নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ ও জেলার প্রভাবশালী নেতা একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, রাজনীতি করতে আসছি, ধান্দা করতে আসি নাই। দিনে আওয়ামী লীগ আর রাতে জামাত, ওই ধান্দার রাজনীতি শামীম ওসমান করে না।
মহান স্বাধীনতা দিবস এবং মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ নির্মূলে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার (২ মার্চ) বিকেলে নগরীর ২নং রেলগেইট এলাকায় মিডটাউন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে এই সভার আয়োজন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন করার জন্য রাজনীতি করতে আসি নাই। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাইতে রাজনীতিতে এসেছিলাম। আমরা সেই পরিবার, যার বাবা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মন্ত্রিত্বের জন্য ডাক পেয়েও তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ সেই সময় অনেকেই বঙ্গবন্ধুর লাশের সাথে বেঈমানী করে সংসদে গিয়েছিলেন। আমার ভাই বাসর রাতে নতুন বউকে ঘরে রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাইতে কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। অনেকেই বড় আওয়ামী লীগার সাজেন। মুক্তিযোদ্ধের নাম বেচে বড়লোক হয়েছেন। অথচ সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হওয়া সত্বেও আমার বাবা জেলে থাকা অবস্থায় টাকার অভাবে যখন কলেজের ফরম পূরণ করতে পারছি না, তখন কলেজের প্রিন্সিপাল নিজের পকেটের টাকা দিয়ে আমাকে পরিক্ষা দিতে সুযোগ দেন। আমাদের পৈত্রিক বাড়িটি যখন নিলামে উঠেছিল, তখন নারায়ণগঞ্জের মানুষ একটাকা দুই টাকা করে চাঁদা তুলে নিলামের হাত থেকে বাড়িটি রক্ষা করেছিলেন। জেল থেকে বের হয়ে আমার বাবা বলেছিলেন, রাজনীতি করতে হলে গরীবের জন্য করো। আমরা সেটাই করছি। গরীব মানুষের পক্ষে রাজনীতি করছি। আর সেখানেও কেউ কেউ প্রশ্ন করে, হকারদের জন্য, শ্রমিকদের জন্য শামীম ওসমানের এতো জ্বলে কেন? কেন ওরা কি মানুষ না! ওদের রক্ত কি রক্ত না! আজ এমপি আছি কাল নাও থাকতে পারি। এমপি-মন্ত্রি হওয়া বড় কথা নয়। দুইবার মন্ত্রীত্ব দিতে চেয়েছিল। আমি নেই নাই। প্রধানমন্ত্রীর মতো এত বড় মাপের মানুষের মন্ত্রীসভায় ঠাঁই হওয়ার যোগ্যতা আমার নাই। আমি শেখ হাসিনার একজন কর্মী হয়েই থাকতে চাই। যতোদিন বেঁচে আছি, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাবো।
শামীম ওসমান বলেন, রাজপথে সমাবেশ নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন এবং বলছেন। আমি জানি এই সমাবেশের কারণে অনেকের ভোগান্তি হচ্ছে। এর কারণে আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই। যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের জন্য একদিন কষ্ট করলে কিছুই হয় না। কিন্তু এই সমাবেশের কারণে আ’লীগের নেতাকর্মী দের কষ্ট হয় না। যারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, তাদের কষ্ট হয় না। কারণ এ রাজপথেই আওয়ামী লীগের জন্ম। রাজপথেই আওয়ামী লীগের সমাবেশ হবে।
তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশ নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলেছেন। কিছু পত্রিকায় লেখা হয়েছে এই সমাবেশের কারণে নাকী পুলিশের উপড় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বলবে। কিন্তু আজ এখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ দলের প্রতিটি সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত রয়েছে। কারা এসব করছে আমি জানি। আমি শুধু নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে বিচার দিবো।
মাদক ব্যবসায়ীদের হুংকার দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, অনেকেই আমার ডানে বামে থেকে আমার সাথে ছবি তুলেন। আবার এলাকায় গিয়ে হয়তো আমার নাম ভাঙ্গিয়ে মাদক বিক্রি করেন। আমার সামনে তো সবাই ভালো। সংশোধন হউন। ছাড় হবে না। আমার নেত্রীর বদনাম করে, দলের বদনাম করে কেউ কোন কাজ করলে শামীম ওসমানের হাত আপনার ঘাড়ে ধরবে। খেলার চেষ্টা কইরেন না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, ইভটিজিং থেকে বাঁচতে চায়। এসবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম।
সাংসদ বলেন, আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। শুধু আওয়ামী লীগ না, স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তিকে নিয়ে কাজ করতে হবে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোঃ শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, সহ সভাপতি ওয়াজেদ আলী খোকন, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী প্রফেসর শিরিন বেগম, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর শারমিন হাবীব বিন্নি, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম রাফেল প্রধান, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু প্রমুখ।