নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: আজ অমর ২১ ফেব্রুয়ারি। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পূর্ণ হলো আজ। বাঙালির জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ১৯৫২ সালের আজকের এই দিনেই বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। ভাষার জন্য আত্মত্যাগের এই দিনটি বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
প্রতি বছরের মতো আজও রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হবে।
ভাষার জন্য আন্দোলনের ঘটনা ঘটিয়েছে একমাত্র বাংলাদেশই। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার লাল সূর্যটি ছিনিয়ে আনার স্বপ্নের বীজ বপন হয়েছিল আজকের এই দিনটি থেকেই। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর জব্বারসহ আরো অনেকে। তাদের রক্তের বিনিময়ে শৃঙ্খলমুক্ত হয় মায়ের ভাষা, আমাদের দুঃখিনী বর্ণমালা।
ভাষার জন্য রক্ত ঢেলে বাঙালির যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল তার পথ ধরেই প্রশস্ত হয়েছে স্বাধীন ভূখণ্ডের স্বপ্ন। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই মিশে আছে বাঙালি জাতিসত্ত্বার সঙ্গে। বাঙালির জাতির চির প্রেরণার উৎস এই ২১ ফেব্রুয়ারি। এই দিনটিতে পুরো জাতি পরম শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে মহান ভাষা শহীদদের। একুশের প্রথম প্রহরেই বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সকল ভাষা শহীদদের প্রতি। মনের অজান্তেই সকলে গেয়ে ওঠেন- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি…।’
‘একুশ মানে মাথানত না করা’ স্লোগানটি সামনে রেখে শত প্রতিকূলতাতেও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। বায়ান্নর ফাল্গুনে বসন্ত বাতাস ও পলাশ রাঙানো সূর্য স্নাত প্রভাতে যে অমিত সম্ভাবনার স্বপ্নের বুনন হয়েছিল, সেই সুর ধ্বনিত হচ্ছে আজও।
এমন দিনের প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ গোটা জাতি। তবে এ বছর করোনার মহামারির কারণে শহীদ মিনারে যাননি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তাদের পক্ষ থেকে নিজ নিজ প্রতিনিধি শহীদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। দিনটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্র মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনার মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ হতে সর্বোচ্চ ৫ জন প্রতিনিধি এবং ব্যক্তি পর্যায়ে একসাথে সর্বোচ্চ ২ জন শহীদ মিনারে পুষ্পস্পবক অর্পণ করতে পারবেন। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে শহীদ মিনারের সকল প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হবে। এ ছাড়া মাস্ক পরা ছাড়া কাউকে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
মহামারির কারণে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সাথে সঙ্গতি রেখে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আজ আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সকল উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
আজ সরকারি ছুটি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্ধনমিত রাখা হবে জাতীয় পতাকা। বিভিন্ন গণমাধ্যম দিনটি উপলক্ষে উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
২১ আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, দিনটি শ্রদ্ধাভরে পালন হবে গোটাবিশ্বে। ভাষা রক্ষার দিন হিসেবে জাতিসংঘ বেছে নিয়েছে বাঙালির ২১ ফেব্রুয়ারিকে। জাতিসংঘ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের ৩০তম সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।