আশা জাগিয়েও পারেনি চট্টগ্রাম আবাহনী। মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু এফসির কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছে শেখ কামাল ক্লাব কাপে। তাই আজ বিকেলের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম চত্বরে ঢাকঢোলের শব্দটা রাতে হারিয়ে গেছে আশা ভঙ্গের হতাশায়। ফাইনালে ২-১ গোলে চট্টগ্রাম আবাহনীর হার যতটা নিজেদের ভুলে, তার চেয়ে বেশি যোগ্যতর দল হিসেবে তেরেঙ্গানুর জয়।
ফাইনাল শেষে তাই প্রতিপক্ষকে অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফুল হক। বলেছেন, ‘ওরা যোগ্যতর দল হিসেবেই জিতেছে।’ নিজেদের কিছু ভুলও দেখছেন কোচ, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল কর্নারে পেছন থেকে যে আসবে তাকে হেডের সুযোগ দেবে না আরিফুল। কিন্তু ডিফেন্ডার হাকিম প্রথম গোল করল কর্নারের হেডে। আরিফ তাকে আটকাতে পারেনি। গোল খেয়ে আমরা গোলে শোধে মরিয়া ছিলাম। কিন্তু প্রতি আক্রমণে দ্বিতীয় গোলটি খেয়েছি আমরা। এই গোলের সময় গোলকিপার নেহাল কোনাকুনি জায়গাটা ব্লক করেও গোল খেয়েছে। সে আরেকটু ভালো করতে পারত।’
এই হারে চোট সমস্যার দায়ও দেখছেন মারুফুল হক। আজ ফাইনালের বিরতির কিছুক্ষণ আগে চোট পান লেফট ব্যাক রহমত। বিরতির কিছুক্ষণ পর একই পথের যাত্রী আফ্রিকান মিডফিল্ডার দিদিয়ের। এই দুজনের চোট দলকে সমস্যায় ফেলেছে চট্টগ্রাম আবাহনীকে, ‘সব ফুটবলারের বিকল্প আসলে হয় না। তাই আমরা আসলে এই দুজনের অভাবটা পূরণ করতে পারিনি।’ তবে তেরেঙ্গানু যে ফুটবলটা খেলেছে তাতে রহমত, দিদিয়েররা থাকলেও ফল ব্যতিক্রম কিছু হতো বলে মনে হয় না।
প্রথম ২০ মিনিটেই ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। মন্টেনেগ্রোর স্ট্রাইকার রতকোভিচ ৫৭ মিনিটে ২-১ করলেও গোল নষ্ট করেছেন এর আগেই। লুকা আরেকটু ভালো করলে ম্যাচের ফল অন্যরকমও হতে পারত মনে করেন মারুফ। তবে দিন শেষে প্রশংসাও করেন শিষ্যদের, ‘আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো খেলেছি। চ্যাম্পিয়ন হলে খুশি হতাশ। সেটা হলো না কী আর করা। ছেলেরা চেষ্টা করেছে।’ তবে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া মানতে পারছেন না ফাইনালে হার, ‘চ্যাম্পিয়ন হতে না পেরে আমি সত্যিই খুব হতাশ।’
তেরেঙ্গানু খুব খুশি, তারা সুযোগ নষ্ট করেনি। ক্লাবটির ৬৩ বছরের ইতিহাসে আজ রাতে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক আসরে খেলে প্রথমবারই শিরোপা জয় সেই সুযোগ কাজে লাগানোরই ফল। বিশেষ করে সেট পিচে দলটি দুরন্ত। অধিনায়ক লি টাকের সেট পিচ মানেই বেশির ভাগ সময় গোল। আজ প্রথম গোলটাও লির কর্নারে। যিনি ৬টি গোল করে তৃতীয় শেখ কামাল ক্লাব কাপে সেরা গোলদাতা। তাঁর ৬ গোলের ২টি ফ্রিকিকে, ৩টি পেনাল্টিতে। বাকি গোলটি প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে অসাধারণ এক শটে।
ফাইনালে লি গোল না পেলেও জয়ের নায়ক তাঁকেই বলা উচিত। ফাইনাল শেষে লির চোখ মুখ থাকল আনন্দে ভরপুর। বলেন, ‘বাংলাদেশকে ভুলতে পারব না। এই দেশ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। ’ চট্টগ্রামের এই এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন ২০১৬ সালে। প্রতিপক্ষ ছিল মুক্তিযোদ্ধা। এবার শেখ কামাল ক্লাব কাপে মালয়েশিয়ার ক্লাবের হয়ে ফাইনালের আগের দুটি ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেন। তার মানে এক মাঠে তিন হ্যাটট্রিক। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামকে ভুলবেন কীভাবে লি টাক ! তাই তেরেঙ্গানুর নম্বর সেভেন বলেন, ‘এই মাঠ আমার জন্য পয়মন্ত। ভিনদেশির কোনো মাঠে তিনটি হ্যাটট্রিক করা সহজ নয়। তাই স্মৃতিগুলো ভুলব না। আমার বিশ্বাস ছিল ভালো করব। তবে এতটা ভালো করব হয়তো ভাবিনি।’
আনন্দে আত্মহারা টুর্নামেন্ট সেরা লি টাক বলে গেলেন, ‘ কঠিন ছিল এই শিরোপা জেতা। তবে আমরা পরিশ্রম করেই এটি পেয়েছি। দারুণ ফাইনাল হয়েছে। প্রতিপক্ষ সহজে হার মানেনি। আমরা প্রথম ৪৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণ করেছি। পরের ৪৫ মিনিটি ওরা অনেক বেশি এসেছে। আমার নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল। আমি সেরাটা দিয়ে সফল হয়েছি। আমি খুব খুশি।’
তেরেঙ্গানুর কোচ মোহাস্মদ আফুজিও এই রাতটা ভুলবেন না। ম্যাচের পর প্রশংসায় ভেজান তাঁর ফুটবলারদের, ‘আমার ছেলেরা অসাধারণ ফুটবল খেলেছে। আমি ওদের অভিনন্দন জানাই। আমি বলব এই শিরোপাটা আমাদের প্রাপ্য। আমাদের লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন। সেটা হতে পেরে ভালো লাগছে।’ তেরেঙ্গানু খুব দ্রুতগতির ফুটবল খেলে না। কিন্তু দলটির ফুটবলারদের স্কিল খুব ভালো। আজকের দুটি গোলেই ছিল সেটার ছোঁয়া। শেখ কামাল ক্লাব কাপের শিরোপা যোগ্যতর দলটির হাতিই উঠেছে। লি টাকের হাতেই এটি বেশি মানিয়েছে।