পদ্মা সেতুতে সফলভাবে বসানো হলো আরো একটি স্প্যান। আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে ১৭তম স্প্যান ‘৪-ডি’ সেতুর ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারের ওপর স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো সেতুর দুই হাজার ৫৫০ মিটার বা আড়াই কিলোমিটারের অধিক।
এর আগে গত ১৯ নভেম্বর ১৬তম স্প্যানটি বসানো হয়েছিল। আবহাওয়াসহ সব কিছু অনুকূলে থাকায় মাত্র সাত দিনের মাথায় আজ সফলভাবে বসানো হয়েছে ১৭তম স্প্যান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সকাল ৯টায় শরিয়তপুর জেলার জাজিরা প্রান্তে সেতুর ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারের কাছে পদ্মার চর থেকে ভাসমান ক্রেনের মাধ্যমে তোলা হয় স্প্যানটি। নিয়ে যাওয়া হয় ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারের নির্ধারিত স্থানে। ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি বহন করে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেন।
বিগত স্প্যান বসানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে এ স্প্যানটিও বসানো হয় সফলভাবে। দুই পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে নিয়ে গিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে পজিশন করে এরপর নোঙর করা হয় ভাসমান ক্রেনটিকে। ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটি তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। সেতুর ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারের ‘৪-ই’ স্প্যানের সঙ্গে মিলিয়ে ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারের ওপর বসিয়ে দেওয়া হয় স্প্যান ‘৪ডি’। সকাল থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় স্প্যান বসাতে কোনো সমস্যা পেতে হয়নি বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের।
দায়িত্বশীল প্রকৌশলী জানান, ২২ ও ২৩ নম্বর খুঁটির জন্য তৈরি করা ‘৪ডি’ স্প্যানটি ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাছে প্লাটফরম তৈরি করে নদীর তীরে রাখা ছিল। কিন্তু নদীর চ্যানেলের নাব্যতার কারণে স্প্যানটি সেখান থেকে তুলে এনে স্থাপনে বিলম্ব হয়েছে। পলি জমে থাকায় নাব্যতা সংকটের কারণে ক্রেনবাহী জাহাজ খুঁটির কাছে পৌঁছতে পারছিল না। এ কারণে স্প্যান বসাতে বিলম্ব হচ্ছিল। তবে দিনরাত ড্রেজিং করে ওই এলাকায় নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়। আর আজ ভাসমান ক্রেনটি সেখান থেকে স্প্যানটি তুলে এনে পিলালের ওপর বসিয়ে দেয়।
এ ছাড়া, ৪ বা ৫ ডিসেম্বর ১৮ নম্বর স্প্যান বসানোর কথা রয়েছে। ১৮ নম্বর স্প্যানটি বসবে ১৭ ও ১৮ নম্বর খুঁটিতে। পরে ডিসেম্বরেই ২১ ও ২২ নম্বর খুঁটিতেও আরো একটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ৩৩-৩২ ও ৩১-৩২ নম্বর খুঁটিতেও স্প্যান বসবে অল্প সময়ের মধ্যে। খুঁটি ও স্প্যান তৈরি হয়ে যাওয়ায় অল্প সময়ের ব্যবধানে স্প্যান উঠতে থাকবে।
এদিকে, চীন থেকে আরও দুটি স্প্যান বাংলাদেশে পৌঁছেছে। সমুদ্রপথে ১৯ নভেম্বর বিকেলে স্প্যান দুটি মোংলা পোর্টে এসে পৌঁছায়। কাস্টমসের কাজ চলছে এখন। ৪/৫ দিন পরই এই দুটি স্প্যানও মাওয়ায় পৌঁছার কথা রয়েছে।
সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে এরইমধ্যে ৩৩টি খুঁটি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া আলোচিত ৭ নম্বর খুঁটির কাজ চলতি মাসেই শেষ হতে যাচ্ছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ৬ ও ৩০ নম্বর খুঁটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। বাকি ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাজ আগামী মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে এই সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে বলে ইতিপূর্বে সড়ক ও সেতু পরিপবন মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।