নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
নারায়গঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের পুত্রবধূ ভাষা সৈনিক ও রত্মগর্ভা মা নাগিনা জোহার তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে পরিবারের পক্ষ থেকে বন্দরে নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকার নারিন্দা এতিমখানা ও এমপি সেলিম ওসমানের মালিকানাধীন উইজডম অ্যাটায়ার্স লিমিটেড এর অভ্যন্তরে পৃথক ভাবে দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দোয়ায় মরহুমা নাগিনা জোহা সহ পরিবারের মৃত সকল ব্যক্তিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া শেষে উপস্থিত সকলের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ৭ মার্চ বেলা ১১টায় বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের বাগদোবাড়িয়া এলাকায় নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবং সন্ধ্যায় উইজডম অ্যাটায়ার্স লিমিটেডে এ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। অপরদিকে নারিন্দা এতিমখানায় দিনব্যাপী কোরান খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বন্দরে নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দোয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মরহুমা নাগিনা জোহার ছোট ছেলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও মেঝ ছেলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের জামাতা উইজডম অ্যাটায়ার্স লিমিটেড এর নির্বাহী পরিচালক আক্তার হোসেন অপূর্ব।
দোয়ার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এমপি শামীম ওসমান, তাঁর মায়ের পাশাপাশি দাদা খান সাহেব ওসমান আলী, বাবা মরহুম এ.কেএম শামসুজ্জোহা, প্রয়াত বড় ভাই নাসিম ওসমান এর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তাঁদের যেন বেহেস্ত নসিব হয় তাঁর জন্য উপস্থিত সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। সেই সাথে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দু কাদের এবং বড় ভাই সেলিম ওসমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া প্রার্থনা করেন।
উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে শামীম ওসমান বলেন, আমরা মা অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন। আমার বাবা অত্যন্ত সৎ এবং ত্যাগী রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং অবশ্যই অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন। যার জন্য আপনারা তাদের ভালবেসেন সেই সাথে আমাদেরকেও ভালবাসা দিয়ে যাচ্ছেন। আসলে মা বাবার পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার বেদনা একমাত্র তাঁরাই বুঝতে পারেন যাদের মা বাবা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আল্লাহ যেন প্রত্যেকের বাবা মাকে বেহেস্ত নসিব করেন।
তিনি আরো বলেন, আমার বড় ভাই সেলিম ওসমান উনি রাজনীতি করেন না। উনি প্রথমবার নির্বাচন করতে চান নাই। এবারেও উনি নির্বাচন করতে রাজি ছিলেন না। আসলে অনেকেই তো রাজনীতি করেন। অনেকেই করতে আসছেন। রাজনীতিতে খাওয়ার মানুষ বেশি আর দেওয়ার মানুষ কম। আমার বড় ভাই সেলিম ওসমান এমপি হয়ে এলাকার মানুষের জন্য আমার জানা মতে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে প্রতিটি এলাকায় স্কুল বানিয়েছেন। এমন কজনে করতে পারেন। উনি যখন নির্বাচন করতে চাইছিলেন না আমি তখন উনাকে বলে ছিলাম তুমি আপার কাছে যাও। গিয়ে উনার কাছ থেকে একবার জেনে আসো তোমার কি করা উচিত। উনি গিয়েছিলেন আর আপা বলেছিলেন তোমার মত মানুষ প্রয়োজন রয়েছে যে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে। তুমি নির্বাচন করো এলাকার মানুষের জন্য যেভাবে কাজ করে যাচ্ছো সেভাবে কাজ করে যাও।
বড় ভাই সেলিম ওসমানের সুস্থ্যতা কামনা করে শামীম ওসমান বলেন, আমার বড় ভাই যখন খুব বেশি অসুস্থ হোন বা পারিবারিক ভাবে নানা সমস্যায় নিমজ্জিত হোন তখন তিনি আল্লাহর ঘর মক্কায় চলে যান। উনার শরীরটা ভাল না এখনো তিনি মক্কায় আছেন অসুস্থ্য হলেই তিনি পবিত্র কাবা শরীফ ছুয়ে আসতে চান। আপনারা সকলে উনার জন্য দোয়া করবেন উনি যেন সুস্থ্য থেকে দীর্ঘদিন আপনাদের সেবা করে যেতে পারেন। আমরা কে কখন চলে যাবো জানিনা। শুধু এতটুকু বলবো যতদিন বেঁচে থাকবে মানুষের সেবা করে যাবো মানুষ সেবা করে খুশি করার মধ্য দিয়ে আল্লাহকে খুশি করতে চাই।
বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদ এর সভাপতিত্বে দোয়ায় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভানেত্রী প্রফেসর শিরীন বেগম, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানা উল্লাহ সানু, সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন, মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, মদনপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি গোলাপ হোসেন, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু, বন্দর থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান কমল, সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদ, বন্দর উপজেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা।
প্রসঙ্গত, মরহুম এ.কে.এম সামসুজ্জোহার সহধর্মিনী নাগিনা জোহা একজন রতœগর্ভা মা। তিনি ১৯৩৫ সালে অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার কাশেম নগরের জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পরিবারের পূর্বপুরুষদের নামানুসারেই গ্রামটির নাম কাশেম নগর রাখা হয়। তার বাবা আবুল হাসনাত ছিলেন সমাজ হিতৈষী ও কাশেম নগরের জমিদার। শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় তার বিশেষ সুনাম ছিল। মরহুম নাগিনা জোহার বড় চাচা আবুল কাশেমের ছেলে আবুল হাশিম ছিলেন অবিভক্ত ভারতবর্ষের মুসলীম লীগের সেক্রেটারি ও এম.এল.এ। চাচাতো ভাই মাহবুব জাহেদী ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ভাগ্নে পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট নেতা সৈয়দ মনসুর হাবিবুল্লাহ রাজ্যসভার স্পিকার ছিলেন। ১৯৫১ সালে এ কে এম সামসুজ্জোহার সাথে তার বিয়ে হয়। স্বামীর বাড়িতে এসেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন।
মরহুম এ.কে.এম শামসুজ্জোহার সহধর্মিনী মরহুম নাগিনা জোহা ছিলেন ভাষা সৈনিক। তিনি রতœগর্ভা মা পুরস্কারে ভূষিত হয়ে ছিলেন। তাঁর ৩ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে প্রয়াত নাসিম ওসমান ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ৪বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, মেঝ ছেলে সেলিম ওসমান একই আসনে দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ছোট ছেলে শামীম ওসমান নারায়নগঞ্জ-৪ আসনে তৃতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।