নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী শান্তিরবাজার এলাকার ত্রাস হাবিবুর রহমান হাবু ওরফে ডাকু হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় ডাকু হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনী আধিপত্য বিস্তার করতে এলাকার ২ নিরীহ যুবককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে। এবাহিনীর অত্যাচার-জুলুম, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, নির্যাতন, ভূমিদস্যুতা ও ২ যুবককে কুপিয়ে আহত করার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সকালে এলাকার ৬ গ্রামের সাধারণ মানুষ শান্তিরবাজার এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এসময় ডাকু হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনী অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে ডাকু হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনীর শুরু হয় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। মুহূর্তের মধ্যে পুরো শান্তির বাজার এলাকা রনক্ষেত্রে পরিনত হয়। এ ঘটনায় বিক্ষোভকারী ও পথচারীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। ঘটনার পর থেকে পুরো শান্তিরবাজার ও এর আশপাশের এলাকা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের শান্তিরবাজার, চেঙ্গাকান্দী এলাকায় ডাকাত সর্দার হাবিবুর রহমান হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। করোনার প্রার্দুভাবের মধ্যেও গত ১৫ দিনে এ বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডাররা নিরীহ ৬ ব্যক্তিসহ কমপক্ষে ১০ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেছে। ভাংচুর ও লুটপাট করেছে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। গত ২৮ মে চাঁদার দাবীতে শান্তিরবাজারে নজরুল ইসলামের দোকান ভাংচুর করে হাবিবুর রহমান হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনী। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চেঙ্গাকান্দি গ্রামের কয়েকজন যুবক হাবুকে একা পেয়ে মারধর করে। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গত রোববার সন্ধ্যায় হাবুর নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র দা, রাম দা, টেঁটা ও লোহার রড নিয়ে শান্তিরবাজার মোড়ে চাঁদাবাজিতে বাঁধা দেওয়া যুবক শাকিল ও উজ্জলকে পেয়ে কুপিয়ে আহত করে। আহত অবস্থায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সকালে চেঙ্গাকান্দী এলাকার ইউপি সদস্য ফারুক মিয়ার নেতৃত্বে এলাকাবাসী হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনীর বিচার দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুনরায় হাবিবুর রহমান হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনী বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালায় ও ৬টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। শুরু হয় গ্রামবাসীর সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ। এসময় এলাকার আরও শতশত নারী-পুরুষ লাঠিসোটা, টেটা, বল্লব ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাবিবুর রহমান হাবু ডাকু বারদী ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল হকের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সে একজন ইউপি সদস্য। একারণে হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। এমন কি হামলা ও নির্যাতনের শিকার ভূক্তভোগী কেউ মামলা করতেও সাহস পায় না। হাবুর বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, ভোট কেন্দ্র দখল ও চুরিসহ ৭/৮টি মামলা রয়েছে।
হামলায় আহত শাকিল মিয়া জানান, উপজেলার বারদী ইউপির মান্দারপাড়া এলাকার একাধিক মামলার আসামী হাবিবুর রহমান হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় এ বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডাররা এলাকায় চাঁদাবাজী, ছিনতাই, ট্রাক ভর্তি গরু চুরি, বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ডাকাতি, ভূমিদস্যুতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ অনেক নিরপরাধ লোককে মারধর ও ভোট কেন্দ্র দখলসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করেছে। এবাহিনীর সদস্যরা বিনা কারণে তাকে কুপিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করেছে।
এদিকে গতকাল ডাকু হাবু বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার খবর পেয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইদুল ইসলাম ও সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এসময় তারা গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে হাবিবুর রহমান হাবুর বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠে। এ ঘটনায় গ্রামবাসীর পক্ষে আহত এক যুবকদের চাচা ইসহাক মিয়া বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান হাবু বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা।
সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই ঘটনায় হাবু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক ২টি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বসে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।