেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কাজ করেছি। একটা পরিবারে পাঁচটা সদস্য থাকলে একজন ভুল করতেই পারে ঠিক তেমনেই আমাদের মধ্যে পাঁচজন পুলিশ সদস্য থাকলে একজন ভুল করতেই পারে। কিন্তু তারপরেও যদি কেউ ভুল করে থাকে তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি বলেন, সর্বশেষ আমরা একটি ঘটনায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে এবং মামলার অপরাধীকে ধরতে গিয়ে সমালোচিত হয়েছি। আসলে এটা তদন্তের মাধ্যমে আসবে যে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা। একটা মানুষের নামে যদি ওয়ারেন্ট থাকে এবং ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে কাউকে যদি আনা হয় তাহলে সেটা কিন্তু আইনের ব্যত্যয় নয়। আপনি আমার বিরুদ্ধে বলতেই পারেন, আপনি যদি বলেন এসপি সাহেব আমার কাছে পাঁচটা টাকা চেয়েছেন সেক্ষেত্রে আমরা কিছু করার নেই। এটা তদন্তেই বোঝা যাবে যে, আপনার কাছে আমি টাকা চেয়েছি? না চাইনি।
পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমও হাশেমের ছেলের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগের প্রেক্ষিতে হারুন অর রশীদ বলেন, আমার সহকর্মীকে কেউ যদি লাঞ্ছিত করে আমার সহকর্মীকে কেউ যদি অস্ত্র ঠেকায় তাহলে সেটা আমি মেনে নিতে পারিনা। মেনে নিতে পারি নাই বলেই কিন্তু সেদিন ঐ ব্যক্তিটি কত বড় শক্তিশালী কত বড় সম্পদশালী সেটি আমি দেখিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে যে একটা সাধারণ মানুষ অপরাধ করলে যেমন মামলা হয় তেমনি মামলা হয়েছে। এরপর আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। এই বিষয়ে যেই কথাটি বলা হয়েছে যে দুই জনকে ধরে আনা হয়েছে টাকা দেয়নি বলে। এটা আপনাদের একটু জেনে রাখা দরকার যে, মামলা হয়েছে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি তাঁর ছেলে সেখানে পালিয়ে থাকার কারনে কিন্তু বলা হয়েছে দুই জনকে তুলে আনা হয়েছে টাকা দেয়নি বলে।
নারায়ণগঞ্জের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা পুলিশ সদস্যরা এবং আমি চেষ্টা করেছি যে নারায়ণগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার এটা ঠিক রাখতে গিয়ে হয়তো সবাইকে খুশি রাখতে পারিনি কিংবা সবাই কে আমরা খেয়াল করতে পারিনি। সেক্ষেত্রে যদি কারো মনে আমি আঘাত করে থাকি তাহলে ব্যক্তিগত ভাবে আমাকে ক্ষমা সুন্দর ভাবে দেখবেন। নারায়ণগঞ্জে চাঁদাবাজের পক্ষে জেলা পরিষদের চেয়াম্যান, মহানগরের নেতৃবিন্দ, সংসদ সদস্য কেউ কোন তদবির করে নাই এটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। যার কারনে নারায়ণগঞ্জে অল্প সময়ে মানুষের মধ্যে একটা স্বস্তি ফিরে এসেছে ।
এ সময় তিনি সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী দিনগুলোতেও এমন পুলিশ সুপার আসবে যিনি এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখবেন। আমার যারা সহকর্মী ছিলো তাঁরা প্রতিটি কাজে আমাকে সাহায্য করেছে কিন্তু যেহেতু আমার রাগ বেশি তাই আমি অনেকের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি, এটা একান্তই কর্মের বিষয় অন্য কোন কারণে নয়। কারো সাথে আমরা বিরোধ নেই শুধু আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্যই অনেক সময় আমি আমার সহকর্মীদের সাথে রাগ হয়ে কথা বলেছি। তাই সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম যে, আপনারা এটা মনে রাখবেন না।
তিনি বলেন, হয়তো এই নারায়ণগঞ্জে আমার আর এসপি হিসেবে আসা হবেনা কিন্তু এই নারায়ণগঞ্জের মানুষের সাথে আমার যেই রক্তের সম্পর্ক এটা কিন্তু অটুট থাকবে। আমি সব সময় আমার সহকর্মীদের সমস্যা জানতে চাইতাম তাঁদের সঙ্গে একসাথে খাবার রান্না করে খেতাম হয়তো তাঁদের সাথে আরা এভাবে খাবার রান্না করে খাওয়া হবে না। এটাই কিন্তু দুর্ভাগ্য। আসলে দুর্ভাগ্য নয়, এটাই নিয়তি। হয়তো বা এক সময় আমাকে চলে যেতে হতোই তাই আমি চলে যাচ্ছি।
এ সময় হারুন অর রশীদ বলেন, বিএনপির সময় আমার চাকরি চলে গিয়েছিলো জামাত শিবির আমাকে চাকুরি থেকে সরিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাকে এরপর চাকুরি দিয়েছিলো। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান স্বাধীনাতার পক্ষে কাজ করেছি সব সময় সামনেও করবো।
আয়োজিত বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন, র্যাব-১১ এর সিইও কর্ণেল কাজী শামসের উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ্ আল মামুন, নূরে আলম, সুবাস সাহাসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।