নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বাংলাদেশে ফিরে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিবেন। তবে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগামী ৫ বছরের জন্য আবারো প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন প্রবাসীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি। সংযুক্ত আবর আমিরাতের আজমানে প্রবাসী নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মত বিনিময় সভায় সহ্রাধিক নারী-পুরুষ প্রবাসী ব্যবসায়ী ও শ্রমিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। যার মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষই ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন সদর ও বন্দর থানা এলাকায় বসবাসকারী প্রবাসী।
রোববার ২১ অক্টোবর রাত ৮টায় আজমান শহরে রামাদা হোটেলের ম্যাজিস্টিক হল রুমে নারায়ণগঞ্জ ও বন্দরে সকল নাগরিক সুযোগ সমৃদ্ধ আধুনিক ও ব্যবসা বান্ধব শহর এবং রপ্তানিমুখী শিল্প অঞ্চলে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে প্রবাসী নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
এরআগে প্রবাসী নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি আহম্মেদ মাহতাব উদ্দিন সভাপতির বক্তব্যে এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ রাজু শুভেচ্ছা বক্তব্যে, এমপি সেলিম ওসমান, শীতলক্ষ্যা সেতু-৩ নাসিম ওসমান সেতুর কাজ দৃশ্যমান হওয়া, খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরন, বন্দর ও নবীগঞ্জ খেয়াঘাট টোলমুক্ত এবং যাত্রীদের নদী পারাপারে সুব্যবস্থা করা, হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ও ৫নংঘাট-বন্দর ঘাটে পৃথক দুটি ফেরী সার্ভিস চালু, ব্যক্তিগত অর্থায়নে ৭টি স্কুল নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জ কলেজে নতুন ১০তলা ভবন নির্মাণ, বন্দরে কদমরসুল কলেজকে সরকারীকরণ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা সহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে উন্নয়নের এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আবারো তাঁকে প্রার্থী হওয়ার জন্য জোরালো দাবী রাখেন।
বিশেষ করে বন্দরের মদনগঞ্জের শান্তিচরে দেড় হাজার একর জমির উপর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত অর্থনৈতিক অঞ্চল নীটপল্লী নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। সেই সাথে নীটপল্লীতে ব্যক্তিগত ভাবে অর্থ বিনিয়োগের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন আজমানের অসংখ্য নারায়ণগঞ্জের প্রবাসী ব্যবসায়ীরা এবং এমপি সেলিম ওসমানকেই দায়িত্ব নিয়ে এটি সম্পন্ন করতে হবে বলে তারা জোর দাবী রাখেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে এমপি সেলিম ওসমান দেশে ফিরে তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর নিজের প্রার্থীতার ব্যাপারে চুড়ান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করতে আগামীতে আবারো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার আহবান রাখেন।
আজমানে কর্মরত প্রবাসী কর্মজীবীদের ইউ.এ.ই’তে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়ে দ্রুত স্কুল নির্মাণের কাজ শুরু করার আশ্বাস প্রদান করেন। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বাড়ি ভাড়া করে বাংলাদেশ কাউন্সিল গঠন করে ইউ.এ.ই’তে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সমন্বয়ে কর্মজীবী প্রবাসীদের আরো বেশি সুযোগ সুবিধা প্রদানের পথকে সুগম করার ঘোষণা দিয়েছেন এমপি সেলিম ওসমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মিসেস নাসরিন ওসমান বলেন, বিদেশে এসেও মনে হচ্ছে তিনি নারায়ণগঞ্জের বন্দরেই আছেন। বর্তমানে এমপি সেলিম ওসমান শারীরিক ভাবে খুবই অসুস্থ্য এবং প্রতিদিন উনাকে অনেক গুলো ওষুধ সেবন করতে হয়। আপনাদের ভালবাসা এবং দোয়ার পাশাপাশি শক্ত মনোবলের কারনে যেই উন্নয়ন কাজ পরিচালিত হচ্ছে উনি যদি আগামীতে নির্বাচনে প্রার্থী নাও হন তারপরেও আপনাদের পাশে থেকে অসম্পূর্ন কাজ গুলো সম্পন্ন করবেন বলেন আজমান প্রবাসী ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের তিনি আশ্বস্ত করেন।
প্রবাসী নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের উপদেষ্টা হানিফা মিয়া বক্তব্যে, তাঁর নিজ এলাকা বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন এবং বর্তমানে ১টি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ শহরের রূপান্তরের বাকী কাজ গুলো সম্পন্ন করতে আগামী নির্বাচনে প্রবাসী ব্যবসায়ীদের দাবী প্রতি সম্মতি জানাতে সেলিম ওসমানের প্রতি অনুরোধ রাখেন।
উপদেষ্টা আমজাদ হোসেন, হাসান মাহমুদ, কোষাধ্যক্ষ গাজী মাসুদ সেলিম ওসমানের নির্বাচনী এলাকার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ৭টি স্কুল নির্মাণের মাধ্যম ভবিষ্যত প্রজন্মকে আধুনিক এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুগম করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আবারো সেলিম ওসমানকে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ রাখেন।
এদিকে প্রবাসী শ্রমিকদের পক্ষে আজমান প্রবাসী বন্দর ইউনিয়নের পক্ষে জামির হোসেন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের পক্ষে সেলিম মিয়া, গোগনগর ইউনিয়নের পক্ষে শাকিব আহম্মেদ, মুছাপুর ইউনিয়নের পক্ষে কামাল হোসেন, এবং ধামগড় ইউনিয়নের পক্ষে ইকবার হোসেন আগামী সংসদ নির্বাচনে দলমত নির্বিশেষে সেলিম ওসমান ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। সেই সাথে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে উন্নয়নের কথা বাংলাদেশে সেলিম ওসমান ব্যতিত অন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন। প্রাচ্যেরডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জে যখন সোনালী আঁশ পাট ব্যবসায় পতন হলে তখন নারায়ণগঞ্জে প্রায় ২৪ শতাংশ মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এমপি সেলিম ওসমান বিকেএমইএ সৃষ্টির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারী শিল্পকে বৃহৎ আকার দিয়ে হোসিয়ারী পন্যকে নীটপন্য রূপে বিদেশে রপ্তানি শুরু করেন। যার ফলে লাখ লাখ বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং বেকারত্বের হার ২শতাংশে নামিয়ে আনতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে বিকেএমইএ মাধ্যমে নীটপন্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন। আশা করছি এমপি সেলিম ওসমানের হাত ধরে বাংলাদেশ নীটপন্য রপ্তানিতে খুব দ্রুত প্রথম স্থানে পৌছে যাবে। আমাদের বিশ্বাস আগামীতে সেলিম ওসমান সংসদ সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে কাঙ্খিত আরো অর্জনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের বন্দরকে সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে ১টি মডেল হিসেবে উপহার দিবেন।
দোয়া মাহফিলে ইমাম মেহেদী হাসান এর পবিত্র কোরান তেলোওয়াতের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভার কাজ শুরু করা হয়।