নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: তিতাস গ্যাসের পাইপের লিকেজ, বিদ্যুতের সর্ট সার্কিট এবং মসজিদ কমিটির অবহেলার কারণেই নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি মসজিদের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের অব্যবস্থাপনা এবং মসজিদের সামনের রাস্তা নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের অবহেলার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
গত ৪ সেপ্টেম্বরের রাতে বিস্ফোরণের ঘটনার পরদিন জেলা প্রশাসন থেকে কমিটি গঠনের দীর্ঘ ১১ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনের হাতে ৪০ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি।
এসময় তদন্ত কমিটির অপর চার সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ টি এম মোশারফ হোসেন, ডিপিডিসির পূর্ব বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ, ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নারায়ণগঞ্জের উপ-মহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদন দাখিলের পর তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সংবাদমাধ্যমকে জানান, বিস্ফোরণের ঘটনার জন্য মূলত এই তিনটি বিষয়কেই দায়ী করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করে এসব অনিয়ম রোধে তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে ১৮টি সুপারিশ পেশ করেছে। এর মধ্যে মসজিদ নির্মাণের আগে আর্কিটেট দিয়ে ড্রয়িং ডিজাইন করা, মসজিদ বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন সংযোগের ব্যাপারে ম্যাপ আকারে বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
তবে তদন্তে বিস্ফোরণের জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করা হয়নি বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান খাদিজা তাহেরা ববি।
তিনি বলেন, এত বড় দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নয়। আমরা কাউকে এককভাবে দায়ী করছি না। সংশ্লিষ্ট অনেকের গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনা রয়েছে। আমরা সব বিষয় চিহ্নিত করেছি এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।
তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন জানান, তদন্ত কমিটি দশ কার্যদিবস ধরে তিতাস, ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটিসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও তাদের দেয়া সুপারিশ বিবেচনা করে দোষীদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি এই তদন্ত প্রতিবেদন কেবিনেট সচিবের কাছে প্রেরণ করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশা’র নামাজ চলাকালে এই মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরো ৫ জনকে সেখানকার আইসিউতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনার একদিন পর ৬ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। পরে মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডি পুলিশকে।