নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
সদ্য সমাপ্ত শারদীয় দূর্গোৎসবে নারায়ণগঞ্জের শ্রেষ্ঠ প্রতিমা শিল্পীদের পুরস্কিত করেছে জেলা প্রশাসন। সে সাথে ৯টি বিভাগে ১৯টি মন্দিরকে পুরস্কার দেওয়া হয় আর জেলার প্রত্যন্ত এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির ২৮টি পূজা মন্ডপকে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট যুথিকা সরকার, জাতীয় পরিষদের সদস্য বাসুদেব চক্রবর্তী, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সম্মানিত ট্রাস্টি পরিতোষ কান্তি সাহা, লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, সাধু নাগ মহাশয় আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক তারাপদ আচার্য্য, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অমল কুমার পোদ্দার, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাশ, মহানগরের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, জেলা হিন্দু সংস্কার সমিতির সভাপতি কমলেশ সাহা, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুণ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাহা, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক উত্তম সাহা, কোষাধ্যক্ষ সুশীল দাস, প্রচার সম্পাদক তপন ঘোপ সাধু, জেলা কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক হিমাদ্রী সাহা হিমু, ফতুল্লা থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রঞ্জিত মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমার দাস, সোনারগাঁ কমিটির সভাপতি লোকনাথ দত্ত, বন্দর কমিটির সভাপতি শংকর দাশ, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, আড়াইহাজার কমিটির আহ্বায়ক হারাধন চন্দ্র দে, সদস্য সচিব বিপ্লব ভৌমিক, কৃষ্ণ আচার্য্য প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন এবারের শারদীয় দূর্গোৎসব সফলভাবে উদযাপিত হওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। ইতিহাস ঐতিহ্যে নারায়ণগঞ্জের সুনাম দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ শ্লোগানকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ উৎসব মুখর পরিবেশে শারদীয় দূর্গোৎসব পালন করে থাকে, এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাম্প্রদায়ীক সম্প্রিতির ধারাবাহিতা আসছে শ্যামা পূজাতেও অক্ষুন্ন থাকবে বলে আশা করছি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ফেসবুকের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কোথাও কোন কিছু ঘটে থাকলে প্রথমে আমাদেরকে জানাবেন আর কোনরূপ গুজবে কান দিবেন না। সকলের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা কাজ করে যাবো।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, নারায়ণগঞ্জে এই প্রথমবার শারদীয় দূর্গোৎসবের প্রতিমা শিল্পিদের পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে বিভিন্ন ক্যটাগরিতে ৪৭টি পূজা মন্ডপকে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন। মহতী এ আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন এবং এ কর্মকান্ডের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট যুথিকা সরকারকেরসহ জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের প্রতি নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপণ পরিষদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পূজা মন্ডপে ২০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একেএম সেলিম ওসমান।
আমরা সাংসদ একেএম সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানসহ সকল সংসদ সদস্যদের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেই সাথে শারদীয় দূর্গোৎসবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরপত্তার কারনে কোন প্রকার অপ্রিতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে এবারে দূগঅ পূজা উদযাপণ করতে পেরেছি। এ জন্য নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারনি অর রশিদসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ, র্যাব-১১ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ। আসছে শ্রামা পূজায়ও এ ধারাবািহতা অক্ষুন্ন রাখার দাবী জানাচ্ছি।
এ সময় শহরের দেওভোগে শ্রী শ্রী লক্ষ¥ী নারায়ণ মন্দির সংলগ্ন দেবোত্তর সম্পত্তি একটি পুকুর অবৈধভাবে দখল করার পায়তারা করা হচ্ছে মর্মে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলা পূজা উদযাপণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন।
অনুষ্ঠানে জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোপী নাথ দাশ এবং জেলা পূজা উদযাপণ পরিষদের সভাপতি দিপক কুমার সাহার সুস্থ্যতা কামনা করা হয়।
শ্রেষ্ঠ প্রতিমা শিল্পি বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন আমলাপাড়া সার্ব্বজনীন পূজা মন্ডপের প্রতিমা শিল্পি ধীরেন পাল, দ্বিতীয় স্থান অর্জণ করেন উকিলপাড়া হোসিয়ারী পূজা মন্ডপের প্রতিমা শিল্পি সুকুমার পাল এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন টানবাজার নতুন সার্ব্বজনীন পূজা মন্ডপের প্রতিমা শিল্পি প্রাণ গোপাল পাল।
শ্রেষ্ঠ পূজা মন্ডপের পুস্কার লাভ করে বিশ্ষ্টি ব্যাবসায়ী অমল কুমার পোদ্দারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সোনারগাঁয়ের পঞ্চমী ঘাট সার্ব্বজনীন পূজা মন্ডপ।
সাত্বিক পূজা মন্ডপ বিভাগে পুস্কার লাভ করে রামকৃষ্ণ মিশন পূজা মন্ডপ, সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম পূজা মন্ডপ, ১নং ঢাকেশ্বরী দেব মন্দির পূজা মন্ডপ ও শ্রী শ্রী রাম কানাই জিওর বিগ্রহ পূজা মন্ডপ।
জনসচেতনতামূলক বিভাগে পুস্কার পায় নয়ামাটি নতুন সার্ব্বজনীন পূজা মন্ডপ ও নিতাইগঞ্জ লক্ষ্মী মন্দির সার্ব্বজনীন পূজা মন্ডপ।
শ্রেষ্ঠ আলোকসজ্জা বিভাগে পুরস্কায় পায় টানবাজার বঙ্গবিহারী সার্ব্বজনীন পূজা মন্ডপ, আমলাপাড়া সার্ব্বজনীন পূজা মন্ডপ ও নয়ামাটি নতুন সার্ব্বজনীন পূজা মন্ডপ।
শ্রেষ্ঠ তোরণ বিভাগে পুরস্কার পায় উকিলপাড়া হোসিয়ারী পূজা মন্ডপ ও নগর খানপুর সিদ্ধিগোপাল আখড়া পূজা মন্ডপ।
ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনা বিভাগে টানবাজার নতুন সার্ব্বজনীন পূজা মন্ডপ ও শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ আখড়া বারোয়ারী পূজা মন্ডপ পুরস্কার লাভ করে।
নান্দনিকতা বিভাগে পুরস্কায় পায় শীতলক্ষ্যা শ্রী শ্রী সত্য নারায়ণ মন্দির পূজা মন্ডপ।
বিশেষ মন্ডপ বিভাগে দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ্য জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোপী নাথ দাশের চাষাঢ়া সার্ব্বজনীন পূজা মন্ডপকে সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়।
এছাড়াও প্রত্যন্ত এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির ২৮টি পূজা মন্ডপকে শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দেওয়া হয়।