নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
সিদ্ধিরগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে বাক প্রতিবন্ধী যুবক নিহত ও মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনার একটি মামলায় ৮ জনের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত ।
সোমবার ( ২২ জুলাই ) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন । মামলা নং ৫৪/৭/১৯ ।
অপর আরেকটি মামলায় ৬ জনের রিমান্ড শুনানি আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে । মামলা নং ৫৫/৭/১৯ ।
গত রবিবার (২১ জুলাই) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এ দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। একই দিন দুপুরে দু’টি মামলায় ১৪ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। দু’টি মামলায় ৮৮ জনের নাম উল্লেখ ও সাড়ে ৩ শতাধিক লোককে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: সেলিম মিয়া জানান, বাক প্রতিবন্ধী সিরাজকে পিটিয়ে হত্যা করায় উপ-পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে ৭০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত দেড় থেকে দুইশত জনকে আসামি করা হয়েছে।
একই দিন শারমিন নামে আরেক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগে তার মা তাসলিমা বেগম বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও এক থেকে দেড়শত জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করে। তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি আল আমিন নগর এলাকায় ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে বাক প্রতিবন্ধী সিরাজকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী। একই দিন পাইনাদী নতন মহল্লা পিএম এর মোড়ে শারমিন নামে আরেক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
এসময় পুলিশ গুরুতর আহত ওই নারীকে উদ্ধার করতে গেলে এলাকাবাসীর সাধে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন উত্তেজিত জনতা পুলিশের একটি গাড়ী ভাংচুর করে।
এ বিষয়ে নিহত বাক প্রতিবন্ধি যুবক সিরাজের ভাই আলম জানায়, ১০বছর আগে সিরাজের সাথে বিয়ে হয় শামসুন্নাহারের। বিয়ের পরে তাদের মিঞ্জু নামে এক কণ্যা সন্তান জন্ম নেয়। পরে ২০১৫ সালে সিরাজ শামসুন্নাহারকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো এলাকার মোহর চাঁনের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করে।
বেশ কিছুদিন তাদের সম্পর্ক ভালোই ছিলো। এখানেই শামসুন্নাহারের সাথে পরিচয় হয় মান্নানের। সিরাজ প্রতিবন্ধি হওয়ায় শামসুন্নাহার একসময় মান্নানের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে যায়। পরকীয়া প্রেমের টানে আট মাস আগে শামসুন্নাহার সিরাজকে তালাক দিয়ে মান্নানকে বিয়ে করে।
শামসুন্নাহার সাথে ৭ বছরের কণ্যা মিঞ্জুকে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে প্রতিবন্ধি সিরাজ নিজের মেয়ে মিঞ্জুকে দেখতে প্রায়ই সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি আল আমিন নগর এলাকায় আসতো। শনিবারও নিজের মেয়েকে দেখতে আসেন সিরাজ। কিন্তু কে জানতো সৃষ্টিকর্তা তার ললাটে এইরকম নির্মম মৃত্যু লিখে রেখেছিলো। ছেলে ধরা সন্দেহে শনিবার সকাল ৮টায় আল আমিন নগর এলাকায় গণপিটুনির শিকার হয় প্রতিবন্ধি সিরাজ।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় সিরাজকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সিরাজকে মৃত ঘোষণা করেন। সিরাজের এই মৃত্যুতে তার ভাই আলম শামসুন্নাহার ও মান্নানকে দায়ি করছে।
সে জানায় সিরাজের সাবেক স্ত্রী ও তার বর্তমান স্বামী মান্নানই তাদের ভাইকে ছেলে ধরার নাটক সাজিয়ে হত্যা করিয়েছে। আমরা তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। সিরাজ ভোলা জেলার লালমোহন থানার চরলেংগুটিয়া এলাকার আঃ রশিদের ছেলে।