নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রতিষ্ঠাকারী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা সর্বাত্মক সহযোগীতা করবে। আর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থী এমপি সেলিম ওসমান একজন মুক্তিযোদ্ধা। আগামী নির্বাচনে সেলিম ওসমানকে বিজয়ী করতে নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা সর্ব্যস বিলিয়ে দিবেন।
বুধবার ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে মত বিনিময় সভায় মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্যে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগামী নির্বাচনে মহজোটের মনোনীত প্রার্থী ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আজকে আপনাদের মাঝে আপনাদের একজন সহকর্মী ও সহযোদ্ধা হিসেবে এখানে উপস্থিত হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ-১ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে উনি নিজে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আমি কোন দল করি সেটা বড় কথা নয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখানে উনি আমাকে মনোনীত করেছেন এবং দুটি আসনেই উনি মুক্তিযোদ্ধাকে মনোনীত করেছেন। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শামীম ওসমানও একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং দুইজন মুক্তিযোদ্ধা ছোট ভাই। যার এক ভাই প্রয়াত নাসিম ওসমান বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরুল হক ও মুক্তিযোদ্ধা বাবুলকে নিয়ে আরো একবার যুদ্ধে গিয়ে ছিলেন। পাশাপাশি সোনারগাঁওয়ে লিয়াকত হোসেন খোকা এবং আড়াইহাজারে নজরুল ইসলাম বাবুকেও আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন। নারায়ণগঞ্জের মানুষ হারাতে হারাতে আর না পেতে পেতে এখন হতাশ হয়ে গেছে। আমি গত সাড়ে ৪ বছরে কি করতে পেরেছি আর কি পারি নাই সেটা আপনারা নিজেরাই ভাল বলতে পারবেন। আমি আপনাদের কথা দিয়ে ছিলাম মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আর কিছু করতে পারি আর না পারি ২০১৮ সালের মধ্যে অন্তত আপনাদের মুখে মুচকি হাসির ব্যবস্থা করতে পারবো। সকলের সহযোগীতায় আজকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা অট্ট হাসি হাসতে পারবে বলে আমি আশা রাখি।
তিনি আরো বলেন, এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই আওয়ামীলীগের জন্ম। এই নারায়ণগঞ্জ মরহুম খান সাহেব ওসমান আলীর নারায়ণগঞ্জ, মরহুম এ.কে.এম শামসুজ্জোহার নারায়ণগঞ্জ। তাই নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই নৌকা মার্কার প্রতীকে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে আমি মনে করেছি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আমি এই কথাটি বলে ছিলাম এবং আমি আর নির্বাচন করবো না বলে উনাকে জানিয়ে ছিলাম। প্রথমবার আমার মায়ের নির্দেশে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ছিলাম আর এইবার আমার মা নাই। প্রধানমন্ত্রী আমার উপর আস্থা রেখে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তুমি যেখানে আছো সেখানেই থাকো। তোমার মত একজন বিশ্বস্ত লোক আমার সেখানে দরকার। তখন আমার আর কিছু বলার ছিল না।
সংসদ সদস্য থাকা কালীন বিগত সাড়ে ৪ বছরে নিজের কঠোর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করি না। আমি নিজে হারাম খাই না এবং গত সাড়ে ৪ বছরে কাউকে হারাম খেতে দেই নাই। ভবিষ্যতেও কাউকে হারাম খেতে দিবো না। আমি যা বলি আমি সেটা অবশ্যই করি।
সেলিম ওসমান আরো বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হলে পাস করতেই হবে এমন কোন কথা নাই। আগামী নির্বাচনে যদি আমি পাস করতে না পারলেও আপনারা আমাকে পাশে রাখবেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যদি বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পারি তাহলে বর্তমানে আমরা যেকজন জীবিত আছি আমরা সবাই মিলে যত দিন বেঁচে আছি ততদিন নারায়ণগঞ্জের মানুষকে শান্তিতে রাখতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, এমপি সেলিম ওসমানের নিজের কোন চাহিদা নাই। অতীতেও তিনি নিজের জন্য এমপি হননি আর এবারেও উনি নিজের জন্য প্রার্থী হননি। উনি আমাদের প্রয়োজনে নারায়ণগঞ্জের মানুষের প্রয়োজনে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। বিগত দিনে উনি নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে সরকারী বরাদ্দের পাশাপাশি নিজের পকেট থেকে অনুদান দিয়ে নারায়ণগঞ্জের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজ গুলো সম্পন্ন করেছেন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের যিনি সম্মানিত করেছেন সেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের স্বীকৃতি দেওয়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুজনেই সেলিম ওসমানকে মনোনীত করেছেন। আপনারা যে যেই দলের সার্পোট করেন না কেন কিন্তু আমি বলবো সেলিম ওসমান সকলের। তাই আগামী নির্বাচনে দল যার যার সেলিম ওসমান সবার এই স্লোগান নিয়ে আমাদের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের যা যা করনীয় তার সবকিছু করে এমপি সেলিম ওসমানকে আবারো বিজয়ী করতে হবে। সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান সহ পরিবারের সকলের প্রতি এ আহবান থাকবে আগামী নির্বাচনে সেলিম ওসমানকে বিজয়ী করতে আপনারা সর্বাত্মক সহযোগীতা ও অগ্রনী ভূমিকা রাখবেন।
মত বিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরুল হক, সদর উপজেলার কমান্ডার শাহজাহান ভূইয়া জুলহাস, যুদ্ধকালীন কমান্ডার এম.এ সাত্তার, জেলার সাবেক কমান্ডার সামিউল্লাহ মিলন, বন্দর উপজেলা কমান্ডার আব্দুল লতিফ, মহর আলী চৌধুরী, চাষাঢ়া ইউনিয়নের কমান্ডার ফরিদা আক্তার, বন্দর উপজেলার ডেপুটি কমান্ডার নাসির উদ্দিন, ডেপুটি কমান্ডার আয়াত আলী, মুক্তিযোদ্ধা সানাউল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ। এছাড়াও উক্ত মত বিনিময় সভায় মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দরা সহ প্রায় ৫ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সহ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।