নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: ত্রি- বার্ষিক সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আগামী রোববার (২৩ অক্টোবর) জেলা এবং মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।এবার কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা না দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন । ফলে এ সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির সম্মেলনের জন্য এরই মধ্যে শহরের ইসদাইর পৌর ওসমানী স্টেডিয়াম মাঠে তৈরি করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। সম্মেলনে প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন তোরণে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কে তৈরি করা হয়েছে শুভেচ্ছা তোরণ। কে হচ্ছেন সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক তা নিয়ে চলছে সর্বত্র আলোচনা।
জানাগেছে, জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। আর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান।
প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী এবং দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। বিশেষ অতিথি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনিসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
আওয়ামীলীগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ২৫ বছর পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও দীর্ঘ ১৯ বছর পর মহানগর আওয়ামী লীগেরকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। কারা আসছেন জেলা আওয়ামী লীগের আগামী দিনের নেতৃত্বে এমন আলোচনা এখন সবখানে। তবে নতুন কমিটি ভোটের মধ্যে হবে নাকি কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওযা যায়নি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যোগ্য ও কর্মীবান্ধব রাজনীতিকদের নেতৃত্বে আনার দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই বলেন, এবারের ত্রি- বার্ষিক সম্মেলনের প্রস্তুতি আগের সম্মেলন গুলোর চেয়ে অনেক ভালো। সাংগঠনিকভাবেও আমরা আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছি। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানাবেন, তাদের নেতৃত্বেই আমরা কাজ করব।
তিনি আরও বলেন, নেত্রী এর আগে আমার উপর বিশ্বাস রেখে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। এবারও আমি সভাপতি প্রার্থী। ইনশাল্লাহ আমাকে আবারও দায়িত্ব দেওয়া হলে আমার সর্বোচ্চ দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করব।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের মঞ্চ তৈরি থেকে শুরু করে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন শুধুই অপেক্ষা। আগামী ২৫ অক্টোবর উৎসব মুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি পুনরায় আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করবেন বলে আমি আশাবাদী।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সভাপতি পদে আগ্রহী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন এমপি শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই। সেই সাথে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনা রয়েছেন এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, আওয়ামীলীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এড. আনিসুর রহমান দীপু, জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহীদবাদল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের কমিটির সভাপতি আলোচনা রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বর্তমানের সিনিয়র সহ- সভাপতি বাবু চন্দন শীল, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনা রয়েছেন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ্ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল ও জিএম আরাফাত।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর। অধ্যাপিকা নাজমা রহমান সভাপতি ও এমপি শামীম ওসমান সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এর পর ২০০২ সালের ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরামকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্র থেকে ৬১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি করে দেওয়া হয়। পরে আহ্বায়ক এস এম আকরাম পদত্যাগ করে যুক্ত হয়ে পড়েছেন নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে। পরে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় যুগ্ম-আহ্বায়ক মফিজুল ইসলামকে। ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মফিজুল ইসলাম মারা যান।
এরপর ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের তাৎকালীন প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে সভাপতি এবং সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিনিয়র সহ- সভাপতি ও এড. আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামীলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর ১৩ মাস পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামীলীগ রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, বন্দর, ফতুল্লা ও সর্বশেষ সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন সম্পন্ন করেছেন। বাকী রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলন।
অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও এড. খোকন সাহাকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। এর দুই বছর পর ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে বিলুপ্ত শহর আওয়ামী লীগের কমিটিতেও সভাপতি ও সেক্রেটারী পদে ছিলেন আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহা। কমিটির মেয়াদ ছিল ২ বছর। কিন্তু পার হয়ে গেছে ৭ বছর। তবে এই দীর্ঘ সময়েও তারা মহানগর আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কোনো কমিটি গঠন করতে পারেননি। মূলত নিজেদের মধ্যে কোন্দল ও বিভেদের কারনেই করতে পারেনি।