বিশেষ প্রতিবেদন: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন শুভ মহালয়া হয়ে গেছে গত শনিবার। এদিন থেকেই শুরু দেবীপক্ষের। আরমাত্র একদিন পরই ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু।
আগামী ২৪ অক্টোবর বুধবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে বিদায় নেবেন দেবী। নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, পুরো জেলায় ২২৪টি দুর্গাপূজা হবে, গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৬টি পূজা মন্ডপ। মণ্ডপগুলোতে বাহারি রঙের আলোকসজ্জা সহ চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
আগামী শুক্রবার ( ২০ অক্টোবর ) ষষ্ঠী তিথিতে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ২১ অক্টোরর সপ্তমী, ২২ অক্টোবর অষ্টমী ও কুমারী পূজা, ২৩ অক্টোবর নবমী এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
দশমীতে শহরের বিভিন্ন মন্দির থেকে বের করা হবে বিজয়া শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা চাষাঢ়া গোল চত্বর, গলাচিপা মোড়, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মার্কেট, ২নং রেলগেট দিয়ে ১নং রেলগেট হয়ে ৫নং বিআইডব্লিউটির ঘাট শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গিয়ে শেষ হবে।
মঙ্গলবার নগরীর একাধিক মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা শিল্পীরা দিনরাত দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, অসুর, সিংহসহ অন্য প্রতিমা সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নগরীর উকিলপাড়া, দেওভোগ, সাহাপাড়া, আমলাপাড়া, নয়ামাটিসহ নিতাইগঞ্জের বলদেব জিউর আখড়া মন্দিরে চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। ইতি মধ্যেই খড় আর কাঁদামাটি দিয়ে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরীর কাজ।
এখন চলছে রং আর তুলি দিয়ে চলছে প্রতিমার সাজানোর কাজ। এছাড়াও প্রতিমা তৈরীর পাশাপাশি অন্যান্য মন্দিরের সাজসজ্জায় চলছে বিশেষ প্রস্তুতি। মন্ডপে মন্ডপের সামনের রাস্তার উপর তৈরী করা হয়েছে সুবিশাল তোরণ।
আসন্ন দূর্গোৎসবের আয়োজন নিয়ে জানতে চাইলে শিখন সরকার শিপন বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ উৎসব প্রিয় এবং অসম্প্রদায়িক চেতনার ধারক বাহক। যুগ যুগ ধরে এখানে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে আসছে এবং উৎসব পার্বন পালন করছে। এখানে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা কখনো পরিলক্ষিত হয়নি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ মুসলমানদের পবিত্র মাহে রমজান এবং সনাতন ধর্মের দূর্গোৎসব একসাথে পালন করেছে। ধর্মীয় সহাবস্থানে নারায়ণগঞ্জের মানুষের সুনাম দেশব্যাপী বিস্তৃত। এরই ধারাবাহিকতায় এবারেও শারদীয় দূর্গোৎসব অত্যন্ত জমকালোভাবে আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি সকলের সহযোগিতায় এবং সকল ধর্মের মানুষের সমান অংশগ্রহনে আসন্ন শারদ উৎসব সফলভাবে আয়োজন করতে সক্ষম হবো।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত তাই বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে যাতে করে পূজার সময়টাতে কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়া না হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে পূজায় বিঘ্ন ঘটে এমন কোনো কর্মসূচি দেয়া হবেনা বলেও আশ^াস প্রদান করা হয়েছে। আমরা আশা করছি সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি সফল দূর্গোৎসব আয়োজনে সফল হবো। সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে আমাদের শারদীয় দূর্গোৎসবে অংশ নেয়ার নিমন্ত্রণ জানচ্ছি এবং সকলের প্রতি রইলো আগাম শারদ শুভেচ্ছা।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে এবার ২২৪টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এসব পূজা মন্ডপের নিরাপত্তার জন্য নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদা তৎপর থাকবে। আমরা ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। এছাড়াও প্রতিটি মন্ডপের প্রতিনিধিগনের সাথে বৈঠক করে পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানো, নিজস্ব ভলান্টিয়ার নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কোনো রকম গুজবে কান না দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সাহায্য নেওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সকল সংসদ সদস্যগণ, বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র্যাব-১১, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিআইডব্লিউটিএ, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসীর ঐকান্তিক সহযোগিতায় এবারের দূর্গোৎসব আয়োজনের দিক থেকে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। সকলকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে শারদীয় শুভেচ্ছা।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, আগামী ২০শে অক্টোবর থেকে পুলিশের পাশাপাশি আমাদের আনসার সদস্যরা পূজা মন্ডপে ২৪ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করবে যাতে করে কোন প্রকার সমস্যা না হয়। পূজার দিন থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের বিশেষ কি টিম সাদা পোশাকে কাজ করবে। একইভাবে বিসর্জনের দিনও যেসব স্থান গুলোতে বিসর্জন হবে আমাদের পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবে ঘিরে আমরা জেলায় একটি সাইবার সেল গঠন করেছি। যার কাজ হচ্ছে যাতে কেউ গুজব অথবা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে ধর্মীয় উত্তেজন তৈরি করতে না পারে। এই সাইবার সেল এগুলো মনিটরিং করবে। কেউ যদি কোন ধরনের মিথ্যা সংবাদ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভুল তথ্য প্রচার করে ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরির করার চেষ্টা করে তাহলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা করব। তার জন্য আমাদের সাইবার সেলে যারা আছে তারা সার্বক্ষণিক এগুলো মনিটরিং করবে। শারদীয় দুর্গোৎসব প্রতিবাদের ন্যায় এবারও হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকজন সুন্দরভাবে উদযাপন করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।