নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, শামীম ওসমান বলেন, সামনে একটা কঠিন সময় আসতাছে। আওয়ামীলীগ সরকারের পতন করাবে এজন্য না। ওরা বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করতে চায়। ওরা এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারে নাই। না মানারই কথা, ওরা ঈমানদার। ওরা ওদের জায়গায় ঠিক আছে। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিভক্ত। এখন এক হওয়ার সময়। শুধু আওয়ামীলীগ নয়, দেশকে যারা ভালো বাসেন তাদের এক হওয়ার সময়। অনেকেই বুঝে না, কিংবা বুঝেও না বোঝার অভিনয় করে।
শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকালে জেলা আওয়ামীগ কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিশাল সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন স্থানে কর্মী সভা করেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। নেতাকর্মীরা তার ডাকে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশে উপস্থিত হয়।
তিনি বলেন, বিশ্বে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতির ফলে দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনারা সুযোগ নিতে চান। আপনারা খেলতে চান। আপনারা মরণ খেলা খেলতে চান। বাংলাদেশকে ধ্বংস করবেন? আপনারা খেলবেন আমাদের সাথে? খেলতে চান, কবে খেলবেন বলেন। আমরাও খেলতে চাই। আপনারা খেলবেন ধ্বংসের পক্ষে, আমরা খেলব ধ্বংসের বিপক্ষে। আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের মতো বাংলাদেশের মাথা উঁচু করার জন্য খেলব। আপনারা সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে খেলবেন, আমরা খেলব অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে। আর যদি মনে করেন, সেই খেলায় জিতবেন। ডেট দেন, কবে খেলবেন। সারা বাংলাদেশে জামেলা করে লাভ কি, এক জায়গায় খেলি। নারায়ণগঞ্জে খেলি। কার কথায় খেলছেন, তারেক রহমান সাহেবের কথায় খেলছেন? লন্ডন থেকে নির্দেশ আসছে, আপনারা বাংলাদেশে বসে লাফাচ্ছেন। খালেদা জিয়া তো অসুস্থ হয়েছেন। মাঝখানে কথা উঠল, ওনার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুস্থ রাখুক আল্লাহ ওনাকে। আমার দোয়া বেশি কবুল হবে। কারণ ওনাদের সময় আমার বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমার ভাইয়ের ব্যবসায়ের ক্ষতি করা হয়েছে। আমাদের বহু লোককে হত্যা করা হয়েছে। বায়তুল আমান ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। তাই আমি যদি দোয়া করি , আমার দোয়া অবশ্যই কবুল হওয়ার কথা। কারণ আমি নির্যাতিত। যে ভদ্রলোক নিজের অসুস্থ মাকে দেখতে আসে না। কেন আসলেন না? বুকে কলিজা নাই,সাহস নাই কিংবা মানসিকভাবে দূর্বল। যে আমি খুন করেছি। গেলে ফেঁসে যাবো। বাদ দেন, লন্ডনে আরামেই থাকেন।
শামীম ওসমান আরো বলেন, এতো তাড়াতাড়ি খেলার মাঠে আমাদের নামার কথা না। এরপর দেশের বাহিরে গিয়েছিলাম। শোক দিবসের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে আওয়ামীলীগের নেতারা নির্দেশ করে আমাকে সমাবেশ করতে বললেন। আমি বললাম আপনারা এত উত্তেজিত কেন? কারণ হিসেবে বলল, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্মস্থান। এখানে সকল আন্দোলনের সূতিকাঘার। সেই নারায়ণগঞ্জের মাটিতে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বিএনপি জামায়াতের দোসররা আমাদের জাতির জনকের কন্যাকে নিয়ে বাজে ভাষায় কথা বলছে, আমরা এটা মেনে নিতে পারছি না। তাদের কথায় সায় দিয়ে কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিছুদিন যাবৎ ঢাকায় একদল মিটিং করে বলছে, রাজপথ দখল করবে। কিন্তু আজকে কার দখলে রাজপথ। শেখ হাসিনার দখলে নারায়ণগঞ্জের রাজপথ। আপনারা ঢাকার রাজপথ দখল করবেন, আমরা কি হাতে চুরি পড়ে আছি। আপনাদের জন্য ঢাকায় গিয়ে খেললে আমাদের নারায়ণগঞ্জের মহিলারাই যথেষ্ট। কি করতে চান আপনারা দেশকে ধ্বংস করবেন? পারবেনা না। কিছু স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হয়তো কমবে।
তিনি বলেন, রাজনীতি বুঝি আমি। রাজনীতিবিদদের সাথে সাধারন মানুষের পার্থক্য এখানে। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, ২ আর ২ এ কত হয়? কেউ সংখ্যা দুইটা যোগ করবে কেউ গুণ করবে। আর আমরা ২২ দেখি। নারায়ণগঞ্জে নাকি আওয়ামীলীগ নাই, আবার আমার সম্পর্কে একটু বেশি বলে। কারটা খারাপ লাগাবো? যারা বিরোধী তারাও গালি দেয়, যারা পক্ষের তারাও গালি দেয়। কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতা মামুন মাহমুদের উপর অতর্কিত হামলা হয়। যে হামলা করে তিনি স্বীকারোক্তি দিলো, নারায়ণগঞ্জের একজন সাবেক এমপির ছেলে নির্দেশে এই হামলা করেছে। আল্লাহর রহমত ওনি বেঁচে গেছেন। ওনি না বাঁচলে , ওই পক্ষের আর আমার পক্ষের মানুষও বলত। ত্বকী হত্যার মতন আরেকটা নাটক সাজাতো। শামীম ওসমানের লোকজনরাই মামুন মাহমুদকে মেরে ফেলেছে। তাই ত্বকী হত্যা সহ সকল হত্যার বিচার চাই। বেসরকারি একটি সংবাদ মাধ্যম নিউজ করেছে ত্বকী হত্যার বিষয়ে । পরিষ্কার হয়ে গেছে, এই ঘটনার পিছনে কারা ছিল।
আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগামীকাল আমি থাকব কিনা জানি না। নারায়ণগঞ্জে যারা আওয়ামীলীগ করেন কিংবা আওয়ামীলীগের পরিবারে বড় বড় নেতা-নেত্রী আছেন। আমি কর্মী মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে বড় বড় পদ পেয়েছেন, দয়া করে মাঠে নামেন। আওয়ামীলীগের জন্য নাহ, নেত্রীর জন্য নাহ, আসেন বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করি। ২০২৪ যখন নির্বাচন হবে, জাতির পিতার কন্যা যখন ক্ষমতায় আসবেন। আমাকে বইলেন, আমি সড়ে যাবো নিজের ইচ্ছায় আপনারা পদ-পদবী নিয়ে থাইকেন শান্তিতে। আমার কোন আপত্তি নাই। পদ-পদবী কোন লোভ লালসায় রাজনীতি করি না।
তিনি আরও বলেন, যেই মহল্লায় আপনি থাকেন, সেটাই তো আপনার বাংলাদেশ। যেখানে আমার ছোটবেলা কাটিয়েছি, সেটাই তো আমার বাংলাদেশ। যে যেই এলাকায় থাকেন, সেই এলাকায় মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করেন। যারা বিশেষ করে আমার দল করেন। আমি মাস্তান চাই না, লাঠিয়াল চাই না। হুমকি চাই না। মোটরসাইকেল বাহিনী চাই না। আমি নিজেই একলা একটা বাহিনী। বুকে সাহস আছে। দেশের জন্য ভালো কাজ করতে হবে। আজকে আপনারা যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন সমাবেশে, আপনাদের ভালোবাসায় আমি কৃতজ্ঞ।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি চন্দন শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালা প্রমুখ। এছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাজাদাত হোসেন সাজনু, জেলা মহিলা লীগের সভাপতি শিরিন বেগম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল, সাবেক সভাপতি মোহসীন মিয়া, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন সহ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।