ডেস্ক রিপোর্ট:
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক জিয়াউর রহমানের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৬ সালের এই দিনে তিনি বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমানের পিতার নাম মনসুর রহমান। তিনি পেশায় ছিলেন একজন রসায়নবিদ। বগুড়া ও কলকাতায় শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত করার পর জিয়াউর রহমান পিতার সাথে তাঁর কর্মস্থল করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গণমানুষের কাছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন। একজন সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও তাঁর জীবনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেশের সকল সঙ্কটে তিনি ত্রাণকর্তা হিসেবে বার বার অবতীর্ণ হয়েছেন। দেশকে সংকট থেকে মুক্ত করেছেন। অস্ত্র হাতে নিয়ে নিজে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ শেষে আবার পেশাদার সৈনিক জীবনে ফিরে গেছেন। জিয়াউর রহমান সময়ের প্রয়োজনেই তিন দশক আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তাঁর গড়া সে রাজনৈতিক দল তার সহধর্মিণী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আজ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত। আর বেগম খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতৃত্বে পরিণত হয়েছেন। জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তায় খালেদা জিয়ার তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।
অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসম সাহসীকতা, সততা-নিষ্ঠা ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক জিয়াউর রহমানের অবদান দেশের জন্য অসামান্য। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সাথে তিনি যুদ্ধ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের বিশ্ব মানচিত্রে তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত করিয়েছেন স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে। জাতির মর্যাদাকেও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত করেছেন তাঁর শাসনামলে।
জিয়াউর রহমানের সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম প্রতিটি মানুষ শ্রদ্ধাভরে এখনো স্মরণ করে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি সর্বজনবিদিত। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও দিক-নির্দেশনা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি দেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সর্বাধিক সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তাঁরই (শেখ মুজিব) সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তী সময়ে নানা রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন ও ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান ঘটে। দেশের সেই চরম ক্রান্তিকালে সিপাহী-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান নেতৃত্বের হাল ধরেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়েছেন। জাতির মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে তিনি সফল হয়েছিলেন। তাঁর স্বল্পকালীন শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি যে গভীর দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা আজও কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। শুধু দেশে নয়, ইরাক-ইরান যুদ্ধসহ মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের নানা সঙ্কটে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এমনকি তার রাজনৈতিক বিরোধীরাও মৃত্যুর পর তাঁর সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ কারণেই এ দেশের সর্বস্তরের জনগণের অন্তরে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।
কর্মসূচি : শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। এর মধ্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি বিএনপি কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গতকাল (শুক্রবার) বেলা আড়াইটায় সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে বিএনপি’র উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ ১৯ জানুয়ারি সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরস্থ শহীদ জিয়ার মাজারে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও নেতাকর্মীরা ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ অর্পণ করবেন। দিবসটি উপলক্ষে ইতোমধ্যেই পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। অনুরুপভাবে সারাদেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিটে যথাযোগ্য মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে।