নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: অতীতের ভূল ত্রুটি ঠিক করে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে খানপুর হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে সম্পূর্ন ১৫০ শয্যার করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান। যেখানে আইসিইউ সহ পিসিআর ল্যাবের আরো একটি মেশিন সংস্থাপন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন তিনি। সেই সাথে হাসপাতালে বিদ্যমান অনিয়ম তদন্তে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতালে অনিয়মনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন। প্রয়োজনে দুদকের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
রোববার ২১ জুন বিকেল ৪টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এর জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির মাসিক সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা জানান সভার সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
সভা শেষে এমপি সেলিম ওসমান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা গত কয়েকদিন ধরে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করেছি। আমরা খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে করোনা হাসপাতালে রূপান্তর করতে যাচ্ছি। এখানে নারায়ণগঞ্জের মানুষের মাঝে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সত্যি কথা বলতে গেলে আমাদের ৩০০ শয্যা হাসপাতাল এখন ৩০০ শয্যায় নাই। এখানে ৫০০ শয্যা করার জন্য হাসপাতালের কেবিন ও দুটি ওয়ার্ডকে ভেঙ্গে উন্নয়ন কাজের জন্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এখানে মেডিকেল করার জন্য আশ্বস্ত করেছেন। প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকা কালীন সময় আমাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের দূভার্গ্য নানা জটিলতায় আমরা এর কার্যক্রম পুরোপুরি ভাবে শুরু করতে পারি নাই। নয়তো এতোদিনে বাংলাদেশে এটি একটি উন্নত হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়ে যেত। এ সময় তিনি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এর রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া প্রার্থনা করেন।
তিনি আরো বলেন, অনেকের মনে প্রশ্ন ৩০০ শয্যা হাসপাতালে মাত্র ৫০জন রোগী কেন। এখানে বিষয়টি হচ্ছে সাধারণ হাসপাতালের সাথে করোনা হাসপাতালের অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। এখন সাধারণ রোগী এখানে আসতে তাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। অনেক কিছুর পর ভিডিও কনফারেন্সেরা ডাক্তার শামসুজ্জোহা সঞ্চয়ের আহবানে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতায় আমরা পিআর ল্যাব স্থাপন করতে পেরেছি। সে সময় আমাদের জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন করোনা আক্রান্ত হয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।
এরমধ্যে গত ৪ দিন ধরে আমার নারায়ণগঞ্জের মানুষ কীট সংকটের কারনে করোনা টেস্ট করতে পারছেন না। সাধারণ মানুষের মাঝে আতংঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে কীট কোথায় গেল। কীট বিদেশ থেকে আমদানী করে আনা হয়। আমদানী আদেশ থাকার পরও যথা সময়ে সরবরাহ না করায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি যে কোন মুহুর্তে সমাধান হবে। আমাদের এই হাসপাতালের নামে অনেক বদনাম রয়ে গেছে। সেটি নিয়েই আমরা আজকে সভায় দীর্ঘ আলোচনা করে দেখেছি দীর্ঘ দিন ধরে এই হাসপাতালের তত্ত্ববধায়কের পিএ তার কোন বদলী নেই। সে দীর্ঘ দিন রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে তার কোন বদলী নেই। সেই টেন্ডার পরিচালনা করে সেই টেন্ডার দেয়। বিভিন্ন এন্টার প্রাইজের নাম দিয়ে খানপুর এলাকার একই ব্যক্তি এই টেন্ডার নিয়ে থাকে। সময় কাল ক্ষেপন করে একটি ইংরেজি পত্রিকায় টেন্ডারের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। যা সাধারণ মানুষ জানতে পারেনা টেন্ডারেও অংশ নিতে পারেনা। হাসপাতালে অনেক সমস্যা ছিল। রোগীদের বেডে পাখা ছিল না। বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা ছিলনা। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যক্তিগত ভাবে এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সহযোগীতা নিয়ে সেই সকল সমস্যা গুলোর সমাধান করেছি। নিরাপত্তার স্বার্থে সিটি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করে দিয়ে ছিলাম। যে সকল জায়গা দিয়ে হাসপাতালের জিনিস পত্র পাচার হয় দেখা গেল কয়েক মাসের মধ্যে সেই সমস্ত জায়গা গুলোর সিসি ক্যামেরা নষ্ট করা হয়। ওই ক্যামেরা গুলোর মাধ্যমে আমি এবং আমার কমিটি মোবাইল ফোনে হাসপাতালের অবস্থা দেখতে পারতাম। কিন্তু একটা দুষ্টু চক্র এ কাজে লিপ্ত রয়েছে। তারা কিছুতেই ক্ষ্যান্ত হচ্ছে না। আমাদের মনে হয় আমাদের হাসপাতালের একটা অডিট করা প্রয়োজন। হাসপাতালের বর্তমান সুপার ডাক্তার গৌতম সহ উনার আগে যারা ছিলেন তাদের সবারই একই কথা এমন সিস্টেম আগে থেকেই চলে আসছিলো। যার খেসারত আমরা এখন দিচ্ছি। যারা পাপী তারা দেশের এই দুর্যোগের সময়ও ক্ষ্যান্ত হচ্ছেন না।
