নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, সামনে পবিত্র রমজান মাস। রমজান মাসে যেন মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেজন্য আমরা সবসময় আলোচনা করে থাকি। আশা করি আগামী দিনগুলো আমাদের সুন্দরভাবে যাবে। কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো আমরা কানকথা বেশি শুনি, সমালোচনা বেশি করি। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন আমাদের অনেক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এই সহযোগিতা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে আমাদের অনেক আপনজন ফেঁসে যাচ্ছে। এতে করে আমাদেরকে অনেক সময় বিব্রতবোধ করি। আমরা রাজনীতি করি, আমাদের সবরকমের মানুষের সাথে চলতে হয়। আমরা যদি ভাল হয় তাহলে কোন মাদক থাকবে না কোন জঙ্গীবাদ থাকবে না। আমি যখন এলাকায় মিটিং করি তখন দলমত নির্বিশেষে সব ধরনের লোকজন থাকে।
মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি, জঙ্গীবাদ ও নাশকতা প্রতিরোধে জাতীয় ও জেলা ভিত্তিক ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
২৯ এপ্রিল সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশে বিএসবিএল কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সেলিম ওসমান বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখবো। এখানে ৪৮ টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত হয়েছেন। রমজান ও ঈদকে ঘিরে সকলের সমন্বয় করে একটি উন্নতমানের কমিটি গঠন করা হবে। এটা পুলিশের দায়িত্ব না। পুলিশের কাছে আমাদের দাবী থাকবে রমজান মাসে রাস্তাঘাট যেন ক্লিয়ার থাকে। আমরা যে কোন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। পুলিশ আমাদের বন্ধু। কিন্তু কোন চাঁদাবাজী হবে না। যদি কোন ব্যবসায়ী কাউকে চাঁদা দিয়ে থাকেন তাহলে তিনি আমাদের শত্রু। ঈদের আগে মালিক শ্রমিক একসাথে সিদ্ধান্ত নিবেন। কিছু হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করবেন। পুলিশ কাউকে ছাড় দিবে না। কেউ ভুলে যাবেন না এটা সাদা পতাকার নারায়ণগঞ্জ। এখানে কোন অশান্তি হয় না।
তিনি আরও বলেন, নিতাইগঞ্জে এখন দিনের বেলা ট্রাক চলাচল করে না। আর এটা বন্ধ করেছে পুলিশ। রমজানের সময় বাসগুলো ওয়ানওয়ে থাকবে। কোন অবস্থায় বাস ট্রাক রাস্তায় থাকবে না। আমরা পুলিশ বাহিনীকে সহযোগিতা করবো। আমরা একে অপরের ভাই। জনগন অশান্তিতে থাকলে কারও সাথে সম্পর্ক থাকবে না। আমরা কিন্তু আন্দোলন করতে জানি। ঝগড়া করলে অনেক কিছু হারাতে হয়। আমরা ভদ্রভাবে আছি যেন ভদ্রভাবে থাকতে পারি। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে যে পরিবেশ চলছে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় সেই পরিবেশ নেই। আবার নারায়ণগঞ্জে যে পরিমান গুজব রয়েছে তা অন্য কোথাও নাই। আগামী তিন দিনের মধ্যেই একটি স্পেশাল কমিটি হবে। কোন সমস্যা থাকলে পুলিশ প্রশাসনের সাথে বসে সেসকল সমস্যার সমাধান করা হবে। আমরা পুলিশকে সহযোগিতা করবো তবে টাকা দিয়ে নয়।
আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা এবং তা নিয়ে যাতে কোন প্রকার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে তিনি বলেন, গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান গুলো বিকেএমইএ পর্যবেক্ষন করবেন। এখানে ৪৮টি ব্যবসায়ী সংগঠন রয়েছে যার যার অবস্থান থেকে সেই সেই সেক্টর গুলো পর্যবেক্ষন করবেন যাতে বেতন ভাতা পরিশোধ নিয়ে কোন প্রকার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। আমাদের শ্রমিকেরা আছে বলেই আমরা মালিকেরা সভ্য পরিবেশে চলাফেরা করছি। আমরা শ্রমিকদের ১০০ ভাগ ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করবো। কিন্তু কোন অযৌক্তিক দাবী পূরণ করা সম্ভব নয়। আবার ঈদকে পুঁজি করে কোন কোন নেতা শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে থাকেন। কোন বহিরাগতদের কথা শ্রমিকরা আর শুনবেনা। কোন দাড়ি টুপি ওয়ালারা আর কোন গার্মেন্টেস বিশৃঙ্খলা করতে পারবে না। কোন রকম কোন সমস্যা হলে আপনারা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিবেন। যদি পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তখন আমরা সবাই মিলে জানতে চাইবো কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। কাউকে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবেনা।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায় এমপি সেলিম ওসমান উপস্থিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা বিষয়ে অভিযোগ থাকলে তা শুনতে চান এবং আসন্ন রমজান মাসে যাতে কোন প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের মূল্য বৃদ্ধি না পায় সে জন্য চাল আড়ৎদার সমিতির সভাপতি, তেল চিনি আড়ৎদার সমিতির সভাপতি, ভূষামাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিকে মঞ্চে ডেকে তুলে তাদের কাছ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান এবং তারা সকলেই আসন্ন রমজান মাসে চাল, চিনি, তেল, ছোলা, ভুট, এবং কাপড়ের মূল্য কোন অবস্থাতেই বৃদ্ধি পাবেনা বলে আশ্বস্ত করেন সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমান নিত্যপন্য বাজারে সরবরাহ রয়েছে বলে জানান।
যার প্রেক্ষিতে এমপি সেলিম ওসমান সকল ব্যবসায়ী সংগঠন গুলোকে নিজ দায়িত্বে প্রথম রমজান থেকে ঈদ পর্যন্ত তাদের পন্য কি দামে বিক্রি করা হবে সেই মূল্য তালিকা তৈরি করে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির কাছে জমা দেওয়ার অনুরোধ রাখেন। নারায়ণগঞ্জ চেম্বার সেই মূল্য তালিকা মোতাবেক ৪৮টি ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্বনয়ে গঠিত মনিটরিং কমিটি বাজার পর্যবেক্ষন করবে। পাশাপাশি তিনি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলকে চেম্বার কার্যালয়ে একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপন করার জন্য অনুরোধের সাথে নির্দেশ প্রদান করেন। যাতে করে ব্যবসায়ীরা তাদের সমস্যা এবং অভিযোগের কথা গুলো পরিচয় গোপন রেখে নির্ধিদায় বলতে পারেন। এতে করে ভবিষ্যতে তরুন উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সুন্দর ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
পাশাপাশি খাবার লবনের সাথে যেসকল অসাধু ব্যবসায়ীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবন মিশ্রিত করে প্যাকেট জাত করে বাজারে বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারাই এমন কাজ করে থাকুক না কেন যদি ধরা পড়ে তাহলে ওই ব্যবসায়ী শুধু নারায়ণগঞ্জেই নয় বাংলাদেশের কোথাও আর ব্যবসা করতে পারবে না।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলের সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম রেজা, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, বিকেএমইএর পর প্রথম সহ সভাপতি মনসুর আহমেদ, ইয়ান মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সোলায়মান ও হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।