মূলত অবসর গ্রহণের সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শীর্ষ সামরিক পদে নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে। সে কথা মাথায় রেখেই প্রার্থীদের বিবেচনা করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস কাকে কোন পদে দেওয়া উচিত সে বিষয়ে ট্রাম্পকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তার সঙ্গে পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউজও উপযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বাছাইয়ে কাজ করছে। যে পদগুলোতে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘জয়েন্ট চিফস অব স্টাফসের’ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ন্যাটোতে নিযুক্ত মার্কিন বাহিনীর প্রধানসহ আরও বেশ কিছু পদ।
ম্যাটিস নিজে কতদিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে থাকবেন তা নিশ্চিত না হলেও এই বাছাই অনুযায়ী যেসব সেনা কর্মকর্তা মার্কিন সেনাবাহিনীর উচ্চ পদে আসীন হবেন তারা আগামী বেশ কয়েক বছর দেশটির প্রতিরক্ষা বিষয়ক সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করবেন। ২০১৯ সালে এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়ার কথা। ওই সময় নাগাদ বিমান বাহিনীর জেনারেল পল সেলভা অবসর গ্রহণ করবেন। বর্তমানে তিনি ‘জয়েন্ট চিফস অব স্টাফসের’ ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ পদে থাকার কারণে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠাগুলোর তদারকি তার হাতে ন্যস্ত। এর পাশাপাশি শত শত কোটি ডলারের সামরিক বাজেট প্রস্তুত ও নতুন অস্ত্র কেনার বিষয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ওই পদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে থাকা জেনারেল ভিনসেন্ট ব্রুকসকে এগিয়ে থাকা প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ করার অভিজ্ঞতার সূত্রে তিনি ট্রাম্পকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে যথাযথ পরামর্শ দিতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
মার্কিন ‘জয়েন্ট চিফ অব স্টাফসের’ বর্তমান চেয়ারম্যান জেনারেল জোসেফ ড্যানফোর্ড। ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি দুই বছর পূরণ করতে যাচ্ছেন ওই পদে। জয়েন্ট স্টাফসের চেয়ারম্যানই মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রধান সামরিক উপদেষ্টা।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিতে হয় ভিন্ন ভিন্ন বাহিনী থেকে। ফলে সেনাবাহিনীর ব্রুকসকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিলে সেনাবাহিনীর আরেক জেনারেল মার্ক মিলেকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তাকে চ্যারম্যান পদে নিয়োগ করার উপযুক্ত প্রার্থী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সেক্ষেত্রে বিমান বাহিনীর জেনারেল গোল্ডফিন চেয়ারম্যান পদের জন্য বিবেচিত হতে পারেন। এমন পদে বিমান বাহিনীর কাউকে নিয়োগ দিলে তিনি ট্রাম্পের মহাকাশ বাহিনীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারবেন। ১৯৯৯ সালে সার্বিয়া গোল্ডফিনের বিমানে গুলি চালানো হয়েছিল। এফ-১৬ বিমানটি ভূপাতিত হলেও বেঁচে গিয়েছিলেন গোল্ডফিন, যিনি এখন মার্কিন বিমান বাহিনীর ‘চিফ অব স্টাফ।’
এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরেকজন প্রার্থী বিমান বাহিনীর জেনারেল জন হেটন, যিনি বর্তমানে ‘স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের’ প্রধান। পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে তার রয়েছে গভীর জ্ঞান। ২০০৫ সাল থেকে চেয়ারম্যান পদে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা নিয়োগ পাননি। তাই এবার সেখান থেকেই একজনের ‘জয়েন্ট চিফস অব স্টাফসের’ চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সর্বশেষ যে শীর্ষস্থানীয় সামরিক পদটির কথা উল্লেখ করেছে সিএনএন সেটি হচ্ছে ন্যাটোর মার্কিন কমান্ডারের পদ। এই পদে আসীন কর্মকর্তাই রাশিয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সামরিক পরামর্শ দেন। বিমান বাহিনীর জেনারেল টড ওল্টার্সকে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এ পদে। তিনি বর্তমানে ইউরোপে মার্কিন বিমান বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর ন্যাটোতে থাকা বর্তমান মার্কিন কমান্ডার হচ্ছেন জেনারেল কার্টিস স্ক্যাপ্যারোটি। তারও অবসর গ্রহণের সময় হয়ে এসেছে।
এছাড়া, ইরাক, সিরিয়া ,আফগানিস্তানসহ আরব অঞ্চলে মার্কিন সামরিক তৎপরতার নেতৃত্ব এখন জেনারেল জোসেফ ভোটেলের হাতে। তার অবসরে যাওয়ার সময় নির্ধারিত হয়ে রয়েছে। এই পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন মেরিন কর্পসের লেফটেনেন্ট জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি।
বিশ্বজুড়ে মোতায়েন করা মার্কিন বিশেষ বাহিনীর কমান্ডার এখন সেনাবাহিনীর লেফেটেনেন্ট জেনারেল রেমন্ড। তার স্থলে ‘ইউএস স্পেশাল অপারেশন কমান্ডের’ দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন লেফটেনেন্ট জেনারেল রিচার্ড ক্লার্ক।