নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান আপসোস প্রকাশ করে বলেছেন, আমার অনেক ইচ্ছা ছিল এই আসনে বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি আমার বড় ভাই কালাম সাহেবের সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্ধীতা করবো। নির্বাচনে যদি হেরেও যেতাম তবুও একটা ইজ্জত থাকতো। কিন্তু এটা হলো না। এখন ধানের শীষ মার্কায় যিনি প্রার্থী হয়েছেন সেই ধানের শীষ বেগম খালেদা জিয়ার ধানের শীষ নয়। উনি বাংলাদেশের ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী আমি উনাকে সম্মান করি। বিএনপির অনেক নেতা আছেন যাদের আমি সম্মান করি। যিনি প্রার্থী হয়েছেন উনার কোন চরিত্রই নাই। তিনি একবার নৌকা মার্কায় এমপি হয়েছেন। শুধু তাই নয় দীর্ঘ সময় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। এরপর আওয়ামীলীগ ছেড়ে ফরমালিন মার্কা আনারস নিলেন। সেই আনারস এখন চিটা ধান হয়ে এসেছে। যারা ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন উনারা মাইনাস খালেদা জিয়া ফর্মুলা নিয়ে নেমেছেন।
বুধবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বন্দরের ২৩, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ড এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত মহান বিজয় দিবস ১৬ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
যার মধ্যে ২৩নং ওয়ার্ডের সরকারী কদম রসুল কলেজ মাঠ, ২৫নং ওয়ার্ডের লক্ষণখোলা মাঠ এবং ২৬নং ওয়ার্ডের কুড়িপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উক্ত আলোচনা সভা গুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল ৩টায় কদমরসুল কলেজ মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল। উক্ত আলোচনা সভা গুলোতে এমপি সেলিম ওসমান উপস্থিত এলাকার প্রায় ১২-১৫ হাজার মানুষের সাথে সরাসরি এলাকার উন্নয়ন ও অতীত ভুল ভ্রুটি এবং ভবিষ্যত করনী সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
আলোচনা সভা গুলোতে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ্যে করে সেলিম ওসমান আরো বলেন, বাংলাদেশের সাথে বেঈমানী করা একজন হচ্ছেন মীর জাফর, আরেকজন হচ্ছেন মোস্তাক এবং বর্তমান মানে নব্য বেঈমানের নাম ড. কামাল হোসেন। বাংলাদেশের মানুষ যেমন তাদের সন্তানদের নাম মীরজাফর, আর মোস্তাক রাখেন না। পবিত্র হজ্জে শয়তান তাড়াতে যেমন শয়তানকে উদ্দেশ্য করে ঢিল ছুড়তে হয়, তেমনি ভবিষ্যতে কেউ কামাল হোসেন এবং তার চামচাদের নামও নারায়ণগঞ্জে কেউ রাখবে না।
তিনি আরো বলেন, এই নারায়ণগঞ্জে এক সময় আওয়ামীলীগ মানে খান সাহেব ওসমান আলীর আওয়ামীলীগ, এরপর একেএম শামসুজ্জোহার আওয়ামীলীগ, বর্তমানে শামীম ওসমানের আওয়ামীলীগ। এক সময় নারায়ণগঞ্জ বিএনপি মানেই জালাল হাজী সাহেবের বিএনপি, এরপর কালাম সাহেবের বিএনপি। আমার দাদা, বাবা, বড় ভাই, জালালী হাজী সাহেব উনারা এই এলাকার এমপি ছিলেন। উনারা মারা গেছেন উনাদের আত্মার মাগফেরাতের জন্য আপনারা দোয়া করবেন। শুনেছি কালাম সাহেব নিজেও অসুস্থ্য উনার জন্য আপনারা দোয়ার করবেন উনি যেন দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠেন।
সকলকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা কারো কোন কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। এলাকার জনগন আমার সাথে আছেন, আওয়ামীলীগের তৃনমূলের নেতাকর্মীরা আমার সাথে আছেন, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা আমার সাথে আছেন আর আমি আশা রাখি বিএনপির ভোটও সব থেকে বেশি আমিই পাবো। বিজয় আপনাদের সুনিশ্চিত।
তিনি বলেন, আপনারা যাদেরকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন অতীতে আমি তাদের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন করেছি। কিন্তু ভবিষ্যতে আমি শুধু উনাদের কথায় নয় উনাদের মাধ্যমে আপনাদের সাথে আলোচনা করে আপনাদের চাহিদা মত এলাকার উন্নয়ন কাজ গুলো করবো। প্রতি এলাকায় গিয়ে আমি আপনাদের সাথে সরাসরি কথা বলতে চাই। আমি আবারো আপনাদের গোলামী করতে চাই। আমি আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি , বিএনপি বুঝি না। আমি শুধু উন্নয়ন বুঝি। শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব করতে পারি। তাদের সাথে নিয়েই কাজ করতে চাই। কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যেখানে নৌকা নেই সেখানেই লাঙল আছে। তিনি বলেছেন তোমার প্রতি আমার আস্থা আছে। তুমি নারায়ণগঞ্জে ছিলে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য তোমাকেই কাজ করতে হবে। আর তাই এবারে আপনাদের সামনে এসেছি।
অতীত ভুল ভ্রান্তি জানতে গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকায় বুধবারও তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মঞ্চে এসে বক্তব্য রাখার আহবান রাখেন এবং এলাকার সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। শিক্ষিত তরুণ তরুণীকে ডেকে নিয়ে আগামী দিনে তাদের জন্য দিক নির্দেশনামূলক কথা বলেন। তাদেরকে পরিশ্রম করার নির্দেশনা দেন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে তরুণ প্রজন্মের শ্রমই সবথেকে বেশি কাজে লাগবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এজন্য এলাকার তরুণ ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে এলাকার বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় মঞ্চে নব্বই উর্ধো পুরুষ মুরুব্বি, একাধিক মধ্য বয়স্কা মহিলা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের বেশ কয়েকজন তরুন-তরুনী বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমানের গত ৪ বছরের সাথে অতীতের ২০ বছরের কর্মকান্ডের তুলনায় পেছনে ফেলেছেন। সেই সাথে আগামী প্রজন্মের উজ্জল ভবিষ্যত গড়তে এমপি সেলিম ওসমানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে আগামীতে আবারো তাঁকে লাঙ্গল প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয় করতে ৭০ হাজার নতুন ভোটারের প্রতি আহবান রাখেন তরুণ প্রজন্মের বক্তারা।
মত বিনিময় সভা গুলোতে আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী, বিকেএমইএ এর প্রথম সহ সভাপতি মনসুর আহম্মেদ, পরিচালক আল আমিন হোসেন, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ রশিদ, জেলা পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন, মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রফেসর শিরীন বেগম, সাধারণ সম্পাদক ইফাত জাহান মায়া, মহানগর মহিলা আওয়ামীলীগে সভানেত্রী ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহম্মেদ সাগর, ফয়সাল, ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনায়েত হোসেন, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা, ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবুল, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, বন্দর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছালিমা হোসেন শান্তা, সাধারণ সম্পাদক সখিনা বেগম সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও গন্যমান্য ব্যক্তিরা।