ডেস্ক রিপোর্ট:
চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের নজির শাহ মাজারের পেছনে বাইশ মহল্লার কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন গিটার লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু।
আইয়ু্ব বাচ্চুর মামাত ভাই মোহাম্মদ মামুন বার্তা২৪কে বলেন- চট্টগ্রামের বায়তুল ফালাহ মসজিদের ময়দানে সন্ধ্যায় আইয়ুব বাচ্চুর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই সরাসরি কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
গত ১৮ অক্টোবর সকালে ঢাকায় নিজের বাসায় আইয়ুব বাচ্চুকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
১৯ অক্টোবর বাদ জুম্মা জাতীয় ঈদগাহের পাশে হাইকোর্টের মসজিদে আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে রাখা হয় তার কফিন। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেখানে মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়।
পরে ২০ অক্টোবর সকালে ইউএস বাংলার একটি বিমানে করে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। রাখা হয় তার নানার বাড়িতে। সেখানেই প্রিয় তারকাকে শেষবার দেখার জন্য জড় হন হাজারো মানুষ।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবির দলনেতা আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক। ভক্তদের কাছে তিনি ‘এবি’ নামেও পরিচিত। ঢাকার মগবাজারে তার নিজের স্টুডিও এবি কিচেন আছে। সেখানেই গান তৈরি ও কনসার্টের আগে অনুশীলন করতেন তিনি।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৮ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের মাধ্যমে সঙ্গীতজগতে তার পথচলা শুরু হয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোলস ব্যান্ডে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি।
১৯৯১ সালে এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। এর প্রথম অ্যালবাম ‘এলআরবি’ বাজারে আসে ১৯৯২ সালে। এটাই দেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম। এলআরবির অন্য অ্যালবামগুলো হলো ‘সুখ’ (১৯৯৩), ‘তবুও’ (১৯৯৪), ‘ঘুমন্ত শহরে’ (১৯৯৫), ‘ফেরারী মন’ (১৯৯৬), ‘স্বপ্ন’ (১৯৯৬), ‘যুদ্ধ’ (২০১১), ‘স্পর্শ’ (২০১৩)।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ হলো তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। তার সাফল্যের শুরুটা হয় দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’র (১৯৮৮) মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালে বাজারে আসে তার তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। এর প্রায় সব গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ‘আমিও মানুষ’ গানগুলো। তার অন্য একক অ্যালবামগুলো হলো ‘সময়’ (১৯৯৮), ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কি’ (২০০২), ‘দুটি মন’ (২০০২), ‘কাফেলা’ (২০০২), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’ (২০০৮), ‘বলিনি কখনো’ (২০০৯), ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫)।
আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘চলো বদলে যাই’। এর কথা ও সুর তারই। শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় আরও রয়েছে ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’, ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’, ‘তারা ভরা রাতে’, ‘এখন অনেক রাত’ ইত্যাদি।
রক ঘরানার গানের এই শিল্পী আধুনিক আর লোকগীতিতেও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। বেশকিছু চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান ‘লুটতরাজ’ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’। এছাড়া বড় পর্দার জন্য তিনি গেয়েছেন ‘আম্মাজান’, ‘ভুলে গেছি জুতোটার ফিতেটাও বাঁধতে’ (চোরাবালি), ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’ (সাগরিকা), ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি প্রেম আমার উপরে পড়েছে’ (ব্যাচেলর)।