চার দিক থেকে সমালোচনায় দগ্ধ ঋষভ পন্থের পাশে দাঁড়ালেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলী, ভিভিএস লক্ষণ ও শ্রীলঙ্কার সাবেক ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা। বিশ্বের শীর্ষ উইকেটরক্ষকদের একজন মহেন্দ্র সিং ধোনির উত্তরসূরী হিসেবে পন্থকে বেছে নিয়েছে বিসিসিআই। তবে তরুণ এই ক্রিকেটার এখন পর্যন্ত নজর কারা তেমন কিছু দেখাতে পারছেন না। বাংলাদেশের বিপক্ষে চলমান টি-টোয়েন্টি সিসিরজে পরাজিত হওয়া ভারতের প্রথম ম্যাচে পন্থ কিছু ভুল করায় যেন সমালোচনাটা আরো বেশি হচ্ছে।
ভারতের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘ঋষভ দুর্দান্ত প্রতিভা। অসাধারণ এক ক্রিকেটার। সময়ের সঙ্গে ও পরিণত হবে এবং খুব ভাল খেলবে।’
২১ বছরের পন্থকে কয়েক দিন আগেও মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সার্থক উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছিল। ঋদ্ধিমান সাহা যখন চোটের জন্য আঠেরো মাস বাইরে ছিলেন, সেই সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে দারুণভাবে উঠে আসেন পন্থ। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় সেঞ্চুরি করে দলকে ভরসা দেন। আশ্চর্যজনক ভাবে এর পরে বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয় না তাঁর। প্রথমে বিশ্বকাপ দলে দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে সুযোগ পান দীনেশ কার্তিক। যে নির্বাচন নিয়ে ঝড় বয়ে যায় দেশের ক্রিকেটে।
কে জানত, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সেই ঝড় ধেয়ে আসবে ঋষভের দিকেই। বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েও খুব দারুণ কিছু করতে না পারা। তার পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে কিপিং ব্যর্থতা, যা এখনও চলছে। ক্রমশ যেন চাপের পাহাড়ের নীচে চলে যাচ্ছেন পন্থ। নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্টের আহবান, ‘ঋষভকে কিছুটা সময় দিন। ও ঠিক ভাল করবে। অসাধারণ প্রতিভা ওর মধ্যে রয়েছে।’
ধোনির পরিণত মস্তিষ্কের অভাব কি ভোগাচ্ছে ভারতীয় দলকে? জিজ্ঞেস করলে সৌরভ সরাসরি জবাব দেননি। কিন্তু যা উত্তর দেন, তাতে ঋষভের পাশে দাঁড়ানোরই সংকেত স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘ঋষভও পরিণত হয়ে উঠবে। হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। ওকে সেই সময়টা দিতে হবে’
সৌরভ একা নন, ঋষভকে পরামর্শ দিতে এগিয়ে এসেছেন শ্রীলঙ্কার মহাতারকা কুমার সাঙ্গাকারাও। তিনি বলেন,’আমার পরামর্শ খুব বেশি ভাবার দরকার নেই। ব্যাপারগুলোকে খুব সোজাসাপ্টা রাখো। নিজের দুর্বলতার জায়গাটাও বুঝতে হবে। সেগুলো নিয়ে কাজ করতে শুরু করলে তবেই সংশোধন সম্ভব।’
সাঙ্গাকারা আরো বলেন ‘ঋষভের এখন দরকার পরিকল্পনা করে এগোনো। কিছুতেই যেন চাপ না বেড়ে যায় নিজের উপরে। ব্যাটিং নিয়েও ঋষভের সঙ্গে কারও কথা বলা দরকার। যাতে নিজের উপরে খুব বেশি চাপ অনুভব না করে। লক্ষ্যটা হওয়া উচিত, ওকে খোলা মনে খেলতে দেওয়া।’ উইকেটের পিছনে কী করা দরকার পন্থের? সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে সঙ্গকারা বলেছেন, ‘আমার মনে হয় কিপিং নিয়ে আরও আঁটসাঁট হওয়া দরকার ওর।’
চলতি টি-টোয়েন্টি সিরিজেও বেশ চাপের মধ্যে রয়েছেন পন্থ। তাঁর কিপিং দক্ষতা নিয়ে কথা তো উঠছিলই। এখন ব্যাটিং ফর্ম নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সঙ্গে ডিআরএস নেওয়ার ব্যাপারেও তাঁর মধ্যে পরিণতি বোধের ছাপ দেখা যাচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। সাঙ্গাকারা বলেন,’উইকেটকিপার হিসেবে পরিচ্ছন্ন এবং গোছানো হওয়াটা খুব দরকার। যদি সেটা করতে পারে, তা হলে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে ঋষভ। তখন অনেক সিদ্ধান্ত নিতেই ওর সুবিধা হবে। রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটবে।’
আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে পন্থকে এক নম্বর কিপার হিসেবে তুলে ধরার কথা ভাবছিল কোহলির দল। কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম সেই প্রক্রিয়ার পাশে প্রশ্নচিহ্ন বসিয়ে দিয়েছে। অবশ্য সাঙ্গাকারার মতে , ‘যদি বিশ্বকাপের কথাই ওঠে, তা হলে পন্থকে বুঝে নিতে হবে দলে ওর ভূমিকাটা ঠিক কী রকম থাকছে। অধিনায়ককে কখন, কী ভাবে পরামর্শ দিয়ে ও সাহায্য করতে পারে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।’
সাঙ্গাকারার সঙ্গে একমত ভিভিএস লক্ষ্মণ। তবে ঋষভের ব্যাটিং নিয়ে বেশি চিন্তিত লক্ষ্মণ। বলছেন, ”আইপিএল পর্যন্ত বোলারদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে নির্বাচকেরা। কিন্তু আমার মনে হয়, ঋষভের ব্যাটিংয়ের উপরে সকলের নজর থাকবে।’ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অতিরিক্ত সাহসী হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলায় পন্থ ইতিমধ্যেই সমালোচিত হয়েছেন। এমনকি, টিম ম্যানেজমেন্টও উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসার নিন্দা করেছে।
লক্ষ্মণ যদিও মনে করিয়ে দিতে চান, কঠিন সময়ে এক জন ক্রিকেটারের সমর্থনই দরকার হয়। তিনি বরেন,’প্রত্যেককে সাহস দিয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তোলাটাও খুব দরকার। সব সময় তাদের মনে করানোর দরকার নেই যে, বিশ্বকাপের অডিশন চলছে। সেটা করলে খেলোয়াড়দের উপরেই চাপটা বাড়ে।’