নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
স্থানীয় স্কুলগুলোর কমিটিতে প্রভাববিস্তার, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের আস্থাভাজন দুই নেতার একজনের হয়ে কাজ করা এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে ফতুল্লার রামারবাগ এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন সংঘর্ষে আহত আজিমের বাবা আব্দুল গফুর। তিনি জানান, নিজেরা রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলেও জাতীয় নির্বাচনে একটি পক্ষের হয়ে কাজ করার জেরে এই আক্রমন হয়েছে। সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার দাবি করার পাশাপাশি শান্তিপ্রিয় রামারবাগে নিরাপত্তা ও শান্তি ফেরানোর জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি।
রোববার (২৪ মার্চ) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের স্বজনরা। সংবাদ সম্মেলনে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত আজিমের বাবা আব্দুল গফুর, ফুফু সেলিনা, সিথী, আহত আকাইদের বাবা আব্দুর রাজ্জাক, খালা শাহিদা, ফুফু রওশন, চাচী রাহিমা, আহত নাজমুলের মামা রাজ্জাক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশের সহসভাপতি ও ফতুল্লা থানা কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন।
আজিমের বাবা আব্দুল গফুর বলেন, কুতুব আইল কাঠের পুল এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন ওরফে কাইল্যা গেসু দীর্ঘদিন ধরে তাঁর এলাকার বাইরের স্কুল কমিটিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছিলেন। তাঁরা স্থানীয় এমপি শামীম ওসামনের মহানগর যুবলীগের আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনুর অনুসারী। রাজ্জাক বলেন, আমরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ফতুল্লা থানা কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক স্পিড বোট ব্যবসায়ী মোস্তফা কামালের পরামর্শ চলি। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের অনুসারী। জাতীয় নির্বাচনে শাহ নিজামের হয়ে এমপির পক্ষে কাজ করায় আমার ছেলে আজিমের উপর ক্ষিপ্ত ছিলো গেসু। নির্বাচনের পর তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলো সে। আজিমের নামে তিনটি মামলা দিয়ে ফাসানোর চেষ্টা করেছে সে। স্কুল কমিটিগুলোতে প্রভাব বিস্তার না করতে পেরেও আমাদের উপর ক্ষিপ্ত ছিলো সে এবং তার বাহিনী। এই পূর্ব শত্রুতার জেরেই তাঁরা বাইরের এলাকা থেকে এসে আমাদের রামারবাগে হামলা করেছে।
আহত আকাইদের বাবা রাজ্জাক বলেন, আমরা ঝুট ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। গিয়াসউদ্দিন ওরফে কাইল্যা গেসু, তার ছোট ভাই জুট ব্যবসায়ী আজমত, মুরাদ, রাজিব, নজরুল, জসীম ও হেলাল রামারবাগ এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি বলেই দেশী ও বিদেশী অস্ত্র-সন্ত্র নিয়ে হামলা করেছে। তাঁরা রামারবাগে মাদকের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে কাজ করছিলো। আমার ছেলে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র। সে কিংবা আমি কেউই রাজনীতির সাথে জড়িতনা। আমরা শুধু মোস্তফা কামালের পক্ষে থাকাতেই এই হামলা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি। একই সাথে রামারবাগ এলাকায় নিরাপত্তা ও শান্তি ফেরানোর দাবি জানাই।
ফতুল্লা থানা কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, এলাকায় হামলার পর ওসি মঞ্জুর কাদের তাকে ঘটনাটি জানায়। এরপর তিনি এলাকায় গিয়ে দেখেন আহতদের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। হামলাকারীদের কেউ ওইসময় ছিলোনা। কামাল বলেন, তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সাতে জড়িতনা, স্পিড বোট বিক্রির ব্যবসা করেন । ১৯৮৪ সালে তোলারাম কলেজে পড়াকালীন সময়ে বর্তমান এমপি শামীম ওসমানকে চিনতেন।
জাতীয় নির্বাচনের আগে এমপি শামীম ওসমান এক অনুষ্ঠানে তাকে নির্বাচনে তাঁর পক্ষে কাজ করার কথা বললে তিনি কাজ করেন। এলাকায় তিনি কয়েকটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন। রামারবাগে হামলার ঘটনার পর তিনি এবিষয়টি সাংসদ শামীম ওসমানকে জানিয়েছেন। সাংসদ এবিষয়টি দেখবেন বলে তাকে আশ্বাস দিয়েছেন। কামাল বলেন, গিয়াস উদ্দিন ওরফে কাইল্যা গেসুর সাথে তাঁর কোন বিরোধ নেই।
প্রসঙ্গত, ফতুল্লার রামারবাগ এলাকায় ২২ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ১৫ জন আহত হন। এঘটনার পরদিন ফতুল্লা মডেল থানায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, গিয়াস উদ্দিন ওরফে কাইল্যা গেসু, তাঁর ছোট ভাই আজমত আলী, ভাতিজা মমিন হোসেন মুরাদ,রাজিব, সজিব, জুয়েলসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ মামলা দায়ের করে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত আজিমের বাবা আব্দুল গফুর।