তাহসান খান। গান লিখেন, সুর করেন আবার সেই গান কণ্ঠেও ধারণ করেন। ‘হ্যান্ডসাম লুকিং’ এর কারণে টেলিভিশন নাটকেও বেশ জনপ্রিয়। করেছেন চলচ্চিত্রেও অভিনয়। রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁয় বসে সময় সাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হলো তাহসানের সঙ্গে।
কেমন আছেন?
এই তো ভালো আছি।
আপনার মিউজিক ভিডিও রিলিজ পেয়েছে সম্প্রতি সেটা নিয়ে বেশ আগ্রহী মনে হচ্ছে আপনাকে?
মিউজিক ভিডিও রিলিজ পেয়েছে বলবো না, আমি বলবো গান রিলিজ পেয়েছে। এখন গান মুক্তি পেলেও তার সঙ্গে ভিডিও থাকলে আর গানের প্রসঙ্গ আসেই না। সংবাদ হয় মিউজিক ভিডিও নিয়ে। বেসিক্যালি প্রকাশ পায় গান, আর সে গানেরই ভিডিও হয়। এটা আমার সে গানেরই ভিডিও। প্রতি বছরই আমার গান বের হয়। এ বছর আরো একটা গান প্রকাশ করবো। ‘আনমনে’ নিয়ে ভীষণ আশাবাদী কারণ নেই গান দিয়ে অসংখ্য দিন পরিশ্রম করেছি। গানটা লিখেছে মালা। শাকের রাজা আমার প্রিয় কম্পোজার তার সঙ্গে কাজ করেছি এটা ভালো লেগেছে। তানিম রহমান অংশু বানিয়েছেন। সবমিলিয়ে অনেকগুলো প্রিয় মুখ এই গানের সাথে যুক্ত।
তাহলে মিউজিক ভিডিওর আগে গান?
এখনকার মিউজিক ভিডিওগুলো স্টোরি বেইজড হচ্ছে না। ফিল্ম বেইজড, মিউজিক বেইজড- মেকিংটাই অন্যরকম হচ্ছে। আবার মিউজিক ভিডিও তৈরি হচ্ছে শুধু একটা গতিহীন গল্প বলে যাওয়ার মতো। তবে আমি চেয়েছি আমার এই ভিডিওটা হোক পাশ্চাত্য ধাঁচের। হয়েছেও তাই। সবচেয়ে বড় কথা গান যদি ভালো না হয়, তাহলে ভিডিও দিয়ে কী হবে? সবার আগে আগে গান তো ভালো হতে হবে। আমি সবসময় গান দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করতে চাই। সেটাই চেয়েছি। এটাও তেমন।
আপনার কাছ থেকে একটা ভালো খবর শুনতে চাই
বছরের শেষটা আমার জন্য স্পেশাল হবে। এটা ভালো খবর। কারণ ওই সময় আমার ১০০ তম নাটক রিলিজ পাবে। শেষদিকে আরেকটা গান বেরোচ্ছে সেটা রিলিজ পাবে। গানটা হলো ‘কী হতো ভুলে গেলে।’ এই গানটার মজার একটা গল্প আছে। যেদিন আমি গানটা রেকর্ডিং করি সেদিন আমার ড্রাইভার ছিলেন। উনি পরে বললেন, ভাই এই গানটা আমাকে দেন। এটা আমি শুনি, গাড়িতে রাখি। কিছু গান এমনভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে যায় আমি ঠিক এক্সপেক্ট করি না। এই গানটা মনে হয় সেরকম একটা গান হতে পারে, যেসব গান অনেকদিন বেঁচে থাকতে পারে। ভালো খবর গুলোর মধ্যে আরেকটি হলো- নতুন একটি ফিল্মের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। ঘটা করে অনুষ্ঠান করে জানাবো আপনাদের।
এ বছরটা চলে যাচ্ছে, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিকে গুলোকে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
