নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন তোমরা আমরা ভাই, তোমার আমার বোন, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, দিনমজুর কেউ বাদ যাননি, আপনাদের দাবীর প্রেক্ষিতে আমি গত ২ নভেম্বর নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছি। আগামী নির্বাচন মহজোটের মাধ্যমে করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পাঁচ আসনে মহাজোট ইতোমধ্যেই এই মঞ্চে ঘোষণা দিচ্ছে। আজকের এই ঘরে আমরা আওয়ামীলীগ দেখছি , জাতীয় পার্টি দেখছি, এবং বিএনপিকেও দেখছি। এর থেকে সুখকর আর কি হতে পারে। আমি নারায়ণগঞ্জের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-যুবক-তরুণ, হিন্দু-মুসলিম বৌদ্ধ-খিস্ট্রান সকলের সাথে মিশেছি। সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু সাজেশন আমি নিয়েছি। নারায়ণগঞ্জের চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। আজকে আপনাদের এমন সবর উপস্থিতি প্রমান করেছে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে কোন ভেদাভেদ নাই। নারায়ণগঞ্জের মানুষ বুঝতে পেরেছে আগাতীতেও উন্নয়ন করতে হলে কোন মার্কা নয় একজন গোলাম প্রয়োজন। যেমন করে আমি গত সাড়ে ৪টি বছর আপনাদের গোলামী করেছি, আল্লাহ যদি আমাকে হায়াৎ দেন তাহলে ঠিক একই ভাবে আগামী ৫ বছর আমি আপনাদের গোলামী করবো। আপনারা শুধু আমাকে দোয়া করবেন আমি যেন সৎ পথে থেকে আমার গোলামী করার কাজ চালিয়ে যেতে পারি। আমার মাঝে যেন কোন লোভ কাজ না করে। আপনারা শুধু দোয়া করবেন বিজয় আমাদের নিশ্চিত।
সোমবার বিকেল ৪টায় বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন সুরুজ্জামান টাউয়ারের তৃতীয় তলায় রাত্রি কমিউনিটি সেন্টারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সাথে মত বিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। উক্ত মত বিনিময় সভায় মহাজোট সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে ছিলেন। সভা স্থলে এমপি সেলিম ওসমান পৌছানোর আগে কমিউনিটি সেন্টারটি কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এক পর্যায় কমিউনিটি সেন্টার ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলা পরিপূর্ণ হয়ে রাস্তা পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ভীড় জমে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আমার নির্বাচনের জন্য কাজ করবেন। প্রবাসেও প্রায় ১১ হাজার মানুষ রয়েছে। যারা আমাকে কথা দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারে কমপক্ষে ৫টি করে ভোট আছে। আপনারা প্রত্যেকে সর্বপ্রথম আপনাদের নিজেদের ঘরের ভোটটি নিশ্চিত করবেন। কারো মনে কষ্ট দিতে পারবেন না। নারায়ণগঞ্জে রেকর্ড সৃষ্টি করতে হবে। অতীতে আপনারা সিটি কর্পোরেশনের ২টি নির্বাচন দেখেছেন। সারা বাংলাদেশ আতংঙ্কিত ছিল নারায়ণগঞ্জে না জানি রক্তের বন্যা বইয়ে যাবে। আমার নির্বাচনের সময় কোন মিডিয়া চিন্তাও করতে পারে নাই কোন মারামারি মত ঘটনা ঘটবেনা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সময় সারা বাংলাদেশ চিন্তু করেছিল এখানে হট্টগোল হবে। কিন্তু কোন নির্বাচনেই এমন কিছু ঘটে নাই। আগামী ২৮ তারিখ আমি মনোনয়ন জমা দিবো। ঘোষণা যেহেতু দিয়েছি নির্বাচন আমি করবোই। নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাদের কোন মার্কা প্রয়োজন নাই, সেলিম ওসমানের মত একজন গোলাম প্রয়োজন। কোন এলাকায় গেলে এখন মানুষ বক্তব্য রাখেন তাদের জমিতে রাতের আধারে এখন আর কেউ সাইনবোর্ড লাগায় না। ব্যবসায়ীদের চাদাঁ দিতে হয়না। চেয়ারম্যানদের উন্নয়ন কাজ করতে গেলে কমিশন দিতে হয়না। এর থেকে বেশি চাওয়ার আর কি থাকতে পারে।
সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন করতে গিয়ে কেউ নিজের পরিবারকে কষ্ট দিবেন না। আগে পরিবার পরে সেলিম ওসামনের নির্বাচন। আর মনে রাখবেন রাজনীতি করা মানে কারো কাছে হাত পাতা নয়। ২০১৯ সালে থেকে প্রতিটি বাড়িতে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি যেই হোন না কেন নেতা বা কর্মী হতে গেলে প্রতিটি কর্মী নি¤œতম মাসে ২৫ হাজার টাকা করে আয় রোজগার করতে হবে। দেখবেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এই নারায়ণগঞ্জেই হবে। অতীতের ইতিহাস প্রাচ্যেরডান্ডি হবে আরো উন্নত। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে সরকারী ভাবে ২দশমিক ৬ শতাংশ মানুষকে হতদরিদ্র হিসেব করা হয়। আগামী ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে আমার নারায়ণগঞ্জের এই ২ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষকে আর হতদরিদ্র বলতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, আপনারা নির্বাচনের অনুমতি দিয়েছেন। আমাকে দুই পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে লাঙ্গলের কথা বলতে বলা হয়েছে। আমি আগেও বলেছি আমার মার্কা নৌকা, আমার মার্কা লাঙ্গল, আমার মার্কা ধানের শীষ, আমার মার্কা আনারস। নির্বাচিত হতেই হবে এমন কোন কথা নাই। নির্বাচন মানেই জয়-পরাজয়। আল্লাহ যদি অন্য কাউকে ক্ষমতা দেন তাহলে আমি তাকেও সহযোগীতা করবো, আপনারা তাকে সহযোগীতা করবেন। অতীতে নির্বাচনে আপনাদের প্রানপ্রিয় নেতা নাসিম ওসমান, আমার বাবা শামসুজ্জোহা, সাবেক এমপি কালাম সাহেব, আকরাম সাহেব সবাই নির্বাচন করেছেন। উনরাও জিতেছেন আবার হেরেছেন। জীবিত যারা ছিলেন আমি তাদের সবার কাছে গিয়েছি। পা হাত দিয়ে সালাম করে জানতে চেয়েছি উনাদের ভুলটা কোথায় ছিলো। কেন নারায়ণগঞ্জের মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। তখন উনারা কেউ কেউ বলেছেন কেউ কেউ কোন কথা বলেননি। এখন যখন নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন হচ্ছে তখন উনারা বলছেন নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন নাকি দেখা যায় না। একটা বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশন চোখে পড়ে না। আমাকে আরেকটা বার সুযোগ দেন ওই ফাউন্ডেশনে নারায়ণগঞ্জ কত উপরে উঠতে পারে তখন সেটা দেখা যাবে।
আপনারদের অনেকের অনেক কাজ আটকে আছে। কিন্তু কারো কোন কাজ আটকে থাকবেনা । কেউ বলতে পারবেনা কোন এলাকায় কোন রাস্তা কাচা আছে। কোন স্কুল টিনের ঘর আছে। আমি যতটুকু বরাদ্দ রেখে যাচ্ছি সেটা যা ভাগ্যেই থাকুক আপনাদের কাছে দায়িত্ব রইলো অন্য কেউ ক্ষমতায় এসে যাতে করে সেই টাকা আত্মসাৎ করতে না পারে।
তিনি দলীয় নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, শ্রমজীবী সংগঠনের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে একজন ব্যক্তির জন্য কাজ করতে হবে। সেই একজন ব্যক্তি হলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উনাকে যদি আবারো আগামী ৫ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী করতে পারি তাহলে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশকে আরো ২৫ বছর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আজকে থেকে আপনারা একেক জন নিজেরা সেলিম ওসমান হয়ে প্রত্যেকটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করবেন। তবে একটি বিষয় মনে রাখবেন। এটা নভেম্বর মাস। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছে। কোন অবস্থাতেই যেন পরীক্ষায় কোন প্রকার বিঘœ না ঘটে।
উক্ত মত বিনিময় সভাটি বন্দরে ক্যাবল টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। বক্তব্য শেষ করার পূর্বে এমপি সেলিম ওসমান টেলিভিশনের দর্শকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা টেলিভিশনে আমার বক্তব্য শুনছেন আমার মায়েরা বোনেরা। আমার লাখো নাতি নাতনি যারা আমাকে দাদু বলে সম্বোধন করো। তোমাদের কাছে অনুরোধ রইলো। তোমরা ভাল করে লেখাপড়ো করো। তোমরা তোমাদের স্কুল থেকে ভাল রেজাল্ট করো। আমি আর তোমাদের কি করতে পারবো। জানুয়ারি মাসে আমি তোমাদের প্রত্যেকটি স্কুলে যাবো। তোমাদেরকে মন ভরে দোয়া করবো আদর করবো। তোমাদের রেজাল্ট দিয়ে বাংলাদেশে রেকর্ড সৃষ্টি করতে হবে।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ রশিদ, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু, সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন, জেলা জাতীয় পার্র্টির যুগ্ম আহবায়ক আফজাল হোসেন, মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ, ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনায়েত হোসেন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েল আলম সানি, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা।