নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ নলুয়া জামে মসজিদ কমিটি ও মসজিদের জমাকৃত টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে রোববার দিবাগত মধ্যরাতে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবীর হোসাইন ও ১৮ সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নাসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সংঘর্ষের সময় উভয় গ্রুপের লোকজন আগ্নেয়স্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে একে অন্যের উপর হামলা করে। এতে অন্তত ২০/২৫ জন আহত হয়। সংঘর্ষের পর কাউন্সিলর কবীর হোসাইন ও কামরুল হাসান মুন্নার পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার সূত্রধরে, সদর মডেল থানা পুলিশ সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে নিতাইগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। কামরুল হাসান মুন্না বর্তমানে মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো.কবির হোসেন পক্ষে দায়ের করা মামলায় আসামী করা হয় একই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর কামরুল ইসলাম মুন্না, রকিবুল হাসান লিয়ন, হুমায়ুন কবির এবং শ্যামল শীল।
কামরুল ইসলাম মুন্নার পক্ষে দায়ের করা মামলায় আসামী করা হয় ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো.কবির হোসেন (৫২). মো, নেওয়াজ উল্লাহ, নজরে হোসেন দিপ্ত, ফয়সাল হোসেন ওরফে ফাইটার, কালা ফারুক, মো.জাহাঙ্গীর, বিল্লাল হোসেন, মো.আল আমিন, মো.ওবায়েদ উল্লাহ, শাহাবুদ্দিন, মো.রনি ইসলাম, মো. শেখ শাদী, সুজন মিয়া, নিয়ামত উল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন জন, শ্রী বিপ্লব কুমার দে, তোফাজ্জল হোসেন স্বপন।
এদিকে দুই মামলায় গ্রেফতার ২২ আসামীকে সোমবার দুপুরে পুলিশ পৃথকভাবে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন আদালতে প্রেরণ করেন। এদিকে দুইপক্ষর আইনজীবী পরস্পর আপোষ সমঝোতা করে আদালতে জামিনের আবেদন করেন। পরে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে দুই পক্ষের পরস্পরের আপোষ-সমঝোতার ভিত্তিতে জামিন মঞ্জুরেরর আদেশ দেন। সন্ধ্যা ৬টায় ২২ আসামী জামিনে মুক্তি পান।
এর আগে সাবেক ও বর্তমান দুই কাউন্সিলরের সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ নলুয়া জামে মসজিদ কমিটি নিয়ে অনেকদিন থেকেই বর্তমান কাউন্সিলর কবীর হোসেন ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল ইসলাম মুন্নার মধ্যে বিরোধ চলছিলো।
কামরুল ইসলাম মুন্না দীর্ঘ ৬ বছর ধরে একক ক্ষমতায় স্বঘোষিত সভাপতি হয়ে মসজিদের নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। মসজিদের আয়-ব্যায়ের হিসাব নিয়ে একাধিকবার এলাকাবাসী ও মুসল্লিদের সাথে কথা দিয়েও বুঝিয়ে দেননি মুন্না। এ নিয়ে কাউন্সিলর কবির ও মুন্নার লোকজন ফুঁসে উঠে। এর জের ধরেই এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমানের দেয়া অনুদানের টাকা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিলো। সাংসদ কত টাকা অনুদান দিয়েছেন তা এলাকাবাসীর কাছে স্পষ্ট করেননি মুন্না।
অভিযোগ উঠেছে ওই টাকার হিসাব জানতে চাইলে ওই সময়ে মসজিদে নিয়োজিত মুফতি মাওঃ রহমানকে মসজিদ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। গত ৩ সপ্তাহ আগে জুম্মার নামাজের পর মসজিদের সাবেক সভাপতি মোঃ আলী ফালু সর্বশেষ মসজিদ ফান্ডের ১৫ লাখ টাকার হিসাব জানতে চান। যেহেতু ওই টাকা মসজিদের ব্যাংক হিসাবে জমা নেই।
তিনি মুসল্লিদের বলেন, মসজিদের ব্যাংক হিসাব থাকার পরও মসজিদের কোষাধক্ষ্য ১৮ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর ও মুন্না তাদের নিজের কাছে এ অর্থ রেখেছেন। যার কোন হিসেব নেই। পরে কাউন্সিলর কবির নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি করে এটাকা ব্যাংকে জমা দিতে বললে বিরোধ চরমে উঠে।
এরপরই গতকাল রোববার এশার নামাজের পর মসজিতে এ নিয়ে এলাকাবাসীসহ কাউন্সিল কবির ও মুন্না উভয়পক্ষ বসে। সেখানে বাকবিতন্ডার পর কবীরের ভাগিনা টিটুকে মারধর করে মসজিদ থেকে বের করে দেয় মুন্না পন্থী লোকজন। এঘটনায় উভয় গ্রুপের লোকজনের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
উভয় গ্রুপের লোকজনই আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের উপর হামলা চালায়। পুরো এলাকাই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। চারদিকে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়েরের পর মামলা সূত্র ধরে ভোর চারটার দিকে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানকালে বতর্মান ও সাবেক কাউন্সিলর কবির ও মুন্নাসহ উভয় গ্রুপের মোট ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।