নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, এইবার হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কথাও শুনবো না, বাংলাদেশকে বাঁচাবার জন্য মৃত্যুর সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাস্তায় নামবো।
রোববার (৯ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৪৭ বিধিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবের ওপর তৃতীয় দিনে আলোচনা অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
শামীম ওসমান বলেন, সবচেয়ে ধিকৃত মানুষের নাম খুনি মোশতাক। খুনি মোশতাক আমাদের বাসায় ফোন করে আমাকে বললো তোমার আব্বাকে দাও। আমাদের রাজনৈতিক পরিবার তাই আমি বললাম আমার বাবা বাসায় নেই। আমার আব্বা সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর বললেন তোমার মাকে দাও, আমি আমার মাকে দিলাম। আমি দেখলাম আমার মা উনিও রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে। তিনি যখন কথা বলছিলেন আমি তখন দেখলাম আমার মায়ের চেহারা রক্তের মতো লাল হয়ে গেছে। খন্দকার মোশতাক আমার মাকে বললো মা তুই জোহাকে বল (আমার আব্বার নাম ধরে) আগামীকাল সংসদে আসতে। আগামীকাল সংসদে আসতে বল আমি ওকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বানাবো। আমার মায়ের সেদিন যে ঘৃণা, আমি দেখলাম আমার বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন কী উত্তর দেয়। আমার মা উত্তর দিয়েছিলেন সেদিন খন্দকার মোশতাককে, আমি আপনাকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই (অনেকেই সেদিন এই সংসদে এসে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ওপর পা দিয়েছিলেন) আমার মা বলেছিলেন আমি পরিষ্কারভাবে আপনাকে বলতে চাই আমার স্বামী আপনার মন্ত্রী সভায় যাবে না। আর যদি যায় আমি প্রথমে চেষ্টা করবো তাকে বাধা দেওয়া, যদি বাধাতে কাজ না হয় আমি চেষ্টা করবো তাকে হত্যা করার, আর যদি তাও না পারি আমি নিজে আত্মহত্যা করবো। কিন্তু আমি তারপরও আপনার সংসদে যেতে দেবো না। তখন উনি বলেছিল আমি আর জোহাকে বাঁচাতে পারলাম না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমাদের বাড়ির দরজা-জানালা সব ভেঙে ফেলা হলো, আমার বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো। এরপরও তিনটি বছর একবেলা ভাত খেয়েছি, একবেলা খাইনি। আমার মেজ ভাই সেলিম ওসমান শেখ জামাল ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন। বড় ভাই নাছিম ওসমানের খোঁজ নেওয়ার জন্যে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ডালিম, বজলুল হুদারা ঢাকার থেকে গুলি করতে করতে নারায়ণগঞ্জের দিকে এলো, এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। ঢাকা কলেজের একজন মেধাবী ছাত্রকে মাথা নিচু করে রেডিও বাংলাদেশে ওই আপেল মাহমুদ গান গাইছিল আর মদ খাচ্ছিল আর মেজর ডালিম হাত দিয়ে পিস্তলটা ঘুরিয়ে বলছিল এই হাত দিয়ে আব্বাকে মেরেছি, আম্মাকে মেরেছি, ভাইকে মেরেছি বলে আমার ভাইটার বুকের ভেতরে ৪৬টা ছিদ্র করেছিল সিগারেটের আগুন দিয়ে। আমরা একবেলা ভাত খেতাম একবেলা ভাত খেতাম না। আমার মেজ ভাই সেলিম ওসমান ওই অবস্থায়, আমার মা ওই খুনিদেরকে ফোন করেছিল, ফোন করে বলেন পরিষ্কারভাবে ওই কিসমতকে আর হুদাকে, একজন মায়ের হুমকার দেখে তারা ভয় পেয়েছিল, বলেছিলেন আমার আরেকটা ছেলে আছে ওকেও নিয়ে যা, কিন্তু মনে রাখবা আমার স্বামীও জেলে আছে মেরে ফেলো, আমার ছেলেকেও মেরে ফেলো। কিন্তু আমার একটা ছেলে কিন্তু দেশে থেকে চলে গেছে, একটা ছেলে তোমাদের বংশ নির্বংশ করে দেবে। এই ভয় তারা পেয়েছিল। বস্তায় বন্ধ করে সুন্দরবন হোটেল আছে সেখানে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে। ওই তো আমাদের রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস, ওরা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দেশে আসার পর সেখানে তার বাবার লাশ ছিল, মায়ের লাশ ছিল সেখানে নামাজ পড়তে চেয়েছিলেন কিন্তু জিয়াউর রহমান দেয় নাই। সব ঠেকা জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার। ডেকে ডেকে খাইতে হবে, খালি খাবি না খাইলে না খাবি, যে আসলে আসবি না আসলে না আসবি। ওই ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। এইটা আর ৭৫ সাল হবে না। এইবার হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কথাও শুনবো না। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই এবার প্রধানমন্ত্রীর কথাও শুনবো না কারণ এইবার আমরা যারা এখানে এমপি আছি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আছি, এইবার ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশকে বাঁচাবার জন্য, নেত্রীকে বাঁচানোর জন্য, ভবিষ্যত বাঁচানোর জন্য, বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানোর জন্য মাথায় কাফনের কাপড় পড়ে মৃত্যুর সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাস্তায় নামবো। এটা বুঝতে হবে আমাদের কথা যেন হালকাভাবে না নেয়।