নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার লামাপাড়া এলাকা থেকে অপহরণের পর হত্যা ও গুমের শিকার মো. মামুন নামে এক যুবকের ৬ বছর পর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় মামলার তদন্তকারী ৩কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ও এসআই জিয়াউদ্দিন উজ্জলকে ফের স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য তলব করেছেন আদালত।
রোববার (১ নভেম্বর) দুপুরে মামলাটির ধার্য তারিখে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারহানা ফেরদৌসের আদালতে কাছে লিখিত ভাবে তাদের তদন্ডে ভুল-ভ্রান্তির কথা স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ওই ৩ কর্মকর্তা। আদালত ওই ৩ কর্মকর্তার লিখিত ক্ষমা প্রার্থনা আবেদন গ্রহণ না করে আগামী ৫ নভেম্বর স্বশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেন।
মামলাটির আসামী পক্ষের আইনজীবী এড. এমদাদ হোসেন সোহেল বলেন, রোববার মামলার এহাজারভুক্ত আসামী তাসলিমা, তার বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সোহেল ও সাগর এবং মামা সাত্তার মোল্লা বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের তারিখ ধার্য ছিল। যেহেতু ভিকটিম জীবিত ফিরে এসেছে এবং আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছে তাই এই মামলা চলার কোন যৌক্তিকতা নেই বলে আদালতে লিখিত আবেদন দেই। আদালতে সেই আবেদন গ্রহণ করেছেন। এই মামলার ৩ কর্মকর্তা তাদের তদন্ডে ভুল-ভ্রান্তির জন্য আদালতের কাছে লিখিত ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আদালতে সেটি গ্রহণ না করে ৫ নভেম্বর স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১০ মে মামুন নামে এক যুবককে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুমের অভিযোগ এনে ঘটনার দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন নিখোঁজ মামুনের বাবা আবুল কালাম। ওই মামলায় ৬ জনকে বিবাদী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামুনকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগ করা হয়েছিল। মামলায় আসামী করা হয়েছিল, তাসলিমা, তার বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সোহেল ও সাগর এবং মামা সাত্তার মোল্লাকে। তাদের প্রত্যেককেই গ্রেপ্তার করেছিল মামলার তদন্ড কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার এস আই মিজানুর রহমান। তিনি আদালতে আসামিদের রিমান্ড চাওয়ার সময়ে আর্জিতে উল্লেখ করেন, খালাতো বোন তাসলিমা ২০১৪ সালের ১০ই মে মামুনকে ডেকে নিয়ে কৌশলে অপহরণ করে বিষাক্ত শরবত পান করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়ে গুম করেছে। এরপর অল্প কিছুদিন মামলাটি তদন্ত করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। কিন্তু আসামীদের কাছ থেকে কোন তথ্য উদঘাটনে ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তীতে মামলাটি তদন্ডে দায়িত্ব পায় সিআইডি পুলিশ।
সিআইডি’র সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালতে ৬ আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন। সাক্ষী করা হয়েছিল ২১ জনকে।
চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১০মে তাসলিমাকে দিয়ে কৌশলে মামুনকে বাড়ি ডেকে আনা হয়। পরবর্তীতে মামনুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাসলিমা। কিন্তু বিয়েতে রাজী না হওয়াতে বিবাদী ৬ জন মিলে মামুনকে কোমল পানির সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে সিএনজি চালিতা অটো রিকশা করে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। তবে কোথায় কিভাবে কি অবস্থায় রাখা হয়েছে সেটা জানা যায়নি।
ওদিকে গত ২ অক্টোবর এই মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও ওই দিনই কথিত অপহরণ খুন ও গুমের শিকার মামুন আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে স্বশরীরে এসে উপস্থিত হয়। ওই সময় আদালত ভিকটিম মামুনকে এড. শেখ ফরিদের জিম্মায় দেন।