নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে শুক্রবার সকাল ১০টায় শালিশি বৈঠককে কেন্দ্র করে স্থানীয় চার গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় স্থানীয় চম্পকনগর এলাকার প্রায় শতাধিক বসত বাড়িতে হামলা ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলাকারীদের লাঠিসোটার আঘাতে নারীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২০জন।
আহতরা হলেন জসিমউদ্দিন, সিহাব, ইয়ামিন, শিরিনা, মরিয়ম ও শাকিলা আক্তারসহ আরও অনেকে। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে আড়াইহাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। খাগকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল হক ও আড়াইহাজার থানার ওসি ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন।
খাগকান্দা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল ও ইউপি সদস্য মোসলেম গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, ৯ জানুয়ারি স্থানীয় কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিহাব ও একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজন, রুবেল ও ফাহিমের মধ্যে পূর্বশক্রতার জেরে সংঘর্ষের এই সূত্রপাত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হলেন চম্পকনগর এলাকার মোসলেম, কবির, নসল, মোমেন, ডাক্তার সিরাজুল, সুদল, জাহাঙ্গীর, সোহেল, মোতালিব, সোহরাব, ছাত্তার, মঞ্জুর, হালিম, মালেক, আউয়াল, আমজাদ, নাসির, ইলিয়াছ, সুমন, আবদুল, ইছু ও কবির ফকিরসহ আরও অনেকে।
আহত সিহাবের বড় বোন মিতা জানান, স্থানীয় কবি নজরুল উচ্চবিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিহাবকে একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজন, রুবেল ও ফাহিম তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারধর করে। পরে বিষয়টি মিমাংশা করতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোসলেম ও গ্রাম্যমাতাব্বর রব মিয়া শুক্রবার সকাল ১০টায় চম্পকনগর বাজারে সালিশ বসায়।
স্থানীয় কাকড়াইলমোড়া, বাহেরচর ও তেতুঁইতলা এলাকার পক্ষ থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল, লোকমান ও রহিম তাতে অংশ নেন। হঠ্যাৎ বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে বৈঠকে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে চম্পকনগর গ্রামের বিভিন্ন বসত বাড়িতে একের পর এক হামলা চালাতে থাকে। তিনি মুঠোফোনে আরও জানান, হামলাকারীরা এসময় সৌদিপ্রবাসী হাছানের বসত ঘরের আসবাবপত্র ব্যাপক ভাংচুর করে। আলমারীতে থাকা ৯ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, ৮০ হাজার টাকাসহ মূল্যবান আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায় তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোসলেম জানান, তিন গ্রামের শতশত লোক লাঠিসোটা নিয়ে জড়ো হয়ে ঘন্টাব্যাপী চম্পকনগর গ্রামে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে। হামলায় ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লোকমান ও আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা তার ঘর থেকে চার লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা, ৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে। এসময় তার বসত ঘরের আসবাবপত্র ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। এর আগে চম্পকনগর গ্রামসহ স্থানীয় বাজারের বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুরসহ লুটপাট করা হয়েছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
খাগকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুল হক বলেন, আড়াইহাজারের ইতিহাসে এমন বর্বরোচিত হামলার ঘটনা আর ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, চম্পকনগর এলাকার প্রায় এক থেকে দেড় শতাধিক বসত বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। লোকমান মেম্বার ও তোফাজ্জল এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তবে তোফাজ্জল তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা হয়েছিল। কিন্তু হামলার এই ঘটনায় আমি জড়িত নয়। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে আড়াইহাজার থানার ওসি আক্তার হোসেন বলেন, স্থানীয় কবি নজরুল ইসলাম স্কুল এন্ড কলেজের কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে দুইদিন আগে মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। শুক্রবার বিষয়টি মিমাংশা করতে উদ্যোগ নেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোসলেম। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে চম্পকনগর এলাকায় হামলা চালিয়ে কিছু বসত বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। তবে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।