নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলাধীন বারদী ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের সুনামধন্য ভূইয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কু-চক্রি মহল ঈর্ষাণিত হয়ে ষড়যন্ত্রে নেমেছেন। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে ভূঁইয়া পরিবারের কর্ণধার ভূইয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুল জানান। ষড়যন্ত্রের কারনে এ পরিবারকে পিছু হটাতে পারবে না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের সালাউদ্দিন ভূইয়ার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় মানব সেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ভূইয়া ফাউন্ডেশন নামে এ পরিবার অসহায় মানুষের পাশে দাড়িঁয়েছেন। ভূইয়া ফাউন্ডেশনের বিনা মূল্যে চক্ষু চিকিৎসা, করোনা কালে অসহায় মানুষকে খাদ্য বিতরণসহ নানা কর্মসূচী পালন করছেন। সাধারণ মানুষ এ পরিবারের ভূমিকা নিয়ে সন্তুুষ্ট।
এলাকাবাসী জানান, বারদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী নির্বাচনে বারদী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরুল হকের প্রতিদ্বন্দী হওয়ার কারনে এ পরিবারকে বিএনপি পরিবার বলা হচ্ছে। বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল হকই ২০০১ সালে অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করেন। ওই সময়ে রেজাউল করিমের ছত্রছায়ায় আওয়ামীলীগ পরিবারের লোকজনকে হয়রানীসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন জহিরুল হক। ওই সময়ে বারদী ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি বলেও নিজেকে জাহির করতেন। পরবর্তীতে কায়সার হাসনাত আওয়ামীলীগের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ভোল পাল্টান জহিরুল হক।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, চেয়ারম্যান জহিরুল হক বারদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে হাবু ডাকাতকে সঙ্গে নিয়ে মেম্বারদের একটি সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন এলাকায় জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। এতে করে তার জনপ্রিয়তায় ধস নামে। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভূইয়া পরিবারের কর্ণধার লায়ন মাহবুবুর রহমান ভূইয়া বাবুল চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার কারনে ঈর্ষাণিত হয়ে সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করিয়ে সম্মান ক্ষুন্ন করতে চায় কু-চক্রিমহল।
সংবাদে গোয়ালপাড়া গ্রামের নূরুল হকের কাছে ওই পরিবার টাকা দাবি করেছে বলে উল্লেখ করেন এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান নূরুল হক ও তার পরিবারের লোকজন। আয়াত আলীর ছেলে কাজী রুবেল জানান, তাদের বাড়িতে ভূইয়া পরিবার নাকি দেয়াল নির্মাণ করেন। এটি আসলে সত্য নয়। আমার বাবার সাথে সাংবাদিকদের কোন কথা হয় নি। আমার বাবা ঢাকা থাকেন। মাহবুব সিকদারের ভাই রিপন সিকদার জানান, সংবাদে ভূইঁয়া পরিবারের লোকজন তাদের বাড়ি ঘর ভাংচুরের কথা বলেছে এটি সম্পূর্ন মিথ্যা। আমাদের কোন বাড়িঘর ভাংচুর হয় নি।
মো.শরিফ কাজী জানান, লায়ন বাবুল এলাকার সকল ধরনের সামাজিক কাজ করে। তিনি ও তার ভাইয়েরা এলাকার সকলের সাথে মিলে মিশে থাকে। এলাকার গরীব দু:খী সবার খোঁজ খবর নেয় তারা। তাদের বিরুদ্ধে এ কুচক্রিমহল কাজ করছে। সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে সমাজে তাদের হেয় করছে। এলাকার বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ বয়সী নারী বলেন, লায়ন বাবুল অনেক ভাল মানুষ। তারা এলাকায় দান খয়রাত করে। লায়ন বাবুলের মত লোক প্রতিটি এলাকায় থাকা উচিত।
ভূইয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো: আমিনুল ইসলাম ভূইঁয়া জানান, আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান। আমাদের পরিবার আওয়ামী পরিবার। আমরা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমরা সব সময় এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়েছি। সাধারণ মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছি। এ রাজনীতির কারণে আমি নিজে সন্ত্রাসী হামলায় শিকার হই। আমার ভাই লায়ন বাবুল ও আমাদের পরিবারকে নিয়ে সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে যে সংবাদ পরিবেশন করেছে আসলে ওই সংবাদটি পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা এ সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
আওয়ামীলীগ নেতা লায়ন মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বাবুল বলেন, আমরা আওয়ামীলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের লোক। আমি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী ফজলে নূর তাপসের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়াও ঢাকা-৫ আসনের আওয়ামীলীগের প্রার্থী কাজী মুনিরুল ইসলাম মনুর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে ছিলাম। আমি আওয়ামীলীগ না করলে আমাকে এসব গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব দেওয়া হতো না। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সোনারগাঁওয়ের আওয়ামীলীগের সকল কর্মসূচীতে আমি অংশ গ্রহন করি। তিনি বলেন, আমাকে সংবাদে বিএনপি বিএনপি বলা হয়েছে। আমাদের পরিবারে কেউ বিএনপি রাজনীতিতে নেই। কেউ যদি প্রমান দেখাতে পারে তাহলে আমি মাথা পেতে নেব। তিনি আরো বলেন, আমার ও আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে যে সংবাদ পরিবেশন করেছে সাংবাদিকদের মিথ্যা ও ভূল তথ্য দিয়ে । এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদেরকে সমাজে হেয় করা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ বিনামূল্যে চক্ষুসেবা করেছেন ভূইয়া ফাউন্ডেশন। ১৯৯৬ সালে বারদী রিভার গার্লস হাই স্কুলে এ কে শামীম ওসমান এমপির ছায়াতলে আসেন লায়ন মাহাবুবুর রহমান বাবুল ও তার পরিবার। গত সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মোশারফ হোসেন বিজয় করার লক্ষে অগ্রনী ভুমিকা রাখেন। যেখানে বারদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল হক ও তার পরিবারসহ বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচন করেন। জামপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে একটি সভায় নৌকার বিপক্ষে জোরালু বক্তব্য রাখেন এবং বলেন যে আমি জহির চেয়ারম্যান বারদী ইউনিয়নে যা বলি তাই হয়, এমনকি বারদী ইউনিয়নে কোন কেন্দ্র নৌকার পক্ষের এজেন্টই থাকতে দিবো না। তারই ধারাবাহিকতায় বারদী ইউনিয়নে ৪নং ওয়ার্ডে নৌকার প্রার্থী বিজয় হওয়ার জহির চেয়ারম্যানের সেকেন্ড ইন কমান্ড নামে পরিচিত হাবু মেম্বার মান্দারপাড়া গ্রামের নৌকার পক্ষে ভোট দেওয়ার কারনে দুই শত ঘর বাড়ি ভাঙচুরসহ লুটপাট করেন। ওই ঘটনায় প্রায় ১৫ জনকে আহত হয়। ঘটনার পরের দিন উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী অফিসার,ওসি ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন।
সূত্রে আরো জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা সময়কালিন মুক্তিযোদ্ধার অন্যতম সংগঠক প্রয়াত সাজেদ আলী মিয়া, প্রয়াত এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক হোসেন এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমান সোনারগাঁও থানা আওয়ামীলীগের আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা এড.সামসুল হক ভূঁইয়াসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধার গোপন মিটিং করেন এবং মুক্তিযোদ্ধের সুসংগঠিত করেন। সে সময় ভূইয়া পরিবারের ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সু সংগঠিত করার করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা,খাওয়া এবং আর্থিকসহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে ছিলেন। ২০১৬ সালে ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সোনারগাঁও উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান হয় লায়ন মাহাবুবুর রহমান বাবুলের নিজ গ্রাম গোয়ালপাড়ায়। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক।
এদিকে ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১৫ বছর যাবৎ বারদী ইউনিয়নে বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা,কবরস্থান,স্কুল,রাস্তাঘাটের উন্নয়নে অবদান রয়েছে এবং চলমান রয়েছে। এছাড়া ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১৫ বছর যাবৎ প্রতি রমজান মাসে ৫ হাজার পরিবারে মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করে আসছে। করোনাকালে ৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরন করেন।