নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
নারায়ণগঞ্জ শহরের কিল্লারপুল এলাকায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ড্রেজার পরিদপ্তরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের শাসিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
বুধবার ( ২৫ সেপ্টেম্বর ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ড্রেজার পরিদপ্তরের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রীর রোষাণলে পড়েন দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা।
এসময় প্রতিমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়মের ব্যাপারে মৌখিক সতর্ক করেন এবং এর ব্যাখ্যা চান। বিভিন্ন নদী খনন প্রকল্পে নিয়োজিত ড্রেজার ও কয়েকটি প্রকল্পের ড্রেজার ক্রয় নিয়ে অনিয়ম ও দূর্ণীতির ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী আগামী ৩০ অক্টোবর পুনরায় পরিদর্শনে আসবেন জানিয়ে তাদেরকে সকল ত্রুটি সংশোধন করার কঠোর নির্দেশনা দেন।
এর আগে পরিদর্শনে এসেই প্রতিমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার পরিদপ্তরের প্রকৌশলীদের সঙ্গে জরুরি সভা করেন। সে সময় নথিপত্র ঘেটে ২৬টি ড্রেজার ক্রয় সহ ১২শ’ ৯২ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্ণীতির সত্যতা পান।
দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নেদারল্যান্ডস সরকার ৭৪ সালে যে ড্রেজারগুলো উপহার দিয়েছিল সেগুলো এখনো চলছে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যেসকল ড্রেজার নতুন কেনা হয়েছে সেগুলো কেন কিছুদিন পর বিকল হয়ে যাচ্ছে। নতুন গাড়ি কিংবা রিকন্ডিশন গাড়ি ক্রয় করা হলেওতো ৫ বছর ওয়ার্কশপে পাঠাতে হয়না। তাহলে আমাদের নতুন কেনা ড্রেজার কেন ওয়ার্কশপে পাঠাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এত লোক বিদেশে ট্রেনিংয়ে যাচ্ছে অথচ মেকানিকাল বিভাগের প্রকৌশলীদের কেন ট্রেনিংয়ে পাঠানো হচ্ছে না। এসময় ১২৯২ কোটি ২৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যায়ে বাংলাদেশের নদী খননের জন্য ড্রেজার ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্পটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী। প্রকল্পটিতে ২১ টি ড্রেজার, ১২ টি টাগবোট, ২৩ টি বিভিন্ন ধরনের এক্সাভেটর (ভেকু), ৩ টি ফর্কলিফট, ৫টি বার্জ, ২টি স্পীড বোট কেনার কথা ছিল। অথচ ৯টি ড্রেজার, ৩টি টাগবোট, ৫ টি বিভিন্ন ধরনের এক্সাভেটর (ভেকু), ৩ টি ফর্কলিফট ক্রয় করতেই ৬৫১ কোটি ৫২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৯টি ড্রেজার ক্রয় করতেই যদি প্রকল্পটির অর্ধেক অর্থ ব্যায় হয় তাহলে বাকী ১২টি ড্রেজারসহ অন্যান্য সামগ্রী কিভাবে ক্রয় করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই প্রশ্ন তুলবেন। এছাড়া ৫ টি নতুন ড্রেজার বেইজ নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের এক সুতা জমি বেদখল হলে কিংবা নিজের সম্পদ নষ্ট হলে যেমন কষ্ট লাগে তেমনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার পরিদপ্তরের সম্পদ বিনষ্ট হতে দেয়া যাবেনা। এই সম্পদকেও নিজের সম্পদ বলেই মনে করতে হবে। এসময় ড্রেজারের ২০৬ জন অস্থায়ী শ্রমিক চাকুরী স্থায়ী করণের দাবি জানান। পরে মন্ত্রী পাউবোর উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের মন্ত্রী বলেন, যারা দীঘর্ঘদিন কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তাদেরকে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো: জসিমউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাস চন্দ্র সাহা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহা-পরিচালক মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত মহা-পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী আজিজুল হক, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম সহ বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা।
সভা ও পরিদর্শন শেষে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক গণমাধ্যমকে জানান,বাংলাদেশের সকল নদীকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে।
তিনি জানান, এই ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীপ্রবাহ সচল রাখলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাড় ভাঙ্গন অনেকাংশে কমে আসবে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীকে গতিশীল করতে আরো যা যা প্রয়োজন তাই করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৬৪ জেলায় ৪৪৮ টি খাল খনন প্রকল্প চালু রয়েছে এবং সেগুলোর কাজ চলছে। পরবর্তীতে আরো ৫ শতাধিক খাল খনন সহ নারায়ণগঞ্জের ড্রেজার পরিদপ্তরকে আধুনিকায় করার পরকল্পনার কথাও জানান তিনি।
অনিয়ম ও দূর্ণীতির ব্যাপারে সাংবাদিকসব প্রশ্নের জবাবে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব জায়গায়ই দূর্নীতিগ্রস্থ লোক থাকে তবে আমরা এখানে সতর্ক করেছি যেন এরকম কিছু এখানে শোনা না যায়। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যেন দূর্নীতি কম হয় এবং সবকিছু একটা হিসাবের মধ্যে থাকে।