নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের বাড়ির প্রধান ফটকের দেয়া ভেঙ্গে দেয়ার রূপগঞ্জের ৫ হাজার পরিবারের জমি রক্ষার দাবিতে ভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়নের বেশকটি গ্রামের ৫ হাজার মানুষের বসতভিটা, ফসলি জমি রক্ষার দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার ( ১১ এপ্রিল ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সেলিম রেজার হাতে এই লিখিত অভিযোগ ভুক্তভোগীদের নিয়ে দাখিল করেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর এই লিখিত অভিযোগের অনুলিপি প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়েও এই অভিযোগের অনুলিপি প্রদান করা হয়।
ইষ্ট ওয়েট প্রপার্টি ডেভলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিডেট, বসুন্ধরা সাইনিয়া সার্ভিসেস লিমিডেট ও আশালয় হাউজিং এন্ড ডেভেলপার্স লিমিডেট নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই ৫ হাজার মানুষের জমি দখলের অভিযোগ তোলা হয়।
এসব দপ্তরে অভিযোগ দায়েয়ের সময় অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, এসব ভূমিদস্যূ প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের জমি বসত ভিটা জোরপূর্বক দখল করছে। জমি কিনে একটি আর বালি দিয়ে ভরে দশটি জমি। কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই তারা নিরীহ মানুষের জমি দখল করছে। যদি এভাবে নিরীহ মানুষের জমি বসত ভিটে ভূমিদস্যূরা জোর করে দখল করে নেয় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীরা উল্লেখিত বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থাা গ্রহণের দাবীতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে জানায়, রূপগঞ্জ উপজেলাধীন রূপগঞ্জ ইউনিয়নের পিতলগঞ্জ ও মোগলান মৌজায় অবস্থিাত মধূখালী গ্রামে প্রায় ৫ হাজার লোকের বসবাস সহ ৬টি সামাজিক, ১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুকুর, ফসলী জমিসহ মানুষ চলাচলের পাকা রাস্তাসহ হাজারের অধিক বসত ঘর রয়েছে। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ একটি ভূমিদস্যু চক্র এই গ্রামের জমিতে জোরপূর্বক বালি ফেলে দখলে নেয়ার জন্য ড্রেজার পাইপ স্থাাপন করেছে।
তারা আরও জানায়- শুধু তাই নয়, জমি ক্রয় না করে জোরপূর্বক বালি ফেলে ভরাটের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এতে আমরা গ্রামবাসি সঙ্কিত ও আতঙ্কিত। আমাদের বিতারিত করে এ গ্রামটি দখল করে ভূমিদস্যুরা আবাসন প্রকল্প করার পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যতীত পিতলগঞ্জ চেয়ারম্যান বাড়ী বাজারের দক্ষিণ পার্শে রাস্তার উপরে (ডেমড়া-কালিগঞ্জ সড়কের উপর) ড্রেজার পাইপ বসিয়ে বালি দ্বারা এলাকাটি ভরাটের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছে। ড্রেজার পাইপ বসানোর জন্য ভূমিদস্যুরা জেলা প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন প্রকার অনুমতি গ্রহণ করে নাই।
ভূক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখেন- ফসলী জমি ভরাট করে কোন প্রকার প্রকল্প গ্রহণ না করার জন্য ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। ভূমিদস্যুরা বালু দ্বারা উক্ত গ্রাম এলাকা ভর্তি করে আবাসন প্রকল্প করার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কোন প্রকার অনুমতি গ্রহণ করে নাই। শুধুমাত্র প্রভাব প্রতিপত্তি ব্যবহার করে স্থাানীয় অধিবাসী কৃষকের জমি জোরপূর্বক দখল করে নিচ্ছে। এ মর্মে স্থাানীয় প্রশাসনকে ইতোপূর্বে আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু