নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: ধর্ষণের পর হত্যার স্বীকারোক্তি ৩ আসামির, দেড়মাস পর জীবিত ফিরলো কিশোরী জিসা মনি নামে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল। একমাস পর ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন শিশুটির বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। এ ঘটনায় তিন আসামি গ্রেফতারের পর আদালতে জবানবন্দিও দেয়। পুলিশ এমনটাই গণমাধ্যমে জানিয়েছিল।
তবে ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর রোববার (২৩ আগস্ট) ওই কিশোরীকে জীবিত পাওয়া গেলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন তার বাবা মা। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিনাবিচারে ১৫ দিন কারাগারে থাকা তিন আসামির জবানবন্দি নিয়ে। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশও এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের খোলাসা করে কিছুই বলছে না।
মামলায় দিশা মনির বাবা জাহাঙ্গীর উল্লেখ করেন, আসামি আব্দুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিত। এতে বাধা দিলে মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয়। ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ ফোনে ঠিকানা দিলে তার মেয়ে সেই ঠিকানায় যায়। পরে তাকে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। এরপর থেকেই তার মেয়ের কোন খোঁজখবর নেই।
মামলার পরে মেয়েটির মায়ের মোবাইল ফোনের কললিস্ট চেক করে রকিব নামে এক যুবকের সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়ে আব্দুল্লাহ দিশার সাথে যোগাযোগ করতো। ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে কল করে আব্দুল্লাহ। এ ঘটনায় মামলার পর রকিব, আব্দুল্লাহ ও খলিল নামে এক নৌকার মাঝিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
৯ আগস্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় আসামিরা। স্বীকারোক্তিতে তারা জানায়, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী দিশাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে।
তবে ২৩ আগস্ট রোববার সেই দিশা মনিকে জীবিত খুঁজে পায় তার বাবা-মা। বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে তার মা-বাবা দিশাকে উদ্ধার করে সদর থানায় নিয়ে এসে হস্তান্তর করলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
দিশা মনির মা জানান, বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় ইকবাল নামে একটি ছেলের সাথে গত দেড়মাস ছিল সে। দিশাকে বিয়ে করে তারা সেখানে বসবাস করছিলো বলে জানান তিনি।
এমন ঘটনায় নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। মামলা দায়েরের পর কি তদন্ত করলেন তদন্ত কর্মকর্তা? একটা ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় নিরপরাধ তিন জন ব্যক্তি কিভাবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন? কি কারণে তাদের বিনা বিচারে জেল খাটানো হচ্ছে?
এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আসাদুজ্জামান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি জানান, মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে আর সে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তবে এর আগে গ্রেপ্তারকৃত তিন জনের স্বীকারোক্তির ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।