নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় কার্গোজাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এসকেএল ৩ লাইটার কার্গোজাহাজটি আটক করেছে কোস্টগার্ড। ১৪ স্টাফসহ আটকের পর জাহাজটিকে আনা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের ঘাটে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় মুন্সিগঞ্জে মেঘনা নদীতে নোঙর করে জাহাজের নাম ও রঙ পরিবর্তন করার সময় গজারিয়া কোস্টগার্ডের সদস্যরা জাহাজটি এবং জাহাজে কর্মরত ১৪ জনকে স্টাফকে আটক করে।
আটককৃতরা হলো– জাহাজের মাস্টার ওহিদুজ্জামান, ড্রাইভার মজনু, সুকানি আনোয়ার, নাজমুল, গ্রিজার ফারহান, হৃদয়, ডেক টেন্টাইল আব্দুল্লাহ, লস্কর রকিবুল, নুর ইসলাম, সাগর, সাকিব, আলিফ, বাবুর্চি বাশার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, বেলা ১১টায় কোস্টগার্ডের সদস্যরা জাহাজটি আটক করে। পরে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে । জাহাজটি আটকের পর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর সংলগ্ন টানবাজার খেয়াঘাটে এনে নোঙর করানো হয়েছে। এখানে রয়েছে কোস্টগার্ড ও নৌ-থানা পুলিশের দল। সার্বক্ষণিক নজদারিতে রাখবে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, গত ৪ এপ্রিল বিকাল ৫টা ৫৬ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চটার্মিনাল থেকে এমএল সাবিত আল হাসান লঞ্চটি প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল ঘাটে যাচ্ছিল। পথে শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সামনে পেছন থেকে আসা এসকেএল-৩ নামে একটি লাইটার জাহাজ ধাক্কা দিয়ে লঞ্চটির উপর দিয়ে চলে যায়। এতে লঞ্চটি ডুবে গিয়ে ৩৪ যাত্রী নিহত হন। আহত হন আরও বেশ কয়েকজন যাত্রী।
এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জের (নৌযান যান্ত্রিক ও ট্রাফিক) উপ-পরিচালক বাবুলাল বৈদ্য বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনায় ঘটনায় বন্দর থানায় বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু মামলাটি তদন্ত করবে নৌপুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ সদর নৌপুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শহীদুল ইসলাম জানান, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া কোস্টগার্ডের সদস্যরা ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত কোস্টাল জাহাজ এসকেএল-৩ আটক করে নৌপুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। নৌপুলিশ জাহাজটি নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এসে মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করেছে। আটককৃত জাহাজের স্টাফদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে লঞ্চ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গণশুনানি করেছে। গণশুনানিতে দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চ থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রী, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতদের স্বজন ও আহতদের উদ্ধারকারীসহ মোট ২৬ জন অংশ নেন।
নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান ও নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুস সাত্তার শেখ জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চ থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রী, প্রত্যক্ষদর্শী ও দুর্ঘটনার পর পর যাত্রীদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসা লোকজনসহ মোট ২৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করেছেন। এতে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে একটি সস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে। এছাড়া দুর্ঘটনার সময় নদীর পাশের একটি শিল্পকরখানার সিসিটিভির ফুটেজ এবং দুর্ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার সময় মোবাইলে ধারণ করা ফুটেজ সংগ্রহ করে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার জন্য কে দায়ী তা চিহ্নিত করে এবং দুর্ঘটনা রোধে কী করণীয় সে ব্যাপারে সুপারিশসহ নির্ধারিত সাত কার্যদিবসের মধ্যেই তদন্ত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেওয়া হবে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খাদিজা তাহেরা ববির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গণশুনানি করে। জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান খাদিজা তাহেরা ববি বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া হবে।