সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, এরআগে কানাডার আদালতে রায় দেয়া হয়েছিল বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল, সে ব্যাপারে বিএনপি বিভিন্ন সময় এর প্রতিবাদে বক্তব্য দিয়েছিল। বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করছে, যারা দেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। আজকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে যারা ক্ষমতায় থেকে মানুষ মারার নেশায় মেতে উঠেছিল, যারা একদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে হত্যা করার পরও যাদের তৃপ্তি মিটে নাই, যারা মানুষের কন্ঠস্বরকে চিরতরে স্তব্দ করে দেবার জন্য আজকের দিনের সেই দিন ২১ আগষ্ট সবচেয়ে ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটেছিল আজ আদালত সেই মামলার রায় দিয়েছে। আমাদের মধ্যেও কেউ হয়তো খুশি হয়েছেন আবার কেউ পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেন নাই। ঘটনার পুরোপুরি মূল নায়ক ছিল খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান। শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনা এখনো বাংলার মানুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, বাংলার মানুষ যাতে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারে সেজন্য স্বপ্ন দেখে। ২০ বার এ এতিম মহিলাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০ বারের সময় ২১শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা ঘটিয়েছে। ১৭টি গ্রেনেড একের পর এক নিক্ষেপ করা হয়েছে। যে ট্রাকের উপর দাড়িয়ে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা মানবতা, সন্ত্রাক ও হত্যা বিরোধী সভা করছিলেন সে জনসভায় ৩টি গ্রেনেড সেই ট্রাকের সাথে বারি খেয়ে নিচে গিয়ে বিষ্ফোরিত হয়। সেময় সাথে সাথে ২৪ জন মানুষ মারা যায় যার মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানের কোমরের নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম এ ঘটনার নায়ক তৎকালীন সরকার। আর তারা এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল। তখন খালেদা জিয়া বলেছিল শেখ হাসিনা নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে এসেছিল।
বুধবার ( ১০ অক্টোবর ) বিকালে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের (নাসিক) সিদ্ধিরগঞ্জের ৪নং ওয়ার্ডের শিমরাইল তাজ জুট মিলের বালুর মাঠে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাসিক ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসানের সভাপতিত্বে উক্ত উঠান বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: মজিবুর রহমান, জাতীয় শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাষ্টার, থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মো: ইয়াসিন মিয়া, নাসিক ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ মতিউর রহমান মতি প্রমূখ।
এসময় সাংসদ শামীম ওসমান আরো বলেন, আজকে কি হলো, রায়তো আওয়ামীলীগ দেয় নাই, দীর্ঘদিন আদালতে মামলা পরিচালিত হয়েছে। রায় যদি সরকারের নির্দেশে হত তাহলে সবার আগে ফাঁসি হত তারেক রহমানের। রায় সরকারের নির্দেশে হয় নাই, সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে হয়েছে। তাহলে আজ সচেতন মানুষের কাছে আমার প্রশ্ন? যেদেশে বিরোধী দলের নেত্রীকে, একটা দেশের জাতির জনকের কন্যাকে, একটা দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এবং আওয়ামীলীগের সকল নেতাকে একসাথে হত্যার চেষ্টা চালায়, সে দলকে কি আমরা সন্ত্রাসী দল বলতে পারি না? এইখানে যদি আজ কেউ বোমা মারে এবং অনেকগুলো লোক যদি মারা যায়, আর যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে কি আমরা সন্ত্রাসী বলতে পারবো না? তাহলে সেদিন যারা গ্রেনেড মেরেছিল তাদেরকে তো সন্ত্রাসীই বলা চলে।
তিনি আরো বলেন, আমার দাবী হচ্ছে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা উচিত এবং বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য বিচার হওয়া উচিত। তৎকালিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ফাঁসির রায় হয়েছে, ডিজিএফআইয়ের প্রধান ও এনএসআইয়ের প্রধানের ফাঁসির রায় হয়েছে। এ ঘটনায় রাষ্ট্রকে ব্যবহার করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের স্ট্যাটমেন্ট দেখলাম, ওনি বলেছেন, আমাদের নেত্রী নাকি ঐসময় বলেছিলেন সেনাবাহিনীর একটি অংশ জড়িত, আজকে নাকি আমরা বলছি তারেক রহমানের কথা। ফখরুল সাহেব রায় পড়েন এবং দেখেন। আমরাও পত্রিকা দেখেই বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৎসাহস ছিল, জেলখানায় বসেও বলেছিলেন যে সেনাবাহিনীর একটি অংশ এই ঘটনার সাথে জড়িত, আদালতের রায়ে তাই প্রমান করছে। ডিজিএফআই কি সেনাবাহিনীর বাইরে? এনএসআইয়ের প্রধান মেজর জেনারেল রেজ্জকুল হায়দার কি সেনাবাহিনীর বাইরে? তাহলে তো নেত্রীর কথা প্রমানিত হয়। অর্থাৎ আপনারা কত নিচু পর্যায়ে নেমেছিলেন, যে সুশৃঙ্খল বাহিনী, আমাদের অহংকার ও গর্ব, পৃথিবীতে যে সেনাবাহিনী আমাদের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনছে, সেই সেনাবাহিনীকে আপনারা সেইখানে আবারো যেই ৭৫-এ তারেকের খুনি বাবা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যে থেকে আড়ালে বসে কলকাঠি নেড়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের এদেশে প্রতিষ্ঠিত করে গোলাম আজমকে নাগরিকত্ব দিয়েছিল, শাহ আজিজের মত একজন রাজাকারকে প্রধানমন্ত্রী এবং আলীমকে শিক্ষামন্ত্রী বানিয়েছিল এবং সেইদিন একই ভাবে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু সেনাহিনীকে ব্যবহারই নয় এই দিন হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা এবং বিমান বাহিনীর হাজার সদস্যকে হত্যা করেছিল জিয়াউর রহমান। তার সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমান প্রমানিত হয়েছে সেই দিন সেনাবাহিনীকে এবং পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই দলের বিরুদ্ধে আমাদেরকে ভোট চাইতে হবে কেন? আপনাদেরকে বলতে হবে না যে আপনারা এই সন্ত্রাসী দলের পক্ষে থাকেন, কারন আপনারাতো সৃষ্টির সেরাজীব মানুষ। আপনাদের বিবেক রয়েছে। আমি মনে করি আপনাদের বিবেক অনেক জাগ্রত। আমি আপনাদের বিবেকের দরজায় কড়া নাড়তে এসেছি। আপনাকেই পছন্দ করতে হবে। দেশ কোথায় ছিল এখন কোথায় আছে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সিদ্ধিরগঞ্জ পৌর প্রশাসক আব্দুল মতিন প্রধান, বিশিষ্ট শিল্পপতি জালাল আহম্মেদ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, প্রচার সম্পাদক তাজিম বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, নাসিক ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল বাদল, ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন, সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হক খোকা, আওয়ামীলীগ নেতা আনোয়ার ইসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, শিমরাইল ট্রাক কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক নাসিম মাহমুদ তপন , সাবেক ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক তামিম ইসলাম জয়, থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জহিরুল হক এবং এইচ এম শাহজালালসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী প্রমূখ।