সিজারের কারণে দেশে অপরিণত (প্রি-ম্যাচুরিটি) শিশু জন্মের হার দিন দিন বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ও অব্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. কামরুন নাহার জুঁই।
গতকাল শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে রংপুর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিশ্ব প্রি-ম্যাচিউরিটি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রিসোর্স পারসন জুঁই বলেন, দেশের বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোতে জন্ম নেওয়া শিশুর শতকরা ৮০ ভাগই সিজার করা হয়। এতে অপরিণত শিশুর জন্ম রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সাথে মাতৃ মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে রংপুর জেলা সিভিন সার্জন ডা. হিরম্বর কুমার রায় বলেন, প্রতিবছর সারা বিশ্বে এক কোটি ৫০ লাখ অপরিণত শিশু জন্মগ্রহণ করে, অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে একজন অপরিণত শিশু জন্ম নিচ্ছে। এদের মধ্যে এক লাখ শিশু জন্মের পরই মৃত্যুবরণ করছে। কেবল অসচেতনতা, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে এবং পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্বন্ধে অজানার কারণে এই সমস্যা প্রকট হচ্ছে।
অপরিণত শিশু জন্ম হয় এমন ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান সপ্তম উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, সারা বিশ্বে সকল দেশে অপরিণত শিশুর জন্ম হার বেড়ে গেছে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বিশ্বের শতকরা ৮১ ভাগ অপরিণত শিশু জন্মগ্রহণ করে। এর মধ্যে বাংলাদেশে শতকরা ১৯ ভাগ শিশুর জন্ম হচ্ছে অপরিণত অবস্থায়।
বর্তমান সরকার অপরিণত শিশু মৃত্যু প্রতিরোধ করার জন্য ক্যাংগারু মাদার কেয়ারসহ শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। জনগণকে অপরিণত শিশুর জন্মের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি গ্রাম পর্যায়ে নিরাপদ প্রসবের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে নবজাতকের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে বলেও জানান আগত চিকিৎসক ও রিসোর্স পারসনরা।
পরিবার পরিকল্পনার অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মোজাম্মেল হক বলেন, সন্তান গর্ভধারণের সাড়ে আট মাসের আগে অর্থাৎ ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশুর জন্মই অপরিণত। এর মধ্যে ২৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশুর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু আমাদের দেশে ইদানিং সিজারের কারণে অপরিণত শিশুর জন্ম বাড়ছে। এ কারণে অপরিণত শিশু জন্মজনিত জটিলতায় অধিকাংশ শিশুর মৃত্যুবরণ করছে।
আজ রবিবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ব প্রি-ম্যাচিউরিটি দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ: সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে সঠিক সেবা প্রদান’। দিবসটি ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশে পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটি সম্পর্কে জনসচেতনা বাড়াতে ‘বর্ন অন টাইম প্রকল্প’র আওতায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র কারিগরি সহায়তায় ল্যাম্ব প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। এতে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র বর্ন অন টাইম প্রকল্প’র ব্যবস্থাপক ডা. আরিফিন অমল ইসলাম, বার্ন অন টাইম প্রকল্পের ল্যাম্প’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম মণ্ডল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ও অবস্ বিভাগের চিকিৎসরা উপস্থিত ছিলেন।