নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ( ২৮ সেপ্টেম্বর ) সকাল ১১টায় থেকে বিকেল চারটায় পর্যন্ত চাষাড়া শ্রী শ্রী গোপাল জিউর মন্দিরে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় জানানো হয় এবারে নারায়ণগঞ্জের ২২৪টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে পূজা মণ্ডপ গুলোর প্রতিনিধিগণ আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব আয়োজনে স্ব স্ব মন্ডপের সুবিধা ও অসুবিধাসমুহ আগত নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরেন। দুর্গোৎসবের পূর্বেই সকল সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন পূজা পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শংকর কুমার দে’র সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের নারী সদস্য শ্রীমতি সীমা পাল শিলা, বিশেষ অতিথি এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, পানামা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল পোদ্দার, নারায়ণগঞ্জ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি পরিতোষ কান্তি সাহা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব চক্রবর্তী, মহাতীর্থ লাঙলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিষ্ণুপদ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সুশীল দাস।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। এই দেশে সংখ্যালঘু বলে কিছু নেই। আমরা নারায়ণগঞ্জ শহরে সকল ধর্ম মতের মানুষ একসাথে মিলেমিশে বসবাস করি, বিভিন্ন উৎসব পার্বণে একসাথে আনন্দ ভাগাভাগি করি। তাই আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবেও সকলে একসাথে মিলেমিশে আনন্দ করবো সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
তারা আরো বলেন, সামনে নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি অসাধু চক্র দেশে সাম্প্রদায়িক সংহতি নষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত হবে। আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে যাতে করে সেই অপশক্তি তাদের আঘাত হানতে না পারে। অসম্প্রদায়িক নারায়ণগঞ্জে সকলে ধর্মের সকল মতের মেলবন্ধন ঘটবে সেই প্রত্যাশায় সকলকে আগাম শারদীয় শুভেচ্ছা।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন লক্ষীনারায়ণ পূজা মন্ডপে এবারে দুর্গাপূজা আয়োজন নিয়ে বক্তারা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জের একটি চিহ্নিত ভূমিদস্যু পরিবার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী লক্ষীনারায়ণ পূজা মন্দিরটি ভেঙে ফেলেছে। আমরা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি, পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে জানিয়েছি আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান করতে কিন্তু যদি তা না হয় তাহলে আমরা এ বিষয়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি সভায় যোগ দিতে সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থানা থেকে পূজা মন্ডপের নেতৃবৃন্দ চাষাড়া এসে উপস্থিত হন এবং দীর্ঘ সময় বসে থেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব সকল করতে ভূমিকা রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দুর্গোৎসবের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে নির্দেশনা দেয়া হয়, সেই সাথে নিজস্ব ভলান্টিয়ার নিয়োগের জন্য প্রতিটি মন্ডপে পরামর্শ দেয়া হয়। যে কোন প্রকার গুজবে কান না দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সদা সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য মন্ডপ কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়। আলোচনা সভার শেষে সবার জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় মুসলমান ধর্মের পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান পূজা পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
সবশেষে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭ তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান ও তার জামাতার সুস্থতা কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
মত বিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ মন্ডল, মহানগরের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দে, জেলা পূজা পরিষদ নেতা সাংবাদিক উত্তম কুমার সাহা, ফতুল্লা থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রদীপ মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক শিবু দাস, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, সাধারণ সম্পাদক খোকন বর্মন, বন্দর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের শংকর দাস, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, সোনারগাঁ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লোকনাথ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক এড. প্রদীপ ভৌমিক, রূপগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গনেশ পাল, আড়াইহাজার উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হারাধন চন্দ্র দে, পূজা পরিষদ নেতা গনেশ সাহা, হিমাদ্রী সাহা হিমু, শংকর কুমার দাস, তপন গোপ সাধু, কৃষ্ণ আচার্য, তপন দে, দুলাল দাস, রিপন রুদ্র, পংকজ রায়, বিধু হালদার, সুজন বিশ্বাস, অভিরাজ সেন, বিক্রম দাস, তিলোত্তমা দাস, চঞ্চলা বর্মনসহ বিভিন্ন পূজা মন্দিরের নেতৃবৃন্দ।