ডেস্ক রিপোর্ট:
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলেম-উলামাদের বিশাল সমাবেশে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি একমাত্র আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন ছাড়া কারও আর কাছে মাথা নত করবে না। তিনিও করতেন না, আমিও তা করি না। শুধু আল্লাহর কাছে ছাড়া কারও কাছে মাথা নত করি না। আল্লহ ছাড়া কাউকে আমি ভয়ও করি না।
রোববার (৪ নভেম্বর) আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত শুকরানা মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দাওরায়ে হাদিসের মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা ‘আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর শুকরানা মাহফিলের আয়োজন করে।
যারা দ্বীন ইসলামের খেদমত করছেন তাদের মধ্যে উপস্থিতি হতে পারা সৌভাগ্যের বিষয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে যখন আল্লামা শফী সাহেব বললেন তিনি সংবর্ধনার আয়োজন করবেন। আমি বললাম, না; আমার জন্য না। এটা হবে আল্লাহর জন্য শুকরিয়া আদায় করা। কারণ আমি এটা বিশ্বাস করি যে, আমাদের ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম ধর্ম মানুষকে শান্তির পথ দেখায়। আর সেই দ্বীন শিক্ষা যারা দেন তারা কেন অবহেলিত থাকবেন। কাজেই তাদের কখনো অবহেলিত থাকতে দেওয়া যায় না।’
‘জাতির পিতা বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যাতে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা সমগ্র বাংলাদেশে ভালোভাবে প্রচার ও প্রসার ঘটে। তিনি এদেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। টঙ্গিতে যে বিশ্ব ইজতেমা হয়, সেই জায়গায় বাংলাদেশে যাতে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব ইজতেমা হতে পারে সেটা আদায় করে তিনিই এনেছিলেন। ইসলামিক সম্মেলন ওইআইসির যে সদস্য পদ সেটাও আমরা পেয়েছিলাম জাতির পিতার উদ্যোগে। আমাদের হাজীরা যাতে নিরাপদে অল্প খরচে যেতে পারেন তার জন্য তিনি একটি জাহাজ ক্রয় করে জাহাজে হাজীদের পাঠিয়েছিলেন হজপালনের জন্যে। এভাবে তিনি সবসময় ইসলামের জন্য কাজ করেছেন। তার কন্যা হিসেবে এদেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করা এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।’
‘ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের শিক্ষাগ্রহণের প্রথম উপায়টা ছিল কওমি মাদরাসা। কওমি মাদরাসার মাধ্যমেই কিন্তু মুসলমানরা শিক্ষাগ্রহণ শুরু করে। যারা ওই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলেন তারাই কওমি মাদরাসা চালু করেন।কাজেই তাদের সবসময় আমরা সম্মান করি’- বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শুকরানা মাহফিলে কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায প্রধানমন্ত্রীকে শুকরানা স্মারক তুলে দেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। অন্যদিকে কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে পাস হওয়া বিলের কপি আল্লামা শাহ আহমদ শফীর হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
হেফাজতে ইসলামের আমির ও আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন উদ্বোধনী বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদিন, স্বাগত বক্তব্য দেন আল্লামা আবদুল কুদ্দুস।
মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন আল্লামা আশারাফ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহ, মাওলানা আজহার আলী আনোয়ার শাহ, আল্লামা ফরিদউদ্দীন মাসউদ, আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন, মাওলানা সুলতান জওক নদভীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন আবু তাহের নদভী, মাওলানা আরশাদ মাদানী, মাওলানা আব্দুল বছির, ও মাওলানা নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
মাহফিল সঞ্চালনা করেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হক ও গওহরডাঙ্গা শিক্ষা বোর্ডের মুফতি মাকসুদুল হক।
প্রধানমন্ত্রী গভীর মনোযোগ দিয়ে আলেম ওলামাদের বক্তব্য ও দাবী দাওয়ার কথা শোনেন।
মাহফিলকে কেন্দ্র করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যানজটসহ যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে উদ্যান ও তার আশেপাশের এলাকার সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সকাল ৯টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মাহফিল শুরু হয়। এদিকে মাহফিলকে কেন্দ্র করে সারাদেশ থেকে কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা সকাল থেকেই উদ্যানে আসতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে মঞ্চে এসে উপস্থিত হন।
প্রধানমন্ত্রী আসার আগেই গোটা মাহফিলস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বহুলোক উদ্যানে প্রবেশ করতে না পেরে পাশের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, টিএসসি, দোয়েল চত্বর এলাকাতেও অবস্থান নেন।
আল্লামা আহমদ শফীর মোনাজাতের মাধ্যমে শুকরানা মাহফিল শেষ হয়।