নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নবনির্বাচিত সহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আড়াইহাজারের মাহমুদুর রহমান সুমন।
এই সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সুমনকে আওয়ামী লীগের দালাল দালাল বলে ধাওয়া করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং গাড়ি ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের রোষানালে পরে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান সুমন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণের দাবিতে সাইনবোর্ডস্থ পাসপোর্ট অফিসের সামনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে যাওয়ার পথে সুমনকে দেখে বিক্ষুব্ধ কিছু নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের দালাল দালাল বলে ধাওয়া করে ।
তারা আরও জানান, বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের দালাল দালাল আওয়াজ শুনে মাহমুদুর রহমান সুমন দৌড়ে নিজের গাড়িতে উঠে পড়েন। এই সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সুমনের গাড়িকে বেরিকেট দিয়ে রাখেন এবং দালাল দালাল বলে শ্লোগান দেয়। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এই সময় সুমনকে গাড়ি থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করে কিন্তু সুমন গাড়ির ভিতরে বসে থাকার পরে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সুমনের গাড়ির উপরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় সুমন দ্রুতই গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
এবিষয়ে জানতে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আড়াইহাজারের মাহমুদুর রহমান সুমনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জানাগেছে, গত শুক্রবার ৬ সেপ্টেম্বর রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ এর টকশোতে আড়াইহাজারের রাজনীতি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ -২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও বিএনপির নবনির্বাচিত সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন আলোচনায় অংশ নেন।
সেই টকশোতে এমপি নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আড়াইহাজারে কোনো একটি রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা হয়নি। মামলা হয়েছে অপরাধীদের বিরুদ্ধে। কোন রাজনৈতিক নেতা বা দলের বিরুদ্ধে না। সুমন সাব বিএনপির একজন সাহসী প্রার্থী। উনার বিরুদ্ধে কোন একটি মামলা হয়নি।
টকশোতে নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, উনি (সুমন) সাহেব বলেছিলেন ঈদের সময় উনি এলাকায় গিয়েছিলেন উনার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল। সেই সময় আমি হজ্জে ছিলাম। সুমন সাহেব আমাকে ফোন দিয়েছিল মামলার বিষয় নিয়ে কেন উনার বিরুদ্ধে মামলা হলো। আমি তাৎক্ষণিক এসপি সাহেবের সাথে কথা বলেছি। এসপি সাহেব আমাকে বলল ওনার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটি তাদের দলীয় অভ্যন্তরী কোন্দল।
এমপি বাবু টকশোতে আরও বলেন, আমি সেটাকে তাৎক্ষণিক এসপি সাহেবকে বলেছিলাম উনি তো কেন্দ্রীয় নেতা উনি তো সেখানে গ্যাঞ্জাম করে নাই। উনাদের কর্মীরা কর্মীরা করেছে। মামলায় যেন সুমন সাহেবের নাম না আসে। এবং মামলা না নিয়ে ওনার ওনারা মিলে যাক। একজন এমপি হিসাবে এটি আমার নৈতিক দায়িত্ব। পরে কিন্তু আর কোন মামলা হয়নি।
এসময় টকশোতে মাহমুদুর রহমান সুমন বলেন, মামলা আমার বিরুদ্ধে আছে, জবাবে এমপি নজরুল ইসলাম বাবু বলেন আমি খবর নিয়েছি উনার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।
সুমন আবার বলেন, ঈদের পরে আমি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কৌশল বিনিময় করতে বাড়িতে গিয়েছি। সেইদিন রাতে আমার বিরুদ্ধে গায়েবি ও নাশকতার উদ্দেশ্যে মামলা হয়।
তখন উপস্থাপক সুমনকে প্রশ্ন করেন যে আপনার বিরুদ্ধে কয়টি মামলা রয়েছে, উত্তরের সুমন বলে সেটা আমি নাইবা বললাম। তারপরও উপস্থাপক বলেন বলতে আপনার অসুবিধা কোথায় ।
এরপর সুমন আবার বলেন বিএনপির ৫০লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা । তখন আবারো উপস্থাপক বলে আপনার আড়াইহাজার কয়টা মামলা।
এরপরও উপস্থাপকের প্রশ্নের উত্তরের জবাব না দিয়ে আবারো এড়িয়ে যান সুমন।
এদিকে টকশোতে আওয়ামী লীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলায় বিষয় নিয়ে এমন মিথ্যাচার করেছে বলে অভিযোগ করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা কিন্তু সুমন টকশোতে থেকেও এর কোন প্রতিবাদ করেনি। বরং তিনি মুখ বুজে সব কথা হজম করেছেন। আর এতে করেই মাহমুদুর রহমান সুমনের উপর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ সৃষ্টি হয় ।
আর এই টকশো দেখার পর থেকে নারায়ণগঞ্জে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মাহমুদুর রহমান সুমনকে আড়াইহাজারের আওয়ামী লীগের এমপি বাবু দালাল বলে আখ্যায়িত করেন এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশেই আজকে তার উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে।
দলীয় নেতাকর্মীদের সূত্র জানায়, আড়াইহাজারে ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা বিরুদ্ধে ৫০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। সেই মামলা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ- সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদসহ আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছেন। মামলাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বাড়িঘর পরিবার পরিজন ছেড়ে পালিয়ে বেরিয়েছিলেন।
তাঁরা আরও জানায়, মাহমুদুর রহমান সুমন স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবু ছাত্রছায়ায় আড়াইহাজারে বিএনপির রাজনীতি করছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে নেই তেমন কোন রাজনৈতিক মামলা। এমপি বাবুর আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে সুমন তিনি আড়াইহাজারে বিএনপি রাজনীতি করছেন। চ্যানেল ২৪ এর টকশোতে এমপি বাবু তা প্রমাণ করেছেন। যারা আওয়ামী লীগের সাথে লিয়াজু করে বিএনপির রাজনীতি করে এমন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আড়াইহাজার বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।