ডেস্ক রিপোর্ট:
১০ মহরম মঙ্গলবার পবিত্র আশুরা আজ। রাসূলে করিম সা:-এর দৌহিত্র ও হজরত আলী রা:-এর পুত্র হজরত ইমাম হুসাইন রা:-এর শাহাদতের স্মৃতিবিজড়িত দিন আজ। হিজরি ৬১ সনের এ দিনে ইমাম হুসাইন রা: ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে হজরত মুয়াবিয়া রা:-এর পুত্র ইয়াজিদের সেনাবাহিনীর হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন। ইসলামের খেলাফত শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে রাজতান্ত্রিক শাসন এবং ইসলামী শরিয়তবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ করার কারণেই তাকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়। এ এক মর্মন্তুদ ঘটনা। মুসলিমদের জন্য এক শোকাবহ দিন আজ। সারা বিশ্বের মুসলমানরা প্রতি বছর কারবালার সেই ঘটনাকে নানাভাবে স্মরণ করেন। আজ সরকারি ছুটি। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, কারবালার শোকাবহ ঘটনা আমাদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলার প্রেরণা জোগায়।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পবিত্র আশুরা থেকে আমাদের সব শিক্ষা নিতে হবে। ‘পবিত্র আশুরা একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এ দিনটি বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তাদের এ আত্মত্যাগ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।’
মূলত আশুরা শব্দটি ‘আশারা’ থেকে এসেছে। ‘আশারা’ অর্থ দশ। মহরম মাসের ১০ তারিখ এ জন্য আশুরা হিসেবে পরিচিত।
এ ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে ১০ মহরম আরো অসংখ্য ঘটনার জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, এ দিনে হজরত মুসা আ: ফেরাউনের কবল থেকে তার অনুসারীদের মুক্ত করেন এবং নীল নদে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনীর ভরাডুবি ঘটে। তার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এ দিন মুসা আ: রোজা রেখেছিলেন। আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ সা: নিজে এ দিনে রোজা রেখেছেন এবং উম্মতকে এ দিনে রোজা রাখার আদেশ দেন। তবে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর রাসূল সা: আর আশুরার রোজা রাখার জন্য কাউকে আদেশ করেননি এবং নিষেধও করেননি। বর্তমানে মুসলিমরা নফল হিসেবে আশুরায় রোজা রাখেন। তবে শুধু ১০ মহরম রোজা রাখার পরিবর্তে তার আগের দিন বা পরের দিন মিলিয়ে মোট দুইটি রোজা রাখার কথা হাদিসে এসেছে। আশুরার দিনে হজরত নুহ আ: মহাপ্লাবনের পর নৌকা থেকে ভূমিতে অবতরণ করেন বলেও কথিত আছে।
কারবালার নৃশংস ঘটনার মধ্য দিয়ে ইয়াজিদ বাহিনী মানব ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। অন্য দিকে সত্য ও ন্যায়ের জন্য সপরিবারে কোরবানির এক মহান ইতিহাস সৃষ্টি করেন ইমাম হুসাইন রা:। খেলাফত থেকে রাজতন্ত্র চালুর বিরুদ্ধে ইমাম হুসাইন আন্দোলন না করলে হয়তোবা রাজতন্ত্র যে ইসলামের খেলাফত ব্যবস্থার বিচ্যুতি তা মানুষ উপলব্ধিই করতে পারতেন না। তাই ইমাম হুসাইনের সেই আত্মত্যাগ, সেই আন্দোলন যুগ যুগ ধরে বিশ্ব মুসলিমের জন্য শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
কর্মসূচি : পবিত্র আশুরা উপলক্ষে গতকাল বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘আশুরার তাৎপর্য ও শিক্ষা’ শীর্ষক এক ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইসলাম মাওলানা মিজানুর রহমান এতে ওয়াজ করেন। এ ছাড়া আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন দল ও সংগঠন মিলাদ, আলোচনাসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।