নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আগামী শনিবার ( ২৮ অক্টোবর ) ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি সরকার পদত্যাগসহ এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশ। পাশাপাশি একই দিনে বাইতুল মোকাররমের সামনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের শান্তির সমাবেশকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি ঢাকার রাজপথে মুখোমুখি হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও বিরোধী দল বিএনপি। রাজনৈতিক মাঠে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। ফলে নারায়ণগঞ্জে উত্তেজনাকর এক পরিস্থিতির সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী ২৮অক্টোবর কি ঘটতে চলেছে তাই নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সংশয় রয়েছে।
এদিকে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে
সরকারের পদত্যাগসহ এক দফা দাবিতে বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের গুলো। যে কোন উপায়ে সকল মামলা গ্রেপ্তার ও বাঁধা বিপত্তি মোকাবেলা করেই সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দিবেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ।
মহাসমাবেশকে ঘিরে সিনিয়র নেতাসহ সরব নেতাদের গ্রেপ্তারের আশঙ্কা মাথায় রেখে মহাসমাবেশের আগে থেকেই সর্তকতা অবলম্বন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে।
অন্যদিকে ওইদিনই আগামী ২৮ অক্টোবর দুপুরে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামীলীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সেই সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও যোগ দেবেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানায়, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন আওয়ামী লীগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন গুলো। সেইদিন বাইতুল মোকাররমের সামনে আওয়ামীলীগের শান্তি সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন গুলো। আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচির ঘিরে রাজপথে বিশৃঙ্খলা, সহিংসতার অপচেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলও রাজপথ ফাঁকা ছেড়ে দিতে নারাজ।
আর বিএনপি মহাসমাবেশ ঘিরে রাজপথে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে, বিশেষ করে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা ও মহানগর নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে গত বৃহস্পতিবার ( ১৯ অক্টোবর ) নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা করেছে। সেই সভায় আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশ করবে। সেই সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি রাজপথে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন মির্জা আজম এমপি।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশকে সাফল্যমন্ডিত করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি’র অঙ্গসংগঠন গুলো বড় ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলটির পক্ষ থেকে মহাসমাবেশের আগে গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীদের কৌশল অবলম্বন করতেও বলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা করে সেইদিন নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, যেহেতু একইদিন রাজধানীতে ক্ষমতাসীনরা সমাবেশ করবে, তাই সরকার সেদিন গণপরিবহন বন্ধ করবে না। তবে, নেতারা আশঙ্কা করছেন রাজধানী অভিমুখে আসা নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করতে পারেন সরকার সমর্থকরা। সেদিকে দৃষ্টি রেখে বিভিন্ন পরিকল্পনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বাধা-বিঘ্ন এলে কীভাবে তা উপেক্ষা করে সমাবেশে অংশ নেবেন নেতাকর্মীরা সেই কৌশলও ঠিক করা হচ্ছে।
আর আওয়ামীলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাঁধা ও হামলা গ্রেফতার উপেক্ষা করে ঢাকার মহাসমাবেশে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র অঙ্গসংগঠন গুলোর নেতা- কর্মীদের হাজির হওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন,আমাদের একটাই দাবি সেটি হলো বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ। আর নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ শত চেষ্টা করলেও এক দফার আন্দোলন থেকে দেশে জনগণকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। কারণ নারায়ণগঞ্জের জনগণ জেগে উঠেছে। সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকার মহাসমাবেশকে সফল করতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ঐক্যবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, আমরাতো দেখছি প্রশাসন ইতোমধ্যে বিএনপির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাসাবাড়ি, বাজার ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি থেকে গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নিজ চেম্বার থেকে আইনজীবীদের আটক করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ বিভিন্নভাবে উসকানি দিচ্ছে। আমরা তাতে ভয় পাই না। জনগণ এ মহাসমাবেশ সফল করতে মরিয়া। এটি বুঝতে পেরে সরকার মারমুখী হয়েছে। যাই করুক, নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণ সব বাধা মোকাবিলা করে ২৮ তারিখের মহাসমাবেশে যোগ দেবে।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা আওয়ামীলীগের সমাবেশে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি রাজপথে থাকবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে যদি তারা ১৩ সালের মতো জ্বালাও পোড়াও ও ভাংচুর করার চেষ্টা করে তাহলে বিএনপিকে রাজপথে উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।