তিনি আরো বলেন, এপ্রিল মাসে সরকার থেকে একটি বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়া হয়ে ছিল। যে সরকার থেকে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার নার্সদের থাকা খাওয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। সরকার থেকে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি তানভির আহম্মেদ টিটুর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ডাক্তারদের জন্য এবং আমি ব্যক্তিগত অর্থায়নে নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমী স্কুলে ডাক্তার নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের জন্য অস্থায়ী আবাসন সহ তাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ ব্যবস্থা চালু থাকবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে যে ব্যবস্থা নিয়েছি সেটির জন্য সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়ে ছিল। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে আমরা ওই ৩০ লাখ টাকার বিপরীতে আমাদের হাসপাতালে আনুসাঙ্গিত বিয়ষ গুলোর চাহিদাপত্র দিবো। বর্তমান পরিস্থিতিতে ডাক্তারদেরকে সম্মুখ যোদ্ধা বলা হচ্ছে। আর সম্মুখ যোদ্ধাদের পেছন থেকে যাদের সহযোগীতা করার কথা তারা যদি এমন কাজ করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আমি এবং জেলা প্রশাসক আগামীতে আবারো আলোচনা করবো। আমরা একটা অডিটের ব্যবস্থা করবো। যদি আমরা না পারি তাহলে আমরা অবশ্যই দুদকের সহযোগীতা নিবো। কেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের পিএ এর এমন রাজত্ব চলছে।
তিনি আরো বলেন, অন্যান্য হাসপাতালে গুলোতে দেখা যায় রোগীর জায়গা দিতে পারেনা। অথচ আমি গত ৫ বছরে দেখলাম না খানপুর হাসপাতালে সিট গুলোতে রোগী সম্পূন্ন হয়েছে। আমার কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ আসে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের পিএ এর শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়গনেস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠান এবং কিছু কিছু ক্লিনিকে উনার নামে বেনামে মালিকানা আছে বলে খবর পাওয়া গেছে। যেকোন উপায়ে আমাদের এগুলো তদন্ত করে বের করতে হবে এবং যাতে করে তার কোন কার্যক্রম না চলে সেজন্য মন্ত্রনালয়ে আমি চিঠি দিবো। নয়তো যারা আজকে সম্মুখ যুদ্ধ করছে তারা বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়বেন। প্রয়োজনে আমরা অন্য লোক আনবো। আর এসব কাজের সাথে যদি এলাকার কেউ জড়িত হয়ে থাকেন তাহলে তারা ওই এলাকায় থাকতে পারবেন বলে আমার মনে হয়না। আর নয়তো তাদের কাছ থেকে বিশাল অংকের ক্ষতিপূরন আদায় করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে সরকারী ভাবে ৩০ লাখ টাকার একটা বরাদ্দ এসেছে। আমরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে আরো প্রায় ১ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছি। সব মিলে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটা তহবিল গঠন করবো। আমরা চেষ্টা করবো যাতে করে আমরা ১৫০ সিটে করোনা রোগীর চিকিৎসা পারি। আমরা হাসপাতালে আইসিইউ চালু করতে পারিনি। আমরা মেশিন গুলো পেলেও আইসিইউ বেড ও আনুসাঙ্গিক জিনিস গুলো পাইনি। সেগুলো আমাদের আনতে হবে। আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে কিভাবে কি করা যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলোচনা করে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ১৫০ শয্যার একটি করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত করতে। আমরা চেষ্টা করবো প্রয়োজনে আরো একটি পিসিআর মেশিন বসানো যাতে করে আরো বেশি পরিমানে রোগীর টেষ্ট করা সম্ভব হয়। আমাদের সবাইকে আরো সাবধান হতে হবে যাতে করে হাসপাতাল থেকে কীট বেরিয়ে না যায়। কারন এর আগেও আমরা দেখছি হাসপাতাল থেকে ওষুধ বাইরে বিক্রি হয়েছে এবং পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে। আমি বেচে থাকতে নারায়ণগঞ্জের মানুষের কোন কষ্ট হতে দিবো না। আমি বেচে না থাকলেও এটা ৫০০ শয্যা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হবেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের আশ্বস্থ করেছেন। উনার ঘোষণা অনুযায়ী আমরা মেডিকেল কলেজ পাবোই। আমাদের সবাইকে কঠোর ভাবে এসব অনিয়ম প্রতিহত করতে হবে। আমি নারায়ণগঞ্জের সকলের কাছে সহযোগীতা চাই। আমি আমার ব্যবসায়ী ভাইদের সহযোগীতা চাই। আমি আমার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সহযোগীতা চাই। প্রয়োজনে আমরা তাকে জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত করবো। আমি সিভিল সার্জনের কাছে অনুরোধ করবো উনি যেন মেয়রের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে হাসপাতালটির দিকে নজর দেন। হাসপাতালটিতে যেন একটি কমিটি করে দেন। সাধারণ রোগীরা যেন সেখানে চিকিৎসা নিতে পারেন। এজন্য আমি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে অনুরোধ করবো উনি যেন ১০০ শয্যা হাসপাতালের দিকে একটু নজর দেন। বন্দরে আমাদের একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে সেখানেও একই অবস্থা আমরা সেখানেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির উন্নয়ন করবো। এজন্য আমি বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম রশিদ এর সহযোগীতা কামনা করছি।
সভা শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য কথা বলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন। এসময় তিনি সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন রেখে পুনরায় আলোচনার মাধ্যমে হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহনের দায়িত্ব নিয়েছেন। হাসপাতালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনে তিনি জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ন সবাইকে অর্ন্তভূক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে অল্প কিছু সময় চেয়েছেন।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) সেলিম রেজা, জেলা সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ আহম্মেদ, খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক গৌতম রায় প্রমুখ ।