নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি ১৭ ঘন্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসির উদ্ধারকারী জাহাজ বেলা ১২টার দিকে লঞ্চটি উদ্ধার করে। ডাঙায় তোলার পর একে একে বের করা হয় শিশু-নারীসহ ২৩টি লাশ।
এর আগে গত রোববার রাতে ৫ জন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। সন্ধ্যা পযন্ত উদ্ধারকৃত মোট লাশের সংখ্যা ২৮। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক দুপুর সোয়া একটায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন। লাশ উদ্ধারের পর স্বজনদের আহাজারীতে শীতলক্ষ্যা পাড়ের বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে মালবাহী কার্গোর ধাক্কায় রোববার সন্ধ্যায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে এমএল সাবিত আল হাসান নামে একটি লঞ্চ মুন্সীগঞ্জ যাওয়ার সময় ডুবে যায়।
সোমবার (৫ এপ্রিল) উদ্ধারকারী জাহাজের মাধ্যমে লঞ্চটি টেনে তুলে এর মধ্য থেকে ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আগেরদিন রাতে ৫ জন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। উদ্ধার করা লাশের মধ্যে নারী ও শিশুই বেশি। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগ মরদেহের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। এছাড়াও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও মিরপুরেরও রয়েছেন।
নিহতরা হলেন-রুনা আক্তার (২৪), সোলেমান বেপারী (৬০), বেবি বেগম (৬০), সুনিতা সাহা (৪০), বিকাশ সাহা (২২), অনিক সাহা (১২), আনোয়ার হোসেন (৫৫), মাকসুদা বেগম (৩০), ছাউদা আক্তার লতা (১৮), সখিনা (৪৫), বিথি (১৮), আরিফা (১), প্রতীমা শর্মা (৫৩), শামসুদ্দীন (৯০), রেহেনা বেগম (৬৫), হাফিজুর রহমান (২৪), তাহমিনা (২০), আব্দুল্লাহ (১), নারায়ণ দাস (৬৫), পাবর্তী রানী দাস (৪৫), ইউসুফ কাজী (৪৪), সোহাগ হাওলাদার (৩৫), আব্দুল খালেক (৭০), জিবু (১) খাদিজা বেগম (৫০), নয়ন (১৯) ও সাদিয়া (১৮)। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন- মানসুরা (৭), তানভীর হোসেন হৃদয় (১৭), রিজভী (২০), জাকির (৪৫)।
রোববার সন্ধ্যায় প্রায় ৭০ জন যাত্রী নিয়ে সদর উপজেলার সৈয়দপুর এলাকায় কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চটি যুবে যায়। প্রায় ১৭ ঘণ্টার চেষ্টায় লঞ্চটিকে ডাঙ্গায় তোলা হয়। দুপুরে বিআইডাব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে লাশের খোঁজ চালিয়ে যায়।
গত রোববার সন্ধ্যা থেকে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে শীতলক্ষা নদীর পাড়ে স্বজনদের ভীড় বাড়তে থাকে। তাদের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে উঠে। স্বজনদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ৩৩ জন নিখোঁজের একটি তালিকা প্রকাশ করে প্রশাসন। পরে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ২৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা লাশের মধ্যে নারী ও শিশুই বেশি।
এদিকে লঞ্চডুবির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহতের প্রত্যেকের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা করা হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ বারিক জানান, স্বজনদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ৩৩ জন নিখোঁজের একটি তালিকা করা হয়েছে। দুপুরে উদ্ধার হওয়া ২৭ জনের মধ্যে ২৪ জনকে সনাক্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা করা হয়েছে।
লঞ্চডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নিহতদের একটি তালিকা করা হয়েছে। লঞ্চডুবির ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বিকালে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে সাবিত আল হাসান। সৈয়দপুর এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষা সেতুর পাইলিং কাছে একটি কার্গো জাহাজ তাকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়। লঞ্চ থেকে সাতরিয়ে কেউ কেউ উঠতে পারলেও অনেকেই লঞ্চের সাথেই তলিয়ে যায়।
মন্ডলপাড়া ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আরেফিন জানান, জাহাজটি থেকে সব লাশ বের করা হয়েছে। দুপুরে উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হলেও বিকাল পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল কাজ করেছে। এদিকে.বিআই ডব্লিউটির পরিচালক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক মোঃ রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।