প্রতিটা বছর আমি শুরু করি সেই চিন্তা করে যে আমি আসলে কোন কাজটা করবো। আমি গান করবো, নাকি অভিনয় করবো নাকি লিখবো। কিন্তু ২০১৯ সালটা শুরু হয়েছিল অন্যরকম চিন্তা দিয়ে। আমি ভেবেছিলাম এ বছর আমি বড় পর্দায় ভালো একটা কাজ উপহার দেবো। গত ৭-৮ বছর অনেক ফিল্মের প্রস্তাব পেয়েছি। করার যে আগ্রহ ছিল না তা নয়। কিন্তু আমি যে চরিত্রতে নিজেকে প্রবেশ করতে পারবো, যেটা হৃদয়স্পর্শী গল্প হবে, পরিবার নিয়ে দেখার মতো হবে, তেমন ছবি করবো। আমি খুবই খুশি, যদি একদিনের মতো সিনেমায় আমি কাজ করেছি। স্টার সিনেপ্লেক্সে তিন মাসের মতো সিনেমাটি চলেছে। সারাদেশে অসংখ্য মানুষ ছবিটি দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই বছরের আর দুটো গল রয়েছে সেটা এখন পূরণের অপেক্ষায় রয়েছি।
‘বেইলি রোড’ সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ে এই শব্দযুগল, এই সড়কের নাম, আপনার একটি ভিডিও; এ প্রসঙ্গে কিছু শোনার আগ্রহ আমাদের কিংবা পাঠকদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে, যদি বলতেন-
পৃথিবীটা এমনভাবে বদলে গেছে কখন কোন কথাটা বলি, আর কোন কথাটা কোথায় আকস্মিকভাবে টেনে আনা হচ্ছে তা বলা মুশকিল। সাম্প্রতিক সময়ে আমার পুরাতন ইন্টারভিউগুলো ভাইরাল হচ্ছে। ট্যাগলাইনগুলো এমনভাবে দেওয়া হচ্ছে মানুষ ভাবছে এটা বুঝি এখনই দেওয়া হচ্ছে। আমি আসলে এমন কিছুই বলতে চাই না যাতে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয় বা মিস কমিউনিকেশন তৈরি হয়। এটা ভাইরালের যুগ। অনেকে চেষ্টা করে ভাইরাল হতে, আমি চেষ্টা করি না। যদি ভাইরাল হয় তাহলে হলো, সেটা আমার চিন্তা করার বিষয় নয়। তেমনই সেটাও পুরাতন একটি ভিডিও।
ভাইরাল নিয়ে আপনার কোনো অনুযোগ?
আমি গান লিখি, কবিতা লিখি। আমি একটা কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলাম। আসলে এই কবিটা মানুষকে শোনানো বা বলার ইচ্ছে ছিল। আমি গত বছরের ১৭ অক্টোবর আমার বার্থডের আগের দিন লিখেছিলাম, ভেবেছি পরেরদিন পোস্ট করবো। কিন্তু বাচ্চু ভাই মারা যাওয়ার পর সেটা প্রকাশ করা হয়নি। এই বছর ১৭ অক্টোবর সেটা যখন টাইমলাইনে আসলো, তখন আমি আবার পোস্ট করলাম। আমার ভালো লেগেছে যে মানুষ ভালো কথাও শোনে। আমরা বলি, নেগেটিভ হলেই ভাইরাল হয়। নেগেটিভ না করলে কাটতি আসে না। নেগেটিভ পাবলিসিটি অলরেডি স্ট্যাব্লিশড। আমার ভালো কথাগুলো তো মানুষ শুনেছে। জোর করে তো শোনাতে হয়নি। ভালো কথা যখন মানুষ শিখতে চায় তখন ভালো লাগে।
নেটিজেনদের উদ্দেশে কোনো পরামর্শ রয়েছে, বা কিছু বলতে চান?
আমার কাজ বিনোদন দেওয়া। মানুষকে আনন্দ দেওয়া। আমি যখন মঞ্চে উঠে গান করি সেটা যদি ভাইরাল হয়, তাহলে সেখানে আমার হাত থাকবে না। মানুষের কোনটা ভালো লাগবে না লাগবে সেটা তারা নির্বাচন করবে। আগে প্রচার প্রচারণা হতো একভাবে। এখন যুগটা পালটে গেছে। এখন অন্যভাবে হচ্ছে। তবে একটা ভালো কাজ যদি ভাইরাল হয়, ভালো হবে। আমি নেটীজেনদের উদ্দেশ্যে বলবো, ফোনের ব্যবহার বিষয়ে- কখন ফোন ব্যবহার করতে হবে কখন ফোন থামাতে হবে। সবখানেই ফোন ব্যবহার নয়। একটু কম কম ফোন ব্যবহার করুন। আর ফোনের ব্যবহারে দায়িত্বশীল হতে হবে। আপনার একটা ফোনের ব্যবহার (ফেসবুক পোস্ট) একটা মানুষের জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। জীবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এটা বুঝতে হবে- আমরা কেউই ভুলের উর্ধ্বে নই। কোনো ভালো-মন্দ বিচার করার আমরা কে?