নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ : টার্গেট আগামী ২৮ অক্টোবর (শনিবার) ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ। সরকার পদত্যাগসহ এক দফা দাবিতে ঢাকার মহাসমাবেশকে ঘিরে উজ্জীবিত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতা- কর্মীরা। মহাসমাবেশকে সফল করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গসংগঠন গুলো ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তবে হঠাৎ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা- কর্মীদের মধ্যে নতুন করে বিরাজ করছে মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্ক।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানার দায়েরকৃত নতুন ও পুরাতন মামলায় নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে দিনে ও রাতে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০জন বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চালাচ্ছেন গণগ্ৰেপ্তার, আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে পরিবারগুলো। ফলে গণগ্ৰেপ্তার আতঙ্কে ঘরছাড়া নারায়ণগঞ্জ বিএনপি।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকার পদত্যাগসহ এক দফা দাবিতে ঢাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি যাতে ফের সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য নতুন করে মামলা ও গ্রেপ্তারের কৌশল নেয়া হয়েছে। মহাসমাবেশকে বানচাল করতেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী সমর্থক পেশাজীবীদেরও মামলা দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করছে। নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা-সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগে বাড়তে পারে আরও গ্রেপ্তার ও মামলা।
বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশের আগে এ মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। নতুন মামলার পাশাপাশি পুরোনো মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামির স্থানে নাম ঢুকিয়ে তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে আওয়ামী পুলিশ। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে ফের মামলা, হামলা ও গ্রেপ্তারকে অস্ত্র হিসেবে নিয়েছে। মহাসমাবেশকে বানচাল করতে ক্ষমতাসীনরা নতুন করে মিথ্যা ও যড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের চাপে রাখছেন এবং বাড়িঘরে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে গণগ্ৰেপ্তার চালাচ্ছে। আমাদের দুই আইনজীবীকে তাদের চেম্বার থেকে গ্ৰেফতার করে পরবর্তীতে ছেড়েও দিয়েন । এছাড়াও অনেক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সকল মিথ্যা মামলা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি । আর অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতা কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানের নির্দেশে এদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জন্য রাজপথে নেমে এসেছে। তাদেরকে আর ঠেকানো যাবে না। এসরকার পতন নিশ্চিত করেই তারা ঘরে ফিরবে। কোনো বাধাই ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের নেতা-কর্মীদের আটকাতে পারবে না। ইনশাল্লাহ এসকল মামলা হামলা ও গণগ্ৰেপ্তার উপেক্ষা করেই মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকার মহাসমাবেশে হাজির হবো।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে ঠেকাতে পুলিশ আমাদের বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীদেরকে পুরনো মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এসকল করে আওয়ামী লীগের শেষ রক্ষা হবে না। মামলা ও গ্রেফতার করে সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না। ইনশাল্লাহ সকল বাধা ও পুলিশের গ্রেফতার ও মামলা উপেক্ষা করে ঢাকার মহাসমাবেশকে আমরা সফল করবো। আর অহেতু মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার না করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার পদত্যাগসহ এক দফা দাবিতে ২৮ নভেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশকে সফল করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নতুন করে মামলায় আসামিও করা হচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের। এভাবেই পুরোনো মামলার সাথে সম্প্রীতি নতুন কিছু মামলার জালে আটকে যাচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে মামলা হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই সতর্ক অবস্থানে চলে গেছেন। যাদের নামে মামলা করা হয়েছে এবং যাদের নাম আসেনি সবাই নিজ বসতবাড়ি থেকে সরে থাকছেন বলে জানা গেছে। নেতা-কর্মীদের ধারণা তাদের মধ্যে আতঙ্ক বা ভয়ভীতি সৃষ্টি করতে নানা কৌশল নিতে পারে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল।
জানতে চাইলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতা বলেন, দলের প্রত্যেক নেতা- কর্মীর বিরুদ্ধে শত শত মামলা। সরকারের নির্যাতন- নিপীড়নের দলের নেতা-কর্মীরা বিপর্যস্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মারমুখী আচরণে নেতা-কর্মীরা একটু নিরাপদ দূরত্বে গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলতে হচ্ছে। তবে নেতা-কর্মীদের মনোবল অটুট আছে। তারা যেকোনো ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত। সকল বাধা ও মামলা মামলা উপেক্ষা করে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে সফল করবে।