সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের ছাদ। শুরুতেই দু’একজন লোক এদিক সেদিক উঁকিঝুকি মারছিলেন। সন্ধ্যার পরে ধীরে ধীরে লোকজন বাড়ছিল। কিছুক্ষণ পরে বেশ কয়েকজন লোক জমে গেল। এরপর ছাদের মিলনায়তন কক্ষে চালানো হলো মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ঊন মানুষ’ নাটকটি। এক ঘণ্টারও বেশি দৈর্ঘ্যের এই নাটক উপস্থিত লোকজন বেশ আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করেন।
নাটক শেষ হতেই খেয়াল হরো সংস্কৃতি কেন্দ্রের ছাদ প্রায় সম্পূর্ণ ভ’রে গেছে। অভিনেতা, নির্মাতা ও লেখক হুমায়ূন সাধুকে স্মরণ করে কয়েকজন তরুণ উদ্যোগ নিয়ে আয়োজন করে স্মরণ সভার। আয়োজকদের একজন অপূর্ণ রুবেল, ‘আমরা স্মরণসভা নিয়ে বন্ধু-বান্ধবেরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলা। কিন্তু সেই ডাকে সাড়া দিয়ে এতো লোকজন আসবে ভাবিনি।’
এরপর শুরু হয় স্মৃতিচারণ। হুমায়ূন সাধুকে নিয়ে কথা কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তার বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীরা। রেদওয়ান রনি হুমায়ূন সাধুকে নিয়ে নির্মাণ ও অভিনয় জীবনের শুরুর দিকের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামে গিয়েছি শুটিংয়ে। সেখানে আমাদের রুমে এল হুমায়ূন কবির। সে পরিচয়। এরপর আমরা একসাথেই থাকতাম যেহেতু আমাদের মাঝে অজস্র স্মৃতি রয়েছে। আমরা দুষ্টুমি করতাম, মজা করতাম কিন্তু অন্য কেউ তাঁকে নিয়ে মজা করতে চাইলে সেটা আবার সবাই মিলে প্রতিবাদ করতাম।’
কথা বলতে গিয়ে আইসক্রিম ছবির নির্মাতার কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসে, একাধিকবার চোখ মোছেন। হুমায়ূন সাধুকে স্মরণ করে কথা বলেন, অভিনেতা আনন্দ খালেদ, ইশতিয়াক আহমেদ, হিমু আকরাম, ইমেল হক, হারুন, হুমায়ূন সাধুর স্বজনেরাসহ অনেকেই। উপস্থিত হয়েছিলেন অভিনয় শিল্পী, নির্মাতা,কণ্ঠশিল্পী,সাংবাদিক,সাহিত্যিকসহ সাধুর নীরব শুভানুধ্যায়ীরা।
গত ২৫ অক্টোবর মারা যান হুমায়ূন সাধু। নয় ভাইবোনের মধ্যে হুমায়ুন সাধু সপ্তম। চট্টগ্রামে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ২০০১ সালে নিজের তাগিদেই বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন সাধু। একপর্যায়ে কাজ শুরু করেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সহকারী পরিচালক হিসেবে। একই সঙ্গে লেখালেখি করতে থাকেন।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন হুমায়ূন সাধু। এরপর অসংখ্য নাটক, টেলিছবি, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করেছেন। কাহিনি ও চিত্রনাট্য লেখার পাশাপাশি তিনি পরিচালনা করেছেন। এবার বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় হুমায়ূন সাধুর লেখা একটি বই বেরিয়েছে। বইয়ের নাম ‘ননাই’।