নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতিকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৬ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর মতি ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের জন্য আবেদন করেন। শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত।
ইতোপূর্বে আদালত কাউন্সিলর মতির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। দুদকের পক্ষে শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেন মোশাররফ হোসেন কাজল। উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জন অনুসন্ধানের পর কাউন্সিলর মতিকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ করা হয়। পরে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। বিবরণীতে তিনি ৯ কোটি ৬২ লাখ ৪২ হাজার ২৭ টাকা অর্জনের ঘোষনা দেন। কিন্তু দুদকের তদন্তে দেখা যায় ১১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৭ হাজার ২৮৩ টাকা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেন।
তাছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ৭৪ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার ১০৩ টাকা জমা ও ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৮ টাকা উত্তোলন করেন।
এসব কর্মকান্ডের কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদস্ত শেষ করে কমিশনের অনুমোদনক্রমে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়া তার স্ত্রী রোকেয়া রহমানকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ করলে একই তারিখে তিনি দুদকে যে বিবরণী দাখিল করেন, তদন্তে তার সঙ্গে ৮ কোটি ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৯ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন সময়ে ১ কোটি ৭৬ লাখ ১৬ হাজার ৯৪ টাকা জমা এবং ১ কোটি ৭৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৮ টাকা উত্তোলন করেন। যা অস্বাভাবিক লেনদেন। এসব বিষয় আমলে নিয়ে মতি ও তার স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১-এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম। পরে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর থেকে মতি আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়। এর পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
কে এই মতি: সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী সুমিলপাড়ার আইলপাড়া এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে মতিউর রহমান মতি। আশির দশকে তিনি শিমুলপাড়া এলাকায় মুনলাইট সিনেমা হলের টিকিট বেচতেন। তৎকালিন জাতিয় পার্টি নেতা সফর আলী ভূ্য়াঁর হাত ধরে নাম লিখায় রাজনীতিতে। নব্বই দশকে এসও এলাকায় বিএনপির মিছিলে বোমা হামলা করে আলোচনায় আসেন মতি।
ওই বোমা হামলায় মনা নামে এক পথচারী নিহত হয়েছিলেন। তার দুই বছর পর নিজ বাড়িসংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের উপর শাহ আলম বাবু নামে এক যুবককে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করার পর থেকেই তিনি বনে যান এলাকার ত্রাস। জাতীয় পার্টি ছেড়ে যোগদেন যুবলীগে। এলাকায় শুরু করেন বেপরোয়া চাঁদাবাজি। গড়ে তুলেন অপরাধ জগতের সাম্রাজ্য। ২০০১ সালে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান বিদেশে। ২০০৯ সালে দেশে এসে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আত্নসমর্পন করে প্রায় ১ বছর জেল হাজত বাস করে জামিনে বের হয়ে ফিরেন এলাকায়।
দলীয় ক্ষমতার প্রভাবখাটিয়ে গড়তে থাকেন অর্থের পাহাড়। ২০১৬ সালে নাসিকের দ্বিতীয় নির্বাচনে হন ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। পরবর্তী নির্বাচনেও বিজয়ী হন। একদিকে জনপ্রতিনিধি অপর দিকে থানা যুবলীগের আহ্বায়ক হওয়ায় ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন মতি।
এলাকার অবৈধ আয়ের উৎস নিয়ন্ত্রনসহ বিভিন্ন খাত থেকে অবৈধ পন্থায় শত শত কোটি কোটি টাকার মলিক হয় মতি। নব্বই দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে হত্যা, মিস্ফোরক, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ২৪টি মামলা হয়। যার মধ্যে ৩টি মামলা বিচারাধিন, ১টি হাইকোর্ট হতে স্থগিত আর বাকিগুলো খালাস ও আপোষ মিমাংশায় অব্যাহতি।