নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি মুশফিকুর রহিমের। এরপর আরো দুজন তার সঙ্গে এই এলিট তালিকায় যোগ দিয়েছেন; তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। তবে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির এলিট তালিকায় নিজেকে আরো ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন মুশফিক। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির একমাত্র কৃতিত্ব এখন মুশফিক রহিমের। ঢাকা টেস্টের প্রথমদিন সেঞ্চুরির উল্লাসে মেতেছিলেন। দ্বিতীয়দিন আনন্দে ভাসলেন ডাবল সেঞ্চুরির গর্বে।
১৪১ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে মুশফিক রহিমই প্রথম উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করলেন। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা ও ব্রেন্ডন কুরুপ্পু, জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি, ও পাকিস্তানের তসলিম আরিফ ও ইমতিয়াজ আহমেদ-বিশ্বের এই উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যানদের ডাবল সেঞ্চুরির তালিকায় এখন সবার ওপরে মুশফিক রহিমের নাম। এরা সবাই টেস্টে একটি করে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। মুশফিক দুটি।
টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির শুরু হয়েছিলো তার হাত ধরেই। সর্বশেষ ডাবলও এলো তার ব্যাটেই! এই ‘প্রথম’ এর সঙ্গে আরো অনেক ‘প্রথম’কে সঙ্গী করলেন মুশফিক। ঢাকার মাঠে এটাই তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। আর সেই প্রথমটাই হলো ডাবল সেঞ্চুরি! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও এটা তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি, আর সেটাই হলো ডাবল! শুধু রানের হিসেবেই নয়, বলের হিসেবেও এটা মুশফিকের সবচেয়ে লম্বা টেস্ট ইনিংস। ২০১৩ সালে গল টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঠিক পাক্কা ২০০ রান করেছিলেন মুশফিক। সেই ইনিংস খেলতে তার লেগেছিলো ৩২১ বল। টেস্টে এতদিন সেটাই ছিলো মুশফিকের সবচেয়ে বেশি বলের খেলা ইনিংস। ঢাকা টেস্টে নিজের সেই রেকর্ডকেও পেছনে ফেললেন। ডাবল সেঞ্চুরি এল তার ৪০৭ বলে। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে রান যখন ৫০০ স্পর্শ করলো মুশফিকের ব্যক্তিগত রান তখন ২০৭।
বাংলাদেশের হয়ে সময়ের হিসেবে সবচেয়ে লম্বা টেস্ট ইনিংস খেলার রেকর্ড এতদিন ছিলো আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দখলে। ঢাকা টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিতে সময়ের সেই হিসেবেও আমিনুলকে পেছনে ফেললেন মুশফিকুর রহিম। ২০০০ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে নিজের ১৪৫ রানের সেঞ্চুরির ইনিংসে আমিনুল সময় নিয়েছিলেন ৪৩৫ মিনিট। মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরি করলেন ৫৬৪ মিনিট খেলে।
চা বিরতির সময় মুশফিকের রান ছিলো অপরাজিত ১৯৫ রান। বল খেলেছেন ৩৯৩টি। ডাবল সেঞ্চুরি থেকে পাঁচ রান দুরে। আম্পায়ার চা বিরতির ঘোষণা দিতেই মুশফিক হেঁটে নয়, প্রায় দৌড়ে ড্রেসিংরুমে ছুটলেন। বোঝাই যাচ্ছিলো দ্রুত ফিরে তাড়া আছে জেনেই ছুটছেন মুশফিক। দিনের শেষ সেশনে মাঠে নেমেই ডাবল সেঞ্চুরির জন্য বেশিসময় নিলেন না। সেই পাঁচ রান নিতে খেললেন আরো ১৪ বল। মাভুতার আগের ওভারে সিঙ্গেলস নিয়ে ১৯৯ রানে পৌছে যান মুশফিক। সিকান্দার রাজার করা পরের ওভারেই পুল শটে সিঙ্গেলস নিয়ে ডাবল সেঞ্চুরির আনন্দে মেতে উঠলেন। জোরের দৌড়ে সিঙ্গেলস রান পুরো করেই হাতের গ্লাভস খুলে ফেললেন। ব্যাট মাটিতে ফেলে দিলেন। গ্যালারির দিকে তাকিয়ে দু’হাতের তালু দিয়ে হৃদয় আঁকলেন! বুক ঠুকলেন ডানহাতের মুঠোয়। আনন্দ উদযাপনের উপসংহার পর্বে মাটিতে সেজদা দিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানালেন।
ঢাকা টেস্ট ব্যাটসম্যান মুশফিককে হাত উজাড় করে অনেককিছুই দিলো!