ভূমিদস্যুদের তৎপরতা বন্ধ হয় নাই। গ্রামবাসীগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিদস্যুদের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ওই সময় নিরীহ জমির মালিক আব্দুল মান্নান, আব্দুর রউফ, সিরাজ, আনোয়ার হোসেন, রাসেল মিয়া, শহিফুল ইসলাম, বিলকিস বেগম, হাসিনা, বাদল মিয়া, মোক্তার হোসেন, গোলজার হোসেন, আলী আকবর সহ ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যওরাও উপস্থিাত ছিলেন। ওঠেছে। জয়নাল আবেদীন তার লোকজন দিয়ে দেয়াল ভেঙ্গে দেয়। শুধু তাতেই তিনি খ্যান্ত হননি। সেই দেয়াল মেরামত করতে গেলে দেয়ালের কাজে বাধা দেয় জয়নাল আবেদীন।
বৃহস্পতিবার ( ১১ এপ্রিল ) সকালে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার দক্ষিন সস্তাপুর এলাকায় অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের বাড়ির প্রধান ফটকের দেয়াল মেরামতের সময় লোকজন নিয়ে সেখানে বাধা দেয় জয়নাল আবেদীন। তবে বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, যেখানে দেয়ালে কাজ করা হচ্ছে সেই জায়গাটি আমার। এমনকি হাসান ফেরদৌস জুয়েল যে জায়গাটি ৪ শতাংশ নিজের দাবি করে দখলে রেখেছেন সেই জায়গাটিও আমার। জমিটি নিয়ে মামলা চলছে। আমি দেয়াল ভাঙ্গিনি। আমার জায়গায় দেয়াল তৈরি করা হলে আমি সেখানে বাধা দিয়েছি। আর ৪ শতাংশ জমিটি যদি জুয়েল পায় তাহলে আমি ছেড়ে দিব। যদি এ বিষয়ে আইনজীবীদের নিয়ে বসতে চায় তাহলে আমি বসতে রাজি আছি।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে নারায়ণগঞ্জ সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলের বাবা তার জীবনের শেষ আয়ের টাকা দিয়ে ৪শতাংশ জমিটি কিনেন। কিন্তু আল জয়নাল সেই জমির চার দিকের জমিগুলো ক্রয় করে জুয়েলের এ জমি দখলের চেষ্টা করেন। প্রভাব খাটিয়ে জুয়েলের কাছ থেকে জমি ক্রয় করারও প্রস্তাব দেয় জয়নাল। জমিটি বিক্রি করতে সম্মত না হওয়ার কারণে জোর করে জয়নাল দেয়াল নির্মাণ করেন। ওই সময় জয়নালের লোকজন জুয়েলের আপন ভাইকে মারধর করে চোখ উপড়ে ফেলেছিলেন বলেও থানায় মামলা হয়।
এই জমিয়ে নিয়ে এর আগে একটি মামলায় জুয়েলের সেই মামলায় জয়নালের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরে একই দিন জয়নাল মীমাংসার প্রস্তাবের শর্তে জুয়েলের জিম্মায় জয়নালকে জামিন দেন আদালত।
২০১৫ সালের এপ্রিলে মামলায় জয়নালকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। মামলার বাদী ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল। নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম শফিকুল ইসলামের আদালতে স্বশরীরে জয়নাল আবেদীন হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে বিকালে ‘সমঝোতায়’ তিনি ছাড়া পেয়েছেন। বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জের আদালত জয়নালকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিলেও কোর্ট পুলিশ তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে ‘সমঝোতার’ জন্য আদালতের গারদে রেখে দেয় বিকাল ৪টা পর্যন্ত। অবশেষে বিকালে বাদীর সঙ্গে আপস ও সমঝোতার ভিত্তিতে বাদী অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের জিম্মায় জামিন পান জয়নাল আবেদীন।
জমিসংক্রান্ত মামলাটি ছাড়াও ফেরদৌসের ছোট ভাইয়ের ওপর হামলা ও চোখে উপরে ফেলে হত্যাচেষ্টার অভিযোগেও দায়ের করা মামলায় জয়নালকে সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ওই মামলায় জয়নাল হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন।