জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবি ও সহকারী প্রক্টরের ‘হামলার’ প্রতিবাদে চতুর্থদিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। অপরদিকে সহকারী প্রক্টরের ওপর আন্দোলনকারীরা ‘হামলা’ চালিয়েছে দাবি করে মানববন্ধন করেছে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকেরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরোনো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রাখেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবরোধের ফলে দপ্তরগুলোতে প্রবেশ করতে পারেননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে সকাল ১০টার পরে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলনের সুবিধার্থে পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের হিসাব শাখা ধর্মঘটের আওতামুক্ত রাখা হয়।
চতুর্থ দিনের সর্বাত্মক ধর্মঘট ও টানা ৬ষ্ঠ দিনের অবরোধ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তবে ধর্মঘট উপেক্ষা করে বিভিন্ন বিভাগের উপাচার্যপন্থী শিক্ষকেরা ক্লাস ও পরীক্ষা নিচ্ছেন।
বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে দুর্নীতিবিরোধী ক্যানভাস নিয়ে শোভাযাত্রা বের করেন আন্দোলনকারীরা। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ঘুরে আবার পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে বলেন, ‘গতকাল সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল আন্দোলনকারী দুজন শিক্ষার্থীর ওপর ন্যক্কারজনকভাবে হামলা করেন। তা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিজের অপরাধ ঢাকতে এবং আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তিনি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উল্টো হামলার নাটক সাজাচ্ছেন।’আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে এক সহকারী প্রক্টরের ওপর ‘হামলার’ অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন উপাচার্য সমর্থক শিক্ষকেরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৩১ অক্টোবর। ছবি: মাইদুল ইসলামএদিকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফের ওপর ‘হামলার’ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন উপাচার্যের সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’। বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে পরিষদের সভাপতি আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘মহিবুর রৌফ আমাদের সহকর্মী, ছাত্র এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া একজন ভালো অভিনেতা ও নাট্যকর্মীসহ তিনি অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িত আছেন। তাঁর ওপর যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, সেটা দেখে আমাদের কাছে ৭১ সালের কথাই মনে পড়ে যায়।’
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক ফখরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন নীলাঞ্জন কুমার সাহা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নুহু আলম, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষক আমিনুল ইসলাম, এ কে এম ইউসুফ হাসান ও সোমা মুমতাজ প্রমুখ।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে প্রায় আড়াই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। প্রথমদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগের নেতাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে তাঁদের এ আন্দোলন শুরু হয়। দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দুই দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে আন্দোলনকারীদের দুই দফা দাবি মেনে নিলেও আর্থিক অনিয়মের তদন্তের দাবির বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর থেকে উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরপর গত সোমবার (২৮ অক্টোবর) থেকে টানা ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করে আসছেন তাঁরা। এর মধ্যে গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো কলা অনুষদের সামনে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ আন্দোলনকারীদের দুজন সংগঠককে লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। আর মহিবুর রৌফ বলছেন, আন্দোলনকারীরা তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